করোনার প্রথম ঢেউয়ে সকলের নাস্তানাবুদ অবস্থা। অবশ্য তা হওয়ারই কথা! প্রথম কোন অজানা ভাইরাস হানা দিয়েছে মানব সমাজে। সবকিছু সামাল দিতে প্রয়োজন কিছুটা সময়ের। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে করোনার দ্বিতীয় ঢেউও হাজির হল যথা সময়েই। প্রথম ঢেউ থেকেও আরও বেশি আক্রান্ত-মৃত্যু দেখেছে দ্বিতীয় ঢেউ।
তখন অবশ্য সবাই জেনে গিয়েছেন করোনা সংক্রমণ এড়াতে ঠিক কী কী ব্যবস্থা আমাদের নিতেই হবে। কিন্তু তারপরও করোনার সাম্প্রতিক স্ট্রেন ওমিক্রনে কেন দেশের এই নাজেহাল অবস্থা প্রশ্ন তুলেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আভাস থাকা সত্ত্বেও একশ্রেণীর মানুষের চূড়ান্ত উদাসীনতার ওপর ভর করেই আজ ফের লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ।
আজকের এই পরিস্থিতি কেবল কী ওমিক্রনের অত্যধিক সংক্রমণ ক্ষমতা? এবিষয়ে মুখ খুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। বিশিষ্ট ভাইরোলজিষ্ট অমিতাভ নন্দীর কথায়, “পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও, মানুষের লাগামছাড়া আচরণ আজকের এই পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট তুলনায় অনেকে বেশি সংক্রামক তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু অনেকেই আছেন যারা মৃদু উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ফলে হুহু করে বাড়ছে সংক্রমণ। সেই সঙ্গে প্রয়োজন টিকা নিয়েও বিস্তর গবেষণা"।
এখানেই প্রশ্ন, উপসর্গহীন রোগীর বিষয়টা তো করোনার প্রথম থেকে সকলের জানা তাহলে? বিশিষ্ট চিকিৎসক মানস গুমটা জানিয়েছেন, “দুর্গাপুজোর সময়েও আমাদের তরফ থেকে রাজ্যসরকারকে বারবার সতর্ক করা হলেও লাগাম ছাড়া ভিড় ফের সংক্রমণ বাড়িয়েছিল। আমরা অতীতে দেখেও শিক্ষা না নিয়ে বড়দিন, বর্ষবরণের আনন্দে মাতলাম, সকল কোভিড বিধিকে জলাঞ্জলি দিয়ে, আর তার পরই বঙ্গে লাফিয়ে বেড়েছে সংক্রমণ। এই লাগাম ছাড়া সংক্রমণের দায় সরকার কখনই এড়িয়ে যেতে পারেনা। অতীতের কোন শিক্ষাই আমরা গ্রহণ করিনি ফলে আজকের এই ফল ভুগতে হচ্ছে সকলকে”।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে বেশ কিছুদিন সংক্রমণ নিন্মমুখী ছিল তার মানে এই নয়, সংক্রমণ চলে গিয়েছে, আর সেই নিন্মমুখী কেস থেকেই এসেছে আত্মতুষ্টি। আর সেই আত্মতুষ্টি থেকেই আজকের লাগামছাড়া সংক্রমণ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তরফে বারবার মিলেছে সাবধানবানী। আমারা সেই সব কানে তুলিনি, বলছেন চিকিৎসক সৌম্যজিত গুহ, তাঁর কথায়, “এবার যেভাবে করোনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে তা এককথায় ভয়াবহ। একটা পরিবারে ঢুকলে পরিবারের সকলে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকী শ’য়ে শ’য়ে ডাক্তার নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী টিকা নেওয়া সত্ত্বেও করোনার এই স্ট্রেনে আক্রান্ত হচ্ছেন। এখন পরিস্থিতি কবে আবার স্বাভাবিক হবে সেটাই প্রশ্ন”। এদিকে দেশে রকেট গতিতে বেড়েছে সংক্রমণ। দেশে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার পেরোল। সেই সঙ্গে বঙ্গে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫,৪২১ জন।