টাকার পাহাড় উদ্ধারের দায় নেবে না তৃণমূল। 'যার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার দায় তার'। শাসকদলের তরফে সাংবাদিক সম্মেলন করে সাফ বললেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী শশী পাঁজা। 'বেছে-বেছে তৃণমূল নেতাদের বাড়িতেই যাচ্ছে ইডি-সিবিআই, এটা আসলে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে', বিজেপিকে নিশানা করে সাংবাদিক বৈঠকে সোচ্চার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও।
এবার নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতির দায় ঝাড়ল তৃণমূল। এদিন শুরুতেই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়দের তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের কথা জানান শশী পাঁজা। সাংবাদিক বৈঠকে এরপর তিনি আও বলেন, 'টাকার পাহাড় তৃণমূলের পার্টি অফিস থেকে তো উদ্ধার হয়নি। তার দায় তৃণমূল নেবেও না। যেখান থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে দায় তার। দলের পোস্টে থেকে দুর্নীতির দায় তৃণমূল কখনও নেবে না।'
অন্যদিকে ব্রাত্য বসু এদিন বিজেপিকে বিঁধে বলেন, 'তৃণমূলের নেতাদের প্রমাণ ছাড়াই কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। শুভেন্দুর নাম নারদ মামলায় এলেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রসন্ন রায় (শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মিডলম্যান)-এর বাড়ি থেকে পাওয়া দলিলে দিলীপ ঘোষের নাম ছিল। তাকে একবার ডাকলও না ইডি বা সিবিআই।'
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যে একের পর এক দুর্নীতির পর্দাফাঁস হয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছে শাসকদল তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের। ইতিমধ্যেই শিক্ষাক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হয়ে মাসের পর মাস জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই নন, সরকারি চাকরি টাকায় 'বিক্রি' করে শ্রীঘরে দিন কাটাচ্ছেন রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা তৃণমূলের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যও। এছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিতে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গারদের পিছনে দিন কাটাচ্ছেন আও অনেকে। প্রত্যেকেই রাজ্যের শাসকদলের শীর্ষ নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
আরও পড়ুন- অবশেষে দায় ঝাড়ল তৃণমূল, কুন্তল-শান্তনুর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ জোড়া-ফুলের
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে মিলেছিল টাকার পাহাড়। দিন-রাত পার করেও ঝুড়ি-ঝুড়ি-বস্তা-বস্তা টাকা গুণেছে ইডি। বিপুল পরিমাণ, সোনা-হীরেও মিলেছিল অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে। এসবই নিয়োগ দুর্নীতির বলে দাবি। টেলিভিশনের মাধ্যমে সেই টাকা-সোনা উদ্ধারের ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। মোবাইলে-মোবাইলে এখনও ঘুরছে সেই ছবি। নিঃসন্দেহে তা শাসকদলের কাছে সবচেড়ে বড় অস্বস্তির অন্যতম বড় কারণ। এছাড়াও গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলে রকুবরের সম্পত্তি উদ্ধারের ঘটনা এখনও জোর চর্চায়। মানিক ভট্টাচার্য, কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়দের কুবেরের খনি নিয়েও চর্চার শেষ নেই।
আরও পড়ুন- ‘এই পার্থদাকে আমি চিনি না’, প্রাক্তন মন্ত্রীকে চিনতে অস্বীকার ফিরহাদের, কিন্তু কেন?
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের পাহাড় প্রমাণ সম্পত্তির খোঁজ মেলা, তাঁদের অনেকের গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে জোড়াফুল এখন বেশ প্যাঁচে। সেই কারণে নিজেদের ভাবমূর্তির পুনরুদ্ধারে ড্যামেজ কন্ট্রোলের মরিয়া চেষ্টায় শাসকদল।