পঞ্চায়েত ভোটের রেজাল্ট বের হওয়ার পর চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। তারই মধ্যে পঞ্চায়েত থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করার সব সংকল্প জলাঞ্জলি দিয়ে ফেললেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতে জয়ী সিপিএমের তিন প্রার্থী ও এক নির্দল প্রার্থী। লালঝাণ্ডা শিকেয় তুলে রেখে বুধবার তাঁরা তৃণমূলে যোগদান করে ফেললেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তাঁদের হাতে তৃণমূলের ঝাণ্ডা তুলে দিয়ে দলে বরণ করে নেন। এই নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় দলবদলুর সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ। তবে, বাম প্রার্থীদের এমন আদর্শ বিচ্যুতি দেখে হতবাক কাটোয়ার বাসিন্দারা। এই ঘটনা নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব যে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন, সেটা তাঁরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
কাটোয়া ১ ব্লকের শ্রীখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ২০টি। এই ২০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১১টিতে, বিজেপি ৫টিতে, সিপিএম ৩ টিতে জয়ী হয়েছে। বাকি একটি আসনে জয়ী হয়েছে নির্দল প্রার্থী। সিপিএমের প্রতীকে ভোটে লড়ে জয়ী হয়ে তুরন্ত তৃণমূলে পালটি খাওয়ার পথ মঙ্গলবার দেখিয়ে ছিলেন কালনার সহজপুরের ১৬৯ সংসদের প্রার্থী গীতা হাঁসদা। পঞ্চায়েত ভোটের ব্যালট গণনা শেষে জয়ী ঘোষিত হওয়ার কয়েক মুহুর্তের মধ্যে সিপিএমের গীতা তৃণমূলের গীতা হয়ে যান।
এরপর রাতটুকু শুধু কেটেছে। এদিন বেলা বাড়তেই শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতে জয়ী তিন সিপিএম প্রার্থী ইউসুফ শেখ, মনোতারা বিবি ও কদরবানু বিবি এবং এক নির্দল প্রতীকে জয়ী প্রার্থী তনুশ্রী মণ্ডল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন বলে তৃণমূলের দাবি। জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এদিন নির্দল প্রার্থী তনুশ্রী মণ্ডল, সিপিএম প্রার্থী কদরবানু বিবির স্বামী বাবুলাল শেখ, সিপিএম প্রার্থী মনোতারা বিবি, সাজাহান শেখের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন।
তৃণমূলে যোগদানের কারণ নিয়ে চার জনের গলাতেই শোনা যায় একই সুর। তাঁরা বলেন, 'আমরা তৃণমূলই করতাম। তাই উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলেই ফিরে এলাম।' একই কথা জানান, জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, 'এঁনাদের কাউকেই ভয়-ভীতি দেখিয়ে নয়, এঁনারা স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগদান করেছেন।' আর সিপিএমের জোনাল নেতা অচিন্ত্য মল্লিকের বক্তব্য, 'তৃণমূলে যোগ দিলে তবেই জয়ের সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে। এইসব বুঝিয়েই আমাদের জয়ী প্রার্থীদের তৃণমূলে যোগদান করতে বাধ্য করা হয়েছে।'
আরও পড়ুন- সিপিএমের হয়ে জিতেই এই মহিলা যা কাণ্ড বাঁধালেন, দেখে বায়রনও লজ্জা পাবেন!
অন্যদিকে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন বলেন, 'জেতার পর থেকেই লাগাতার হুমকি ও হুঁশিয়ারি চলছে শাসকদলের। তাঁরা আর কী করবে! প্রাণ বাঁচাতে ওঁদের দিকে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা আইনি পথে যাব। ইতিমধ্যেই সেই নিয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।'