আমফানে চাষের জমি, পুকুর, কাউ শেড, নার্সারি সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়। একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামীণ জনজীবন। আমফানের ধংসের মোকাবিলা করতে তাই একাধিক পথ নিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর। এই দফতরের অধীন ওয়েস্ট বেঙ্গল কসপ্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন কৃষি-কাজ ও মাছ চাষে উন্নত পদ্ধতির মাধ্যমে বিধ্বস্ত এলাকার অর্থনীতি পুনর্গঠন করতে এক গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে। একদিকে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে গ্রামের চেহারা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে আমফান দুর্গতদের মতো পরিযায়ী শ্রমিকদেরও এইসব প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, "নারেগার কাজ দিয়ে নদীবাধ, রাস্তা, নিকাশীবাঁধ, কাউ শেড, পুকুর, বনসৃজন, ভবন মেরামতের কাজ চলছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে ১০০দিনের কাজের জন্য। যদিও তাঁরা এই কাজে খুব একটা অভ্যস্ত নয়। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতি জোরদার করতে নানা আধুনিক চাষাবাদের কর্মসূচি নিয়েছে সিএডিসি।"
আমফান প্রলয়কাণ্ডের পর চাষের জমি কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। জলাশয় মাছ চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একেই করোনা-লকডাউন পরিস্থিতির জন্য চাষের মূল্য পায়নি কৃষকরা। তারওপর এই ঘূর্ণিঝড় কৃষকদের সব কেড়ে নিঃস্ব করে ছেড়েছে। কমপ্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন বা সিএডিসি অত্যাধুনিক নানা প্রকল্প নিয়েছে আমফান দুর্গত ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য। হ্যাঙ্গিং সিড বেড, ভার্টিক্যাল কিচেন গার্ডেন, হাইড্রোপোনিক ভেজিটেবল প্লান্ট, সিমেন্ট ট্যাঙ্ক বা প্লাস্টিক ট্যাঙ্কে মাছ চাষ (শিঙি, মাগুর), পোল্ট্রি, ভার্মি কম্পোস্ট এমন নানা প্রকল্প ঘোষণা করেছে। এই সব প্রকল্প অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জরুরিকালীন তৎপরতায় রূপায়ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার জন্য একগুচ্ছ নতুন ধরনের পরিকল্পনা নিচ্ছে সিএডিসি। একদিকে যেমন কৃষকদের হাতে অর্থ আসবে পাশাপাশি উৎপাদন প্রক্রিয়া বজায় থাকবে। সিএডিসির কর্তা সৌম্যজিৎ দাস বলেন, "আমফানের ফলে জমি, পুকুর, নার্সারি, মাঠের অবস্থা খারাপ। সিএডিসি বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। যার ফলে গ্রামীণ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পুকুর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে সেখানে মাছ চাষ করা যাচ্ছে না। বাড়ির পিছনে বা ফাকা জায়গায় চৌবাচ্চা করা যেতে পারে। সেখানে সিঙি, মাগুর চাষ হতে পারে। হ্যাঙ্গিং সিড বেড, ভার্টিক্যাল কিচেন গার্ডেন, হাইড্রোপোনিক ভেজিটেবল প্লান্ট বাড়িতেই করা যেতে পারে। এভাবে বিভিন্ন সবজির ফলন হতে পারে।"
উৎপাদিত দ্রব্যের মার্কেটিংও করবে সিএডিসি। শুধু উপকরণ ও মজুরি নিয়ে কৃষককে উৎপাদন করতে হবে। কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে বিশেষ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ধানের চারা, শষ্য বীজ, মাছের চারাও দেওয়া হচ্ছে। সৌম্যজিৎবাবু আরও বলেন, "আমরা উন্নত টেকনোলজির মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি রিকভারি করার চেষ্টা করছি। এই সব প্রকল্পে সিএডিসির মাধ্যমে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। সেই পর্বে টাকাও দিচ্ছে এই সরকারি সংস্থা। পাশাপাশি উপকরণ, কাঁচামাল দেবে সঙ্গে মজুরি পাবে উৎপাদনকারী। এমনকী উৎপাদিত দ্রব্য মার্কেটিং করবে সিএডিসি।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন