করোনার শঙ্কা ছাপিয়ে বড়দিনকে জিতিয়ে দিল জনতার আবেগ। বাঁধভাঙা উল্লাস নয়। মহানগরীর ২৫ ডিসেম্বরের রাত বরাবর যেন মোমবাতির মিছিল। পথ যতই ভিড়ে ভিড়াক্কার থাকুক, সারি দিয়ে হেঁটে যেতে কষ্ট হয় না বাঙালির।

বছরের শেষ ক’টা দিনে যে জনজোয়ার ওঠে পার্ক স্ট্রিটে, ২৫ তার প্রথম রাত। বিশ্বের নানা জায়গা থেকে করোনা বৃদ্ধির খবর আসছে। প্রতিবেশী চিনে সংক্রমণ বাড়ছে। এসব শুনে কলকাতা এখন ক্লান্ত। এই শহর আনন্দ ভালোবাসে। আবেগ ভালোবাসে। সংস্কৃতির জোয়ারে ভাসতে চায়। ২৫ ডিসেম্বর সেই তৃপ্তি বছরের পর বছর শহর কলকাতাকে দিয়েছে। মধ্যে দু’বছর লকডাউনের রক্তচক্ষু আনন্দটুকু শুষে নিয়েছিল।

এবার আর তাই সংক্রমণের হাজারো খবরেও আনন্দের রেশটুকু হারাতে চায়নি তিলোত্তমা। অনেক হয়েছে, ভঙ্গীতে পথে নেমেছিল জনতা। হাতে হাত দিয়ে সেই সকাল থেকে ঘুরে বেড়িয়েছে ভিক্টোরিয়া থেকে তারামণ্ডল, শহরের আনাচ-কানাচ। সেখানেও শুনতে হয়েছে মাইকে করোনার সতর্কবাণী।
আরও পড়ুন- উৎসবের আবহে তৃণমূলে ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’, তাপসকে কেক খাওয়ালেন সুদীপ!
তবুও আনন্দটুকু মিইয়ে যায়নি। সান্তাটুপি, ফুঁ দিয়ে বাবল তৈরি, চিড়িয়াখানার বাবু-বাবিদের রকম-সকম সব প্রাণভরে দেখতে চেয়েছে। ওই সাধ্যে যতটুকু কুলোয় আর কী!

আর, রাত বাড়তেই গুটি গুটি পায়ে ভিড় জমিয়েছে শহর কলকাতার বেথলেহেম পার্ক স্ট্রিটে। বাঙালির কাছে আজও তা সাহেবপাড়া। একটুকরো বিদেশের শ্বাস এই শহরের বুকেই নেওয়া লক্ষ্য। দিতে পারে পার্ক স্ট্রিট, আর তার সংলগ্ন অঞ্চল। বাঙালি বরাবর তা শিখে এসেছে, জানে। ডিসেম্বরের ২৫-এর রাতে বাঙালি তাই কোনওকালেই পার্ক স্ট্রিটকে মিস করতে চায় না।

উৎসবপ্রিয়, শহরের নানা প্রান্ত আর শহর ছাপিয়ে শহরতলি থেকে ছুটে আসা মানুষগুলোর কাছে শারদীয়ার পর এত আলোকসজ্জা ২৫-ই দেয়। বিদেশ, বিশ্বের বাকি দেশের আনন্দের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ দেয় বছরের এই শেষ কটা রাত। সেসব দেখেই উৎসবের ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রী আগে বাজিয়েছেন। তবে ২৫-এর স্বাদ যেন বাঙালির কাছে দুর্গাপুজোর অষ্টমী। যে স্বাদের কোনও ভাগ হয় না। রাত বাড়তেই শহর তাই হল পার্কস্ট্রিটমুখো।