পুজোর আর হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা দিন। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর কাউন্টডাউন। চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষের পালা। দোকান বাজার, শপিং মলগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে। কুমোরটুলিতেও তুঙ্গে ব্যস্ততা। একই সঙ্গে পাড়ার পুজো প্যান্ডেলগুলিতেও চলছে শেষে মুহূর্তের প্রস্ততি। গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতা সহ শহরতলী সাক্ষী থেকেছে থিমের পুজোর। আর সেই সব থিমের মাধ্যমেই তুলে ধরা হচ্ছে বাস্তব ঘটনা। আর এবারের পুজোর সেরা আর্কষণ খাস কলকাতায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহ। সৌজন্যে বাগুইআটি নজরুলপার্ক উন্নয়ন সমিতি!
করোনা অতিমারি কাটিয়ে ছন্দে ফিরেছে বিশ্ব। দুবছর মানুষজন সেভাবে পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি। ঘরবন্দী থেকেই পুজোর যৎসামান্য আনন্দকে ছুঁয়ে দেখতে পেরেছিল আপামোর ‘পুজোপ্রেমী’ মানুষজন। আর এবার তাই পুজোর সবটুকু আনন্দকে চেটেপুটে উপভোগ করতে ময়দানে নেমে পড়েছে ‘পুজোপাগল’ বাঙালি। এর মধ্যে বাড়তি পাওনা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের তরফে ১০ হাজার টাকা বেড়েছে পুজো অনুদান।
থিমের পুজোয় এবারের সেরা চমক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বাগুইআটি নজরুলপার্ক উন্নয়ন সমিতির এবারের পুজোর থিম ‘অসমাপ্ত’! করোনা বিদায় বেলায় আমরা সকলেই সেই ভয়াবহ যুদ্ধে শিউরে উঠেছি। যেখানে রুশ আগ্রাসনের কবলে পড়ে অসহায় ইউক্রেনের ছবি উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। যুদ্ধের আবহে বোমার আঘাতে হাজারে হাজারে নিরীহ মানুষের মৃত্যু মিছিল তামাম বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়ে দিয়ে গেছে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। একের পর এক রুশ মিসাইল হানায় ধ্বংস হয়েছে একাধিক ভবন, বহুতল, তাসের ঘরের মত গুঁড়িয়ে পড়েছে সরকারি দফতর।
আগ্রাসনের মুখ থেকে বাদ পড়েনি প্রসূতি হাসপাতাল, বিমানবন্দরের মত জায়গাও। মৃত্যু মিছিলের হাহাকার আর বুক ফাটা কান্না এক নিয়ে এবারের বিশেষ পুজো থিম ‘অসমাপ্ত’! যেখানে পুজো-প্যান্ডেলেই ফুটিয়ে তোলা হবে যুদ্ধের আবহ, ভয়াবহতা! আর বার্তা বিশ্বশান্তির।
সাধারণ মানুষের সামনে সেই ছবি তুলে ধরেই বিশ্বশান্তির বার্তা দিতে এমন পুজো-থিমকে বেছে নিয়েছেন শিল্পী অভিজিৎ গণ। তার কথায়, “ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তোলা হবে এবারের পুজো থিমে। আর এই বিশেষ থিমের মাধ্যমে আমাদের বার্তা সরাসরি গোলাবারুদের যুদ্ধের অবসানে এক নতুন বিশ্ব। ভাঙা-গড়ার খেলা থাকবেই। না ভাঙলে নতুন কিছু গড়াও সম্ভব নয়। তবে যুদ্ধের মাধ্যমে কোন বিষয়ের সুষ্ঠ সমাধান করা যায় বলে আমি অন্তত মনে করি না। যুদ্ধ শেষে বিশ্বশান্তির বার্তা দিতেই এবারের আমাদের বিশেষ থিম ‘অসমাপ্ত’!
তিনি বলেন, “আশা করি দর্শকরা যারা এই পুজো দেখতে আসবেন তারা এমন কিছু বিষয় এখানে এসে দেখবেন যা তাদের মন ছুঁয়ে যেতে বাধ্য। আর প্রতিমাতেও থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া। এবারের পুজোয় আমরা এমন একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়কে থিমের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি যা জনমানসে দাগ কাটতে বাধ্য”।