রাত পোহালেই ভালবাসার দিন! সময়ের কাঁটা যত গড়াচ্ছে, প্রেমের ধুকপুকুনি ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রেমিকপ্রবরদের মনে। তবে হৃদস্পন্দন বাড়ার কারণ কেবলই আবেগ-অনুভূতির জন্য নয়। বাজারও কিছুটা দায়ী বইকি! ভালবাসার দিনে নিজের প্রিয়জনকে দিতেই হবে একটা গোলাপ। নাহলে যেন দিনটাই অসম্পূর্ণ। কিন্তু প্রেমিক মনে জ্বর ধরাচ্ছে গোলাপের দাম।
বিশেষ এই দিনটিতে প্রেমিক মনের থাকে সকাল থেকে হাজারো প্ল্যানিং। করোনা দাপট কিছুটা কমেছে। সকাল থেকেই নিজের প্রিয়জনের সঙ্গে প্রিন্সেপ ঘাট অথবা ইকোপার্কে ঘোরা, সিনেমা দেখা! একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া মনের কথা বলা। একান্তে কোথাও একটু সময় কাটানো। বিশেষ এই ভালোবাসার দিনের প্ল্যানিং অনেক আগে থেকে সেরে রাখেন প্রেমিক-প্রেমিকারা। সব প্ল্যানিংয়ের মাঝেও একটা গোলাপ না হলে কী হয়? লাল গোলাপ দিয়ে নিজর প্রিয়জনকে ভালবাসার কথা মুখ ফুটে বলা যেন ভালবাসার দিনে পৌঁছে দেয় সব পাওয়ার দেশে।
রোজ ডে থেকে শুরু হয়েছে, এরপর পর্যায়ক্রমে চলবে বিশেষ দিনের উদযাপন। নিত্যদিন এড়িয়ে গেলেও অন্তত প্রেম দিবসে প্রেমিকার হাতে ভালোবাসার গোলাপ না দিলে হয়! বিশেষ করে লাল গোলাপ। কারণ, লাল গোলাপই যে ভালবাসার প্রতীক। কিন্তু সেই গোলাপেই এবার দামের কাঁটা একটু বেশি।
এমনিতেই বিয়ের সিজনে গোলাপের মালা এখন বেশি ট্রেন্ডি। তাই গোলাপের দামও কিছুটা চড়া। আর করোনা কালীন মন্দার বাজারে ভালবাসার এই বিশেষ দিনে ফুল বিক্রেতারা যে এই দিনের ‘ফুল ফায়দা’ তুলতে ব্যস্ত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হিমঘরের হোক কিংবা সরাসরি চাষের খেত থেকে তুলে আনা গোলাপ দামের বাছবিচারে কেউ কম যান না।
কেন এত দাম কী বলছেন ফুল ব্যবসায়ীরা? মল্লিকঘাট ফুলবাজারে দেশি গোলাপ ২০ টাকা ও ডাচ গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা পিস দরে। যা খুচরো বাজারে এসে দ্বিগুণ দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। ভ্যালেন্টাইন ডে-তে তা আরও বাড়বে বলেই জানাচ্ছেন ফুল বিক্রেতারা। এই গোলাপ পাইকারি বাজারে ক’দিন আগেও ছিল এক-দু’টাকা আর ডাচ গোলাপ পাঁচ টাকা পিস। কিন্তু এক ধাক্কায় দামের কাঁটা অনেকটাই বাড়িয়েছে সে। তাই ভালোবাসার দিনে বান্ধবী বা বয়ফ্রেন্ডকে কেউ যদি গোলাপের বুকে দিতে চান তবে অন্তত হাজার দুয়েক টাকা খসবেই আপনার। এবারের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ গোলাপের যোগান অনেক কম অন্যান্য বছরের তুলনায়। যদি নিজের ভালোবাসার গোলাপকে টাটকা রাখতে চান তাহলে আপনাকে কিনতেই হবে ডাচ গোলাপ। যার ডাটাটাই হয় ৩৫ সেন্টিমিটার লম্বা। আসে বেঙ্গালুরু থেকে। এই গোলাপের দাম একটু বেশি। ১৪ ফেব্রুয়ারি তার দাম ৮০-১০০টাকা পিস হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর যদি নিজের প্রিয়জনকে এক বান্ডিল গোলাপ দিতে চান তাহলে আপনার পকেটেও গোলাপের কাঁটা ফুটতে বাধ্য।
মধ্যমগ্রাম থেকে পার্কস্ট্রিট ম্যানেজমেন্ট পড়তে আসেন কিঙ্কর দে! পার্কস্ট্রিটের রাস্তার পাশেই হরেক রকমের গোলাপের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন। খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন নিজের পছন্দের মানুষের জন্য কোন গোলাপটি দিলে ভালবাসার বন্ধন আরও মজভুত হবে! কথা বলে জানা গেল নিজের পছন্দের মানুষকে ভালবাসার দিনে দিতে চান একটা গোলাপ, সঙ্গে অবশ্য’ই পছন্দের ক্যাডবেরি। গোলাপের দাম শুনে কিছুটা ভিরমি খেয়ে গেলেন তিনি। খেত থেকে সরাসরি আনা বিপুলাকার এক একটি গোলাপের দাম ছাড়িয়েছে ১২০ টাকা। হিম ঘরের গোলাপের দাম আগামীকাল কিছুটা কম হলেও তা কিনতে গেলে খসাতেই হবে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।
‘দামের তোয়াক্কা না করেই গোলাপ কেনাটা আসলে এই দিনের সেন্টিমেন্ট,’’ বলছেন চন্দননগরের বাসিন্দা অভীক পাল। তাঁর কথায়, ‘একটা দিন নিজের পছন্দের মানুষের হাতে একটা গোলাপ তুলে দেব, দাম দেখলে হবে না’। তবে সাধারণ মধ্যবিত্ত প্রেমিক প্রেমিকার যে আগামীকাল নিজের প্রিয়জনকে গোলাপ দিতে পকেটে কাঁটা ফুটবেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে হালকা শীতে ভালবাসার দিনে গোলাপ হাতে ঝোড়ো ইনিংস খেলতে মরিয়া প্রেমিক যুগল’রা।