ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার জেরে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে টানেলের ভিতরে আটকে পড়েছেন হুগলির আরামবাগের পুরশুড়ার দুই যুবক। তাঁরা হলেন সৌভিক পাখিরা ও জয়দেব পরামানিক। সৌভিকের বাড়ি পুরশুড়া থানার হরিণাখালি গ্রামে। আর জয়দেব নিমডাঙির বাসিন্দা। নয় দিন ধরে তাঁরা আটকে থাকায় পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন।
সৌভিকের মা লক্ষ্মী পাখিরা বলেন, 'গত ১১ নভেম্বর রাতে সৌভিকের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল। তারপর থেকে আর কোনও যোগাযোগ করা যায়নি। টানেলে আটকে আছে। অক্সিজেন ও খাবার পাচ্ছে। ওখানে থাকা লোকেদের সঙ্গে ওয়াকিটকির মাধ্যমে ওদের কথাবার্তা হয়েছে বলেই জানতে পেরেছি।'
জয়দেবের পরিবারের লোকজনের বক্তব্য, জয়দেবের কোম্পানির কর্তাদের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন। তবে, জয়দেবের খোঁজ মেলেনি। সুস্থ আছে বলে জানতে পেরেছেন। দিল্লি থেকে নতুন মেশিন নিয়ে এসে বসানো হয়েছে, যাতে খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়। চিন্তা আর গভীর উৎকন্ঠায় জয়দেবের মা তপতী পরামানিক কার্যত বাকশক্তি হারিয়েছেন। তাঁর চোখ দিয়ে কেবল জল গড়াচ্ছে। কোনও কথা বলতে পারছেন না।
জয়দেবের বাবা তাপস পরামানিকেরও প্রায় একই অবস্থা। যেন স্থবির। বারবার, তাঁদের কাছে যেতে বারণ করেছেন পরিবারের লোকজন। পরিবারের সদস্যদের আরজি, সকলের সঙ্গে তাঁদের ছেলেকেও যেন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের প্রশ্ন, 'এত দিন হয়ে গেল। কী করছে সরকার? কেন এখনও উদ্ধার হল না?'
বাড়ির অন্যান্য আত্মীয়-পরিজনেরাও উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। জয়দেবের দাদুরও চোখে জল। কবে নাতিকে দেখতে পাবেন, সেই চিন্তায় এখন তিনি দিন কাটাচ্ছেন। বাড়ির ছেলেকে নিয়ে উৎকন্ঠায় এখন পরামানিক বাড়িতে নাওয়া, খাওয়া, কাজকর্ম সব বন্ধ।
আরও পড়ুন- বিরাট আয়োজন! মঙ্গল থেকেই রাজ্যে বাণিজ্য সম্মেলন, আসছেন কারা?
জয়দেবের বাবা ছোট ব্যবসায়ী। টানেলে ছেলের আটকে থাকার খবর পাওয়ার পর থেকে দোকান খুলতে যাননি। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। বাড়ির ছেলের আটকে থাকার খবর পাওয়ার পর থেকে এখন পরিবারের উনুনে হাঁড়ি চড়া বন্ধের উপক্রম। বাধ্য হয়েই ছেলেকে ভিনরাজ্যে কাজে পাঠিয়েছেন। কিন্তু, এখন আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? ছেলে সুস্থ, সবলভাবে বাড়ি ফিরতে পারবে কি না, সেই সব ভেবেই পরামানিক পরিবারের সকলের এখন চোখে জল নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে।