রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে এক দম্পতির হাতে গণপিটুনি খাচ্ছেন এলাকার কংগ্রেস নেতা। আর সেই মারধর ভিড় করে দেখছেন সাধারণ মানুষ। এমনই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়লবাজার এলাকায়।
মারধরকারী দম্পতির অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে মিনি পাম্প সেট পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কাটমানি নিয়েছেন স্থানীয় ওই কংগ্রেস নেতা মহম্মদ রাকিব। কিন্তু, টাকা নিয়েই এলাকা থেকে লুকিয়ে পড়েন অভিযুক্ত। রবিবার সাত সকালে তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলতেই মারধর শুরু হয়। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে আক্রান্ত ওই কংগ্রেস নেতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে তুলসীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়লবাজার এলাকায় কংগ্রেসের পথসভা চলছিল। সেখানেই ওই কংগ্রেস নেতা মহম্মদ রাকিবকে দেখতে পান প্রতারিত দম্পতি সাইনুল হক ও তাঁর স্ত্রী সেমো বিবি। তখনই তাঁরা গিয়ে চড়াও হন এবং মহম্মদ রাকিবকে মারধর করেন।
ওই দম্পতির অভিযোগ , মহম্মদ রাকিব তিন বছর আগে সরকারি মিনি পাম্প সেট পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁদের থেকে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছিল। চায়ের দোকানি সাইনুল হক নিজেদের পাঁচ কাঠা জমি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েছিল মহম্মদ রাকিবকে। কিন্তু, তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও তাঁরা মিনি পাম্প সেট পায়নি। টাকা ফেরত চাইতে গেলেও তাঁদেরকে বারবার ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়। কিছুতেই তাঁরা দেখা পাচ্ছিলেন না মহম্মদ রাকিবের। তাই বড়লবাজারে কংগ্রেসের পথ সভায় রাকিবের উপস্থিতির কথা জানতে পেরেই সেখানে ছুটে যান। সাথে যান ডাঙ্গিলা গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দারাও। সেখানেই গণধোলাই দেওয়া হয় মহম্মদ রাকিবকে। ধাক্কাধাক্কিতে আহত হন সাইনুল হক নিজেও।
আরও পড়ুন- কী কী ‘উপহার’ তাঁকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী? বই আকারে প্রকাশ করবেন শুভেন্দু
এদিকে ঘটনায় নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদ রাকিব ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেস দলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। ব্লক কংগ্রেস নেতৃত্ব বিষয়টি জানেন না-বলেও এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
এদিকে এই ঘটনায় কংগ্রেসকে কার্যত তুলাধনা করেছে তৃণমূল। তুঙ্গে উঠেছে চাপানউতোর। পথসভা চলাকালীন দলেরই এক স্থানীয় নেতা সাধারণ বাসিন্দারা মারধর করছেন টাকা নিয়ে প্রতারণার জন্য। এই ঘটনায় যথারীতি অস্বস্তিতে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব।
অভিযোগকারী সাইনুল হকের স্ত্রী সেমো বিবি বলেন, 'কংগ্রেসের নেতা মহম্মদ রাকিব আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। কিন্তু, যে জন্য নিয়েছিল সেই কাজ হয়নি। টাকা ফেরত দিচ্ছিল না। সেই জন্য আমরা গিয়ে ধরেছি। আমার সঙ্গে গ্রামের কিছু মানুষ ছিলেন। তাঁরাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নেতাকে মারধর করেছে।'
হরিচন্দ্রপুর ১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি বিমানবিহারী বসাক বলেন, 'এই ঘটনাটা আমি বিস্তারিত জানি না। কাজেই না-জেনে মন্তব্য করব না। তবে আইন কারও নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। কেউ কোনও দোষ করলে, তার জন্য পুলিশ ও প্রশাসন রয়েছে।'
মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান বলেন, 'একসময় কংগ্রেস যখন বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় ছিল, তখন লাগামছাড়া দুর্নীতি হত। কংগ্রেসের নেতাদের তাই সেই অভ্যাসটা যায়নি। যাঁরা ক্ষমতায় না-থাকার পরেও দুর্নীতি করে, তাঁরা ক্ষমতায় আসলে কী করবে মানুষ ভালোই বুঝতে পারছে।'