কাজে মনই বসছে না বছর উনচল্লিশের শেখ অউলাদ আলির। মনে পড়ছে পাঞ্জাবের সেই গ্রামের কথা, কাজের জায়গা, বন্ধুবান্ধব। কিন্তু এখনই উপায় নেই নিজভূম ছেড়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার। লকডাউন হওয়ার পর শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে চড়ে বর্ধমানের জামালপুর গ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হয় অউলাদ। আনলক পর্যায় চললেও বন্ধ ট্রেন। আর ফিরে যাওয়া হয়নি সোনার কাজ শ্রমিকের।
কর্মক্ষেত্র ছিল পাঞ্জাবে। শেখ অউলাদ আলি সোনার দোকানে কাজ করা শ্রমিক। দক্ষতাও ছিল যথেষ্ট। মাসিক রোজগার ছিল ১৯ হাজার টাকার মতো। লকডাউনে সব বন্ধ। বাংলায় ফিরে এসে প্রথমে ১৪ দিনের লকডাউনে ছিলেন। তারপর জীবনযাপন, পরিবারের দায়িত্ব সামলাবেন কীভাবে সেই ভেবেই বেশ কিছুদিন সময় পার করেছিলেন। কিন্তু শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনই একমাত্র পথ একথা জানেন অউলাদ। তিনি ১০০ দিনের কাজেই ভরসা রাখলেন। এখন দিনে সর্বসাকুল্যে পান ২০৪ টাকা। কাজ বলতে রাস্তার পাশ থেকে মাটি সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র ফেলতে হয় তাঁকে। অর্থের কমতি, অপছন্দ কাজই বিষন্নতার মুখে ঠেলে দেয় তাঁকে।
আরও পড়ুন, “অর্থমন্ত্রী নির্মলা বিষাক্ত সাপ”, কল্যাণের নামে এফআইআর দায়ের করবে বিজেপি
পাঞ্জাব ফেরত অউলাদ দক্ষ শ্রমিক। নিপুণ হাতে সোনার অলঙ্কারে নকশা তৈরি করেছেন তিনি। তাই লকডাউন বাংলায় কাজ পেতে অসুবিধা হয়নি।কিন্তু সোনার কাটা হাতে মাটি কাটা মানাচ্ছে না আজ। আসলে এমন অনেক পরিযায়ী শ্রমিকেরা আছেন যারা এখনও রাজ্যে ফিরেও বেকার। এক রাতে যেন বদলে গিয়েছে জীবন। কাজের ক্ষেত্রে 'দর'ও কমেছে অনেকটাই। তবে সকল পরিযায়ীরাই চাইছে তাঁদের কর্মক্ষেত্রেই ফিরে যেতে। বেশ কিছু জন বেসরকারি চিকিৎসকদের দিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন তাঁদের 'হেলথ সার্টিফিকেট'ও।
সব কিছুর মধ্যে থেকেও ভাল নেই অউলাদের। তিনি বলেন, "আমি সোনার মধ্যে সুক্ষ সুক্ষ কারুকাজ তৈরি করতাম। ১৮ বছর ধরে সেই কাজই করে এসেছি। তিন বছর পাঞ্জাবেই আছি। আর এখন সেই আমিই মাটি কেটে সংসার চালাচ্ছি। আমার হাতে এই কাজ মানায় না। কিন্তু আমার এখন আর কোনও উপায় নেই।" কিন্তু দিনের শেষে এখনও অপেক্ষা করে থাকেন সেই ফোনের জন্য। কখন পাঞ্জাব থেকে তাঁর ম্যানেজার ফোন করে বলবেন, 'চলে আসো অউলাদ।'
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন