হুঁশ নেই, বর্ষবরণের রাতেও সেই বিধি ভাঙ্গা ভিড়, অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। ছবি- শশী ঘোষ
ডেল্টা-ওমিক্রনের হাত ধরে আর মাত্র কয়েকটা দিনের মধ্যেই আছড়ে পড়তে চলেছে করোনা তৃতীয় ঢেউ। এমনটাই মনে করছেন, স্বাস্থ্য কর্তারা। বড়দিন থেকে বর্ষবরণ, সাধারণ মানুষের উৎসবের সবটুকু স্বাদ চেটেপুটে নেওয়ার মাঝেই যে বিপদ ওতপেতে বসে রয়েছে, তা নিয়ে বারবার সাবধান করার পরেই একশ্রেণীর মানুষের লাগামছাড়া মনোভাবকেই সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ বলেই মনে করছেন চিকিৎসক মহল।
Advertisment
উৎসবের নেশায় বুঁদ থেকে মাস্ক না পড়ার মনোভাবের ফল যে কতটা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে তা হয়তো আঁচ করতে পারেননি উৎসব প্রিয় মানুষজন। তার তার হাত ধরেই বঙ্গে সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ৭০০-র ঘর থেকে লাফিয়ে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৩০০০-র ঘরে। গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৫১ জন।
মাস্ক পড়তে চলছে মাইকিং। ছবি শশী ঘোষ
বর্ষবরণ উৎসবের ভিড় নিয়ে আশঙ্কা ছিলই। রাত যত গড়িয়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়। তবে বড়দিনের পার্কস্ট্রিটের যে ছবি ধরা পড়েছে এদিন ভিড় তার তুলনায় যথেষ্ট কম থাকলেও মাস্কহীন মানুষের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মত। কলকাতার পাশাপাশি, জেলা শহরগুলিতেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় জমতে শুরু করে। পিকনিক, পর্যটন, নৈশ পার্টির হুল্লোড়ে শিকেয় উঠেছিল কোভিড বিধি। আগামী কয়েকদিন নতুন বছরের আনন্দে এই একই ছবি কমবেশি দেখা যাবে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা।
Advertisment
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েকদিনে টেস্টের সংখ্যা বাড়লেই সংখ্যাটা লাফিয়ে বাড়বে। ওমিক্রন-ডেল্টার হাত ধরে বঙ্গে প্রতিদিন, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হবেন বলেই মনে করছেন তাঁরা। করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউ কালে করোনার যে দাপট দেখা গেছে তাতেই ধরিত্রী কম্পমান। তৃতীয় ঢেউ কত ভয়াবহ হতে পারে তা ভেবেই শিউরে উঠেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ডাক্তার অমিতাভ নন্দী এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “বারবার সাবধান করা সত্ত্বেও কিছু শ্রেনীর মানুষের বেপরোয়া মনোভাব অচিরেই বিপদ ডেকে আনবে তা আর বলার অপেক্ষে রাখে না। তাঁর কথায়, শুধু ওমিক্রন নয়, সেই সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে করোনার ডেল্টা প্রজাতির বাড়বাড়ন্ত এখনও অব্যাহত, কাজেই যথাযথ কোভিড প্রোটোকল না মেনে চলায় ফল আমাদের সামনে কয়েকদিনের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে”।
ওমিক্রন ভয়কে সরিয়ে রেখে বর্ষবরণের আনন্দে সামিল অজস্র মানুষ। ছবি শশী ঘোষ
৬৪ দিন পরে ভারতে কোভিডের দৈনিক সংক্রমণ আবার ১৬ হাজার পেরোল। দেশে মোট ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে, ১২৭০। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, দেশে কোভিডের জন্য নমুনা পরীক্ষার প্রায় ১৮ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। এই তথ্য সামনে আসতেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অপেক্ষা মাত্র আর কয়েকদিনের। তারপরই ভারতেও আছড়ে পড়তে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ।
বঙ্গে ইতিমধ্যেই যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলা হয়েছে। ৩২ হাজার ২৬৮ টি সরকারী শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৮০০ জন মেডিক্যাল অফিসার এবং ১২০০জন নার্সকে বয়স্কদের কোভিড ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ রুখতে তৎপর রাজ্য সরকার। তবে ওমিক্রন কালে বড়দিন এবং বর্ষবরণের রাত্রে নৈশকালীন বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ায় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ।