The reformer-politician Buddhadeb Bhattacharjee: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন 'সংস্কারবাদী' বামপন্থীদের মুখ। যিনি টাটাদেরকে 'বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি' কারখানা তৈরি করার সুযোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে শিল্পায়নের যুগে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। লেখক-রাজনীতিবিদ এই ব্যাপারে নিজের দলের সঙ্গ পাননি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত প্রায় নিঃসঙ্গ হয়ে যান। অবশেষে দীর্ঘ অসুস্থতার পর বৃহস্পতিবার কলকাতায় তাঁর বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০০ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জাতীয় রাজনীতির পাদপদ্মে এসেছিলেন। এসেছিলেন, তাঁকে কিংবদন্তি জ্যোতি বসুর উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে জ্যোতি বসু ছিলেন ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের মুখ্যমন্ত্রী।
বেসরকারি শিল্পায়নে ছিল বিরাট আগ্রহ
ক্ষমতাসীন সিপিআই (এম)-এর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪টি আসনের মধ্যে ১৯৯টিতে জয়লাভ করেছিল। ২০০৬ সালের নির্বাচনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়ে সেই জয়ের মার্জিনটা তারা আরও বাড়িয়ে নেয়। বামেদের জয়ের মার্জিনটা বেড়ে হয় ২৩৫। তাঁর জমানায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একটি শিল্পায়ন নীতি চালু করেছিলেন। সেই নীতিতে বাম সরকার আইটি এবং আইটিইএস (তথ্য প্রযুক্তি সক্ষম পরিষেবা) সেক্টরে বিশাল বিনিয়োগ টেনেছিল। শালবনিতে দেশের বৃহত্তম স্টিল প্ল্যান্ট, নয়াচরে একটি রাসায়নিক হাব, নন্দীগ্রামে একটি এসইজেড নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। সিঙ্গুরে ন্যানো প্লান্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে সরকার
কিন্তু, জোট শরিকদের একাংশ এবং তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতার মুখোমুখি হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০৬ সালে টাটা মোটরসের ন্যানো কারখানা নির্মাণের জন্য হুগলির সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে, ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে এসইজেড (SEZ)-এর জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে কৃষকদের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়ে প্রশাসন। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ, নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। এর, একবছর পরে টাটারা ন্যানো প্ল্যান্ট গুজরাটে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। যা কার্যত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের মৃত্যু ডেকে আনে। এই পরিস্থিতিতে, সরকার নন্দীগ্রামে এসইজেড চালু করতেও ব্যর্থ হয়।
সরকারি শিল্পস্থাপন করতে চাইতেন না
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসনের অবসান ঘটায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁর নিজের আসন যাদবপুর থেকে তৃণমূলের মণীশ গুপ্তর কাছে হেরে যান। বামপন্থীদের এই পরাজয়ের জন্য অনেকেই সহজ বলির পাঁঠা করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। তারপর থেকে গত ১৩ বছর ধরে সিপিএম (CPI-M) ক্ষমতায় ফেরার জন্য সংগ্রাম করেছে। তারমধ্যেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২০১৩ সালে এক টিভি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, 'বাংলায় যদি শিল্প না থাকে, যে মেয়েরা এবং ছেলেরা এখন কলেজে পড়ছে, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ছে, তাদের ভবিষ্যতের কী হবে? এটা সিপিএম বা তৃণমূলের বিষয় নয়।' যদিও এই শিল্পায়নমুখী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই বরাবর সরকারি শিল্প স্থাপনকে এড়িয়ে গিয়েছেন। যে শিল্পস্থাপনে জোর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে উন্নয়নের মুখ দেখিয়েছিলেন ডা. বিধানচন্দ্র রায়। সেইরকম সরকারি শিল্পস্থাপন বামেদের একাংশ চাইলেও, তা নিয়ে অজানা কারণেই বিরাট আপত্তি ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। যার জেরে তাঁর প্রতি ক্ষুদ্ধ ছিলেন সিপিএম তথা বামেদের একাংশও।