হুগলির সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শনিবার একটি টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, "আজ সিঙ্গুরের কৃষকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অধিকৃত জমি ফেরতের তৃতীয় বার্ষিকী। এই ঐতিহাসিক দিনে সরকার কৃষকদের পর্চা হস্তান্তর করে। শিল্পের সমৃদ্ধি ও কৃষকদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মা মাটি মানুষকে জানাই আমার প্রণাম।"
আজ সিঙ্গুরের কৃষকদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে অধিকৃত জমি ফেরতের তৃতীয় বার্ষিকী, এই ঐতিহাসিক দিনে সরকার কৃষকদের পরচা হস্তান্তর করে। শিল্পের সমৃদ্ধি এবং কৃষকদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মা-মাটি-মানুষ কে জানাই আমার প্রণাম
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) September 14, 2019
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের ক্ষেত্রে সিঙ্গুরের ভূমিকা বিরাট। তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছিল সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন। মমতা কথা দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এসে জমি ফিরিয়ে দেবেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সেই বিরোধীনেত্রী হিসাবে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে সমর্থ্য হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ২০১৬ সালে আজকের দিনেই সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি হস্তান্তর করেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, রাজ্যের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব রকমের সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দেন মমতা।
আরও পড়ুন- বাঙালিয়ানার জটিল ধাঁধায় পদ্মশিবির
২০০৬ সাল থেকেই টাটাদের ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানাকে ঘিরে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে সিঙ্গুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয় আন্দোলন। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ৩১ আগস্ট অধিগৃহীত ৯৯৭.১১ একর জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়টিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী নিজেই পর্চা হস্তান্তরের কাজ শুরু করেন। এমনকি নিজের হাতে সর্ষের বীজ ছড়িয়ে দেন সিঙ্গুরের জমিতে। পরবর্তীতে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপড়তায় জমিগুলিকে চাষযোগ্য করে তোলার কাজ শুরু হয়। সরকারি হিসেব মতো প্রায় ১৮০০ জন কৃষককে জমি ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি চাষের জন্য বীজ বিতরণও করা হয়েছিল। মন্দাবস্থা কাটাতে রাজ্য সরকারের তরফে সিঙ্গুরের ৩২০০ জন কৃষক এবং তাঁদের পরিবারকে মাসিক ২ হাজার টাকা এবং ১ কিলো চাল দেওয়া হয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের উদ্যোগ সত্বেও চাষযোগ্য হয়ে ওঠেনি সিঙ্গুরের জমি।
আরও পড়ুন- জীবদ্দশাতেই মমতাকে বাংলায় এনআরসি দেখতে হবে, হুঁশিয়ারি দিলীপের
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই জমি হস্তান্তরকে ঘিরে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মেদিনীপুরের সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, "কৃষিকাজের জন্যই যদি জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে, তবে তাঁরা এখন সিঙ্গুরে শিল্পের জন্য আন্দোলন করছে কেন? সেখানকার মাটি পুরো কংক্রিট আর অনুর্বর, ফলে কৃষিকাজ হচ্ছে না। আর তাঁর ফলে চাষাবাদও যেমন হচ্ছে না, তেমন শিল্পও আসছে না সিঙ্গুরে। তৃণমূল কেবল ভোট পাওয়ার জন্য মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে।"