এমন উদ্ভাবন চমকে দিতে বাধ্য। পোস্ত’র দানা দিয়ে তৈরি সব থেকে ছোট গাড়ি, তাক লাগানো প্রতিভায় সেরার সেরা স্বীকৃতি অনির্বাণের। ছোট থেকে আঁকার প্রতি এক অদম্য নেশা। মাত্র আড়াই বছর বয়স থেকে মা’র কাছেই আঁকার হাতেখড়ি। তারপর থেকে আর সেভাবে আঁকা হয়নি তমলুকের এই তরুণ তুর্কির। কিন্তু সব সময়ই যেন ছবি আঁকার ইচ্ছা অনির্বাণকে তাড়া করে বেড়াত। বয়স একটু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের চেষ্টায় ও বিভিন্ন আঁকার বই দেখেই আঁকা রপ্ত করতে তিনি। বরাবরই ছেলেকে আঁকার বিষয়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন মা মৌসুমি মিশ্র।
উচ্চমাধ্যমিক এর পর আর্ট কলেজে ভর্তি। বিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেও নিজের প্যাশনকে নিয়েই এগোতে চেয়েছিলেন অনির্বাণ। তাতে অবশ্য পরিবারের সায় ছিল। পরীক্ষা দিয়ে পড়ার সুযোগও হয় ‘The Indian College of Arts and Drafsmanship’ কলেজের painting বিভাগ এ। এই সুযোগ’ই অনির্বাণের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। শিল্পী হওয়ার ইচ্ছাটা যেন আরও প্রবল হয়ে ওঠে তার। নতুন কিছু সৃষ্টির নেশা সব সময়ই তাড়া করে বেড়াত অনির্বাণকে। পোস্ত’র দানা ও কাঠ দিয়ে তৈরি সব থেকে ছোট গাড়ি বানিয়ে ইতিমধ্যেই অনির্বাণ ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে নাম নথিভুক্ত করে।
নিজের এই কৃতিত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনির্বাণ জানান, “পড়াশুনো করতে করতেই উপলব্ধি করলাম শিল্পের গভীরতা। ছোট থেকেই আমার বিভিন্ন গাড়ির প্রতি এক অদ্ভুত ভালোলাগা, সব থেকে প্রিয় গাড়ি BMW। তাই শুরু করলাম বিভিন্ন গাড়ির মডেল বানানো মাউন্ট বোর্ড দিয়ে। শুধু গাড়ি নয় বানাতাম মোটরসাইকেল, জাহাজের মডেলও। আমি ভাবলাম কীভাবে ক্রমশ গাড়ির ছোটো মডেল বানানো যায়। সেই চিন্তা থেকেই ২০২০ সালে প্রথমে বানালাম একটি ৮ ইঞ্চির গাড়ির মডেল। তারপর বানালাম ২ ইঞ্চির এর গাড়ির মডেল। এরপর ৬ সেমি। তারপর ভাবলাম আরও ছোট গাড়ির মডেল কীভাবে বানানো যায়। তাই অনেক চেষ্টায় বানিয়ে ফেলি ৬ মিমি এর গাড়ির মডেল। এর পর ভাবলাম এই মডেল টি নিয়ে India Book of Record এর আবেদন করি। কিছুদিন পর আমার কাছে মেইল আসে যে আমার সেই কাজ স্বীকৃতি পেয়েছে”।
কেমন ছিল সেই মুহূর্তের উপলব্ধি? এই প্রশ্নে শিল্পী বলেন, “সেই দিনটি ছিল আমার কাছে খুবই আনন্দের। বাড়ির সবাই খুবই খুশি হয়েছিলেন, পাড়ার আশেপাশের সবাই আমার এই কীর্তিতে খুশি। ফেসবুক থেকে ফোন আসতে থাকে শুভেচ্ছা। জেলার অনেক মানুষও এই খবর জানতে পেরে আমায় ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এই বিষয়টি ছিল আমার কাছে স্বপ্ন পূরণের এক সূচনা অধ্যায়”।
দেশ বিদেশে প্রায় ৪০টির বেশি এক্সিবিশনে অংশ নিয়েছেন তিনি। ঝুলিতে এসেছে দেশি ও বিদেশি একঝাঁক পুরস্কার। তবে Indian book of records-এ নাম তোলায় আমি বেশ গর্বিত জানিয়েছেন শিল্পী নিজেই। ছেলের এই সাফল্যে বেজায় খুশি বাবা নবকুমার মিশ্র ও মা মৌসুমি মিশ্র।