এবার কাটমানি নিয়ে নয়া 'উদ্যোগ' নিল বর্ধমান জেলার বিজেপি বুথ কমিটি। এ ক্ষেত্রে প্রধান উদ্যোক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বর্ধমান জেলার চানক গ্রামের বুথ কমিটির প্রধান সুব্রত মন্ডল। তিনি এখন কাটমানি নিয়ে একগুচ্ছ 'ঘোষণা পত্র' জড়ো করেছেন। প্রতিটি ফর্মে আছে সরকারি প্রকল্পের গ্রহীতার নাম, ঠিকানা এবং প্রদেয় কাটমানির পরিমাণ। সুব্রত মন্ডলের বক্তব্য, "আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ফর্ম ছেপেছি। তার মধ্যে বাড়ি তৈরি এবং নিকাশী প্রকল্পের ফর্মের সংখ্যাই বেশি। এখনও পর্যন্ত ১৮০ জন এই ঘোষণাপত্র পূরণ করেছেন। আমরা এই ফর্মগুলোর সঙ্গে কাটমানির অভিযোগপত্র একযোগে পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে পাঠাবো। আমরা মানুষের পাশেই আছি"।
আরও পড়ুন, ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় পাঁচ তৃণমূল কর্মীকে মারের অভিযোগ
উল্লেখ্য, ১৮ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার দলের কর্মীদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে নেওয়া কাটমানি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলার বিভিন্ন জেলা। রাজ্যের একাধিক এলাকায় তৃণমূলের নেতা, জনপ্রতিনিধিদের ঘিরে চলে বিক্ষোভ, রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় একাধিক এলাকা। তৃণমূল সুপ্রিমোর এই বক্তব্যর পরেই তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বিজেপির দিকে নিশানা করে বলেন, "বিজেপিই বাংলায় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে"। যদিও রাজ্যে বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, "তৃণমূলের জন প্রতিনিধিদের ঘেরাও করে সুদ সমেত কাটমানি ফেরত চাওয়া হোক"।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকে হুগলি, বর্ধমান এবং বীরভূম সহ ১২টি গ্রামে গিয়ে কাটমানি ইস্যু নিয়ে গ্রামবাসীদের যে ক্ষোভ তা বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এসব জায়গায় গিয়ে দেখা যাচ্ছে, কাটমানি নিয়ে বিপাকে পড়া তৃণমূল নেতারা যখন এলাকা ছেড়ে পালাতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই জনতা তাদের পিছু ধাওয়া করছে। আর জনতার এই সংগঠিত প্রতিরোধের পিছনে যে বিজেপির ভূমিকা আছে, সেই আঁচও মিলছে সহজেই। বর্ধমানের বুথ কমিটির প্রধান সুব্রত মন্ডল বলেন, "আমরা কাটমানি ফেরত দেওয়ার জন্য মানুষের যে লড়াই তার পাশে আছি। আমরা চাইছি, এই আন্দোলনটিকে সুসংগঠিত করতে"। শুধুমাত্র বর্ধমানেই নয়, হুগলির বৈঁচিতেও বিজেপির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল, অভিযোগপত্র জমা দেওয়া, তৃণমূলের প্রতিনিধিদের বাড়ি ঘেরাও-এর মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। হুগলির বিজেপির জেলা সভাপতি স্মরণিকা মন্ডল বলেন, " আমরা ৩২ জনের নাম নথিভুক্ত করেছি, যাঁরা উজ্জ্বলা প্রকল্পে এলপিজি গ্যাস কানেকশন নেওয়ার জন্য তৃণমূলের নেতাদের কাটমানি দিয়েছেন। আমরা গ্রামবাসীদের স্বাক্ষর নিয়ে কাটমানির ইস্যুতে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি"। যদিও স্থানীয়দের বক্তব্য, হুগলির দুই তৃণমূল নেতা সুভাষ বিশ্বাস এবং শিখা মজুমদার প্রত্যেকের থেকে ৫০০টাকা করে কাটমানি নেন এবং বর্তমান পরিস্থিতির আঁচ টের পেতেই তাঁরা এলাকা থেকে পালিয়ে যান। যদিও স্মরণিকা মন্ডল বলেন, "শীঘ্রই এই দুই তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘেরাও করা হবে। আমাদের টাকা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে"।
আরও পড়ুন, ‘টুকলি করিনি’, দাবি তৃণমূল সাংসদ মহুয়ার
উল্লেখ্য, কংগ্রেস ও বামেরা এই লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে কোনও প্রভাব ফেলতে না পারলেও বিধানসভায় এই কাটমানি ইস্যু নিয়ে সরব হয়ে ওয়াক আউট করেছে। এমনকি এবিভিপি, এসএফআইয়ের তরফেও কাটমানি নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করে কলেজে কলেজে। এই ঘটনার পরই তৃণমূলও পাল্টা মিছিল বের করে জেলায় জেলায় তাঁদের ভাবমূর্তি রক্ষা করার চেষ্টা করে। হুগলির তৃণমূলের জেলা প্রধান প্রবীর ঘোষাল বলেন, " এটা বিজেপি চক্রান্ত করছে আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে। ২১শে জুলাই আমরা এই নিয়ে কথা বলব। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে জনসংযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছি"। প্রসঙ্গত, ১০ জুন শাসকদলের পক্ষ থেকে একটি স্পেশাল সেল গঠন করা হয়েছে এবং একটি টোল-ফ্রি নম্বর, ইমেল আইডিও খোলা হয়েছে। অন্যদিকে, ২৫ জুন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যের ডায়রেক্টরেট অফ ইকনমিক অফেন্স-এর ডিরেক্টর পদে আইপিএস তন্ময় রায় চৌধুরিকে নিয়োগ করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক পুলিশ আধিকারিক জানান, " সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কোনও সরকারি কর্মী, জন প্রতিনিধিরা কাটমানি নিয়েছেন, এমন অভিযোগ আসলে অবিলম্বে তাঁদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা অনুযায়ী মামলা রুজু করা হবে"
Read the full story in English