কিছুদিন আগেই বর্ধমান শহরে চলা হেরোইনের আন্তঃরাজ্য কারবারের পর্দা ফাঁস করেছিল স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। এবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে অভিযান চালিয়ে আন্তঃরাজ্য গাঁজা পাচার চক্রের পর্দা ফাঁস করল এসটিএফ।
রবিবার ভোরে পূর্বস্থলীর শিবতলা এলাকায় অতর্কিতে অভিযান চালায় এসটিএফ। উদ্ধার ট্রাক-ভর্তি গাঁজা। গ্রেফতার গাঁজা কারবারের মূল পাণ্ডা-সহ ৫। অবৈধ এই কারবারের জাল কতদূর ছড়িয়েছে তা জানতে ধৃতদের দফায়-দফায় জেরা করছেন পুলিশ অফিসাররা।
এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, গাঁজা ভর্তি একটি ট্রাক মণিপুর থেকে পশ্চিমবঙ্গের পূর্বস্থলীতে যাচ্ছে বলে সূত্র মারফত খবর মেলে। মরণ বালা নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ওই ট্রাক খালি করা হবে বলেও খবর পান এসটিএফ-এর আধিকারিকরা। এরপরই অভিযানের ছক সাজায় এসটিএফ। পূর্বস্থলীর শিবতলা এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়। মরণ বালা নামে ওই ব্যক্তির বাড়ি আগেভাগে ঘিরে ফেলা হয়। রবিবার ভোর রাতে এলাকায় ওই ট্রাক ঢুকতেই আটক করে পুলিশ। ওই ট্রাকে তল্লাশি চালাতেই উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ গাঁজা।
এসটিএফের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া গাঁজার পরিমাণ ৮২৪ কেজি। গাঁজা উদ্ধারের পরেই ওই ট্রাকের চালক ও খালাসিকে গ্রেফতার করা হয়। গাঁজা কারবারি সন্দেহে মরণ বালা ও তার ছেলে শুভ বালাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।
দফায়-দফায় চালানো জিজ্ঞাসাবাদে শেষমেশ মরণ ও তার ছেলে শুভ অবৈধ এই কারবারের কথা স্বীকার করে নেয়। এরপরেই এসটিএফ তাঁদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হয়েছে বাবা-ছেলের এক শাগরেদও। আন্তঃরাজ্য গাঁজা কারবারের মূল পাণ্ডা ধৃত মরণ বালা নামে ওই ব্যক্তিই। এমনই দাবি এসটিএফ-এর।
জানা গিয়েছে, গাঁজা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগেও এসটিএফ গ্রেফতার করেছিল মরণকে। এর আগেও তার কাছে মেলে বিপুল পরিমান গাঁজা। দীর্ঘদিন জেল খাটার পর ছাড়া পেয়ে মরণ বালা নামে ওই ব্যক্তি ফের এই অবৈধ কারবারের সঙ্গে যুক্ত হয়।
পূর্বস্থলীর শিবতলা এলাকার বাসিন্দা তারক দেবনাথ এদিন জানান, তাঁদের এলাকার মরণ বালা নামে ওই ব্যক্তির একতলা বাড়ির গোটাটাই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় মোড়া। বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেন না মরণ বালা। ওই বাড়িতে ঠিক কি হয় তা নিয়ে এলাকায় জল্পনাও চলছে বহুদিন ধরেই।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মরণ বালা ও তার ছেলে শুভ পূর্বস্থলীতে একটি হোটেল চালাতেন। তাদের মার্কেট কমপ্লেক্সও রয়েছে। গাঁজা কারবারের বিষয়টি আড়াল করতেই হয়তো মরণ বালা হোটেল ব্যবসা ফেঁদেছে বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন- নিম্নমুখী আক্রান্ত-সংক্রমণ হার, বাংলায় কমছে না কোভিডে মৃত্যু
এর আগে গত ৯ জানুয়ারি রাতে শহর বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজ মোড় সংলগ্ন এলাকার একটি বাড়িতে হানা দিয়ে এসিটিএফ ১৩ কেজি হেরোইন ও হেরোইন তৈরির রাসায়নিক উপকরণ বাজেয়াপ্ত করেছিল। উদ্ধার হয়েছিল নগদ ২০ লক্ষেরও বেশি টাকা। উদ্ধার হওয়া সেই হেরোইনের বাজার দর ৬৫ কোটি টাকা বলে এসটিএফের তরফে দাবি করা হয়। সেই ঘটনায় বর্ধমানের ওই বাড়ি থেকে এসটিএফ হেরোইন কারবারি বাবর মণ্ডল ও তার ছেলে রাহুল মণ্ডলকে গ্রেফতার করে ।
ধৃতদের জেরা করে এসটিএফ আধিকারিকরা জানতে পারেন, বর্ধমানের বাড়িতে হেরোইন তৈরি করে বাবর ও তার ছেলে মণিপুর ও ওড়িশায় পাচার করতো। সেই ঘটনার পর দিন কুড়ি কাটতে না কাটতেই রবিবার পূর্বস্থলীতে গাঁজার কারবারের হদিশ মিলল।