অডিটের কাগজপত্র হাতাতে স্কুলে ঢুকে আলমারির তালা ভেঙে ফেলে চোরেরা। তবে সেই সব না পেয়ে একেবারে খালি হাতে ফিরে যায়নি তারা। আমেজ করে চা বিস্কুট খেয়ে মিড-ডে মিলের জন্য স্কুলে রাখা পোস্ত, সর্ষের তেল সহ নানা রকম মশলা নিয়ে চম্পট দেয় চোরের দল। অবাক করা এই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির দেবীপুরের আলিপুর ইউনাইটেড নিম্ন বুনিয়াদী স্কুলে।
এই ঘটনা জানতে পেরে অভিভাবক থেকে শুরু করে প্রধান শিক্ষিকা-সহ অন্যরাও স্তম্ভিত। খবর পেয়ে তাঁরাও স্কুলে ছুটে আসেন। আলিপুর ইউনাইটেড নিম্ন বুনিয়াদী স্কুলের সঙ্গে একই কম্পাউন্ডে রয়েছে দেবীপুর স্টেশন হাইস্কুলও। সেই স্কুলেরও প্রধান শিক্ষকের ঘর-সহ আরও বেশ কয়েকটি ঘরের তালা ভাঙা অবস্থায় ছিল। খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ স্কুলে তদন্তে যায়। তবে কোনও চোর ধরা পড়ার খবর এখনও মেলেনি।
দেবীপুরের আলিপুর ইউনাইটেড নিম্ন বুনিয়াদী স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন-পাঠন হয়। ৬টি ক্লাসের মোট পড়ুয়া ২৩৮ জন। শিক্ষক আছেন পাঁচ জন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্কুলের বাইরে মিড-ডে মিলের চাল পড়ে থাকতে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। তাঁরা স্কুল ঘরের দরজা খোলা থাকতে দেখেছিলেন। এমনকী স্কুলের মধ্যে চা পাতা, বিস্কুটের প্যাকেট এমনকী খাওয়া চায়ের কাপও গড়াগড়ি খেতে দেখেছেন তাঁরা। স্থানীয়দের দাবি, এলাকার কিছু সমাজবিরোধী প্রতিদিন স্কুল চত্বরে আড্ডা দেয়। তাদের মধ্যে কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ স্থানীয়দের।
নিম্ন বুনিয়াদী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সোমা সাহা বলেন, "আগামী ৪ অগস্ট স্কুলে অডিট হওয়ার কথা রয়েছে। চোরেরা সম্ভবত সেই সংক্রান্ত নথি চুরি করতে রাতের অন্ধকারে তালা ভেঙে স্কুলে ঢোকে। কিন্তু নথি পায়নি। কারণ কাজের প্রয়োজনে ওই সব নথি স্কুলে রাখিনি। শুধুমাত্র কম গুরুত্বপূর্ণ যে দুটি নথি স্কুলে ছিল সেগুলি চোরেরা নিয়ে পালিয়েছে।"
আরও পড়ুন- ‘যা বলেছি বেশ করেছি, আবার বলব’, বুদ্ধদেব প্রসঙ্গে ফের কড়া কথা কুণালের
প্রধান শিক্ষিকা আরও বলেন, “স্কুলের মিড-ডে মিলে পড়ুয়াদের পোস্ত দেওয়ার কথা ছিল। তাই আগে থেকে পোস্ত এনে স্কুলে রাখা ছিল
। এছাড়াও এক লিটার সর্ষে তেলের প্যাকেট, নানা রকম মশলা এনে স্কুলের একটি আলমারিতে মজুত রাখা ছিল। চুরি করতে এসে চা-বিস্কুট খাওয়ার পরে চোরেরা ওই পোস্ত ও সব মশলা নিয়ে পালিয়েছে।"
ওই একই কম্পাউন্ডে থাকা দেবীপুর স্টেশন হাইস্কুলেও প্রধান শিক্ষকের ঘর-সহ একাধিক ঘরের তালা ভাঙা থাকা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। ওই স্কুলের টিচার-ইন চার্জ মহম্মদ আকবর হোসেন বলেন, "চোরেরা একাধিক ঘরের তালা ও আলমারি ভেঙেছে। চোরেরা স্কুলে থাকা ল্যাপটপ পর্যন্ত চুরি করে না নিয়ে গেলেও সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক নিয়ে পালিয়েছে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে গেছে কিনা সেটা স্কুল খোলার পর সব খতিয়ে দেখে বুঝতে পারা যাবে। চোরেদের উদ্দেশ্য কি ছিল সেটাই বুঝতে পারা যাচ্ছে না।''
এদিকে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অডিট-সংক্রান্ত নথি চুরি করতেই দুষ্কৃতীরা নিম্ন বুনিয়াদী স্কুলে ঢুকেছিল। পালানোর সময় সিসি ক্যামেরা দেখে তার হার্ড ডিস্ক নেওয়ার জন্যই হাই স্কুলে ভাঙচুর চালায় তারা।