Advertisment

স্কুল থাকলেও নেই পড়ুয়া, দিনভর কীভাবে সময় কাটে শিক্ষকদের? জানলে চমকে উঠবেন!

এলাকার এই প্রাইমারি স্কুল নিয়ে তিতিবিরক্ত স্থানীয়রা।

author-image
Nilotpal Sil
New Update
This government school is facing closure due to lack of students

কার্যত তালা পড়ার মুখে এই সরকারি স্কুল। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

পড়ুয়ারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই দুই শিক্ষক শুধুই নিয়ম করে এখন স্কুলে আসেন। 'গল্পগুজব' করে সময় কাটিয়ে যথা সময়ে বাড়িও চলে যান। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যে যখন তোলপাড় চলছে সেই সময়ে পড়ুয়ার অভাবে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুড়ি জুনিয়র হাই স্কুলের এই বিষয়টি এখন জোর চর্চায় এসেছে। স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে জেলা স্কুল দফতর, কারও জানা নেই ফের কবে এই স্কুল পড়ুয়াদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠবে। কেনই বা বাড়ির ছেলেমেয়েদের এই স্কুলে পড়াতে পাঠানোর ব্যাপারে অনাগ্রহী অভিভাবকরা। উত্তর খুঁজছে প্রশাসন।

Advertisment

কাটোয়া মহুকুমার কেতুগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের জনবহুল এলাকা গঙ্গাটিকুড়ি। শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার ২০১৩ সালে এই এলাকায় একটি স্কুল তৈরির অনুমোদন দেয়। তিন কাঠা জমির উপর তিনটি শ্রেণিকক্ষ, অফিস ঘর ও মিড ডে মিলের রান্নার ঘর সমেত গঙ্গাটিকুড়ি জুনিয়র হাই স্কুল ভবন প্রতিষ্ঠা পায়। শতাধিক পড়ুয়া নিয়ে এই স্কুলে শুরু হয় পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পঠন-পাঠন। স্কুলে পঠন পাঠনের দায়িত্ব বর্তায় দুই অবসরপ্রাপ্ত অতিথি শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, নুরুল আমিনের উপরে। প্রথম দিকে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই স্কুলের প্রতি পড়ুয়া এবং তাঁদের অভিভাবকদের মোহভঙ্গ হতে শুরু করে।

আরও পড়ুন- কয়লা পাচার মামলা: মমতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই মন্ত্রীকে দিল্লি তলব ED-র

এই বছর খাতায় কলমে স্কুলের পড়ুয়া হিসেবে মাত্র একজনের নাম থাকলেও ওই পড়ুয়াও আর স্কুলে আসে না। পড়ুয়াবিহীন নিস্তব্ধ এই স্কুলে এখন শুধু নিয়ম করে আসেন দুই শিক্ষক। তাঁরাই স্কুলের গেট খোলেন। তবে কোনও পড়ুয়া না থাকার জন্য ক্লাস হয় না বলে ঘন্টা বাজানোরও আর প্রয়োজন পড়ে না। ক্লাস রুমের বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড সবেতে পড়ে গিয়েছে ধুলোর আস্তরণ। শিক্ষকরা স্কুলে এসে শুধু অফিস রুমে বসে গল্পগুজব করে সময় কাটান ।টিফিন খেয়ে যথা সময়ে স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়ে শিক্ষকরা বাড়িও চলে যান।

আরও পড়ুন- নিরিবিলি এতল্লাট এককথায় অসাধারণ! কলকাতার খুব কাছে এই প্রান্তে ছোঁয়া যায় সুন্দরবন

স্কুলটির এমন দুর্দশা তৈরি হওয়া নিয়ে নানা কথা গ্রামবাসীরা শুনিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা গায়েত্রী মণ্ডল ও উৎপল বৈরাগ্যর কথায়, “দুই জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে স্কুলে পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল। তার পর থেকে বছরের পর বছর বছর কেটে গেলেও আজ অবধি ষ্কুলে কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। শিক্ষকের আকালে স্কুলে পড়ুয়াদের লেখা পড়া ঠিকঠাক হয় না। এইসব কারণেই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অভিভাবকরা এই স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করান না। তাই এই স্কুল এখন পড়ুয়াশূন্য হয়ে পড়েছে।''

স্কুলটির দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “এখন খাতায়-কলমে এক জন পড়ুয়া স্কুলে থাকলেও সেও আর স্কুলে আসে না।'' স্কুলটি পড়ুয়াশূন্য হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে শিক্ষকের ব্যাখ্যা, সম্ভবত সঠিক পরিকাঠামো না থাকার কারণেই তাঁদের স্কুলের এই হাল হয়েছে।

কেতুগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অমিত সাউয়ের কথাতেও উঠে এসেছে স্কুলটির শিক্ষকের আকালের কথা। বিডিও বলেন, “জানতে পেরেছি গঙ্গাটিকুড়ি জুনিয়র হাই স্কুলটি দু’জন মাত্র অতিথি শিক্ষক মিলে চালান। স্কুলে কোনও স্থায়ী শিক্ষকই নেই। অবিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের ওই স্কুলে ভর্তি করতে না চাওয়াতে স্কুলটি ধুঁকছে।” বিডিও এমনটা জানালেও জেলার স্কুল পরিদর্শক শ্রীধর প্রামাণিক বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে দেখে তবেই বলতে পারব।''

Purba Bardhaman students school West Bengal
Advertisment