প্রতিনিয়ত প্রাণ খোয়ানোর বিপদ আছে জেনেও শুধুমাত্র জীবন-জীবিকার টানে বারবার সুন্দরনের জঙ্গলে যেতে হয় ওঁদের। জঙ্গলের অলিতে গলিতে ওঁত পেতে রয়েছে বিপদ। কার্যত প্রাণ হাতে করে তবুও সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে কাঁকড়া ধরতে যান অনেকে। এবারেও নামখানার এক দম্পতি গিয়েছিলেন সেই গত ৯ জুলাই। গতকালও নদীতে কাঁকড়া ধরছিলেন তাঁরা। তখনই জঙ্গল থেকে এক লাফে প্রৌঢ়ের ঘাড়ে কামড় বসায় বিশালকায় বাঘ। টেনে হিঁচড়ে তাঁকে জঙ্গলে তুলে নিয়ে যায় দক্ষিণরায়। চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারানোর জোগাড় স্ত্রীর। ভারাক্রান্ত মনেই পরে বাড়িতে ফোনে ঘটনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
Advertisment
নিখোঁজ মৎস্যজীবীর বাড়িতে ভিড় প্রতিবেশীদের।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার গণেশ নগর থেকে এক প্রৌঢ় দম্পতি গত ৯ জুলাই কাঁকড়া ধরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন সুন্দরবনের জঙ্গল ঘেঁষা ঠাকুর নদীতে। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। প্রতিদিন ফোনে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা হতো দম্পতির। গতকাল রাতে এক ফোনে যেন পরিবারের লোকেদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অনশ্বর ফকির (৫৬)-এর স্ত্রী ভগবতী ফকির গতকাল রাতে বাড়িতে ফোন করে জানান, নামখানার ঠাকুর নদীর চড়ে কাঁকড়া ধরার সময় হঠাৎই জঙ্গল থেকে একটি বাঘ অতর্কিতে আক্রমণ করে নৌকায়।
অনশ্বর ফকিরের ঘাড়ে কামড় বাসায় বাঘটি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই টানতে টানতে তাঁকে জঙ্গলে নিয়ে যায় দক্ষিণরায়। চোখের সামনে ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য দেখে সংজ্ঞাহীন দশা হয় অনশ্বরের স্ত্রীর। ভারাক্রান্ত মনে পরিবারের লোকজনকে ফোনে সমস্ত ঘটনার কথা জানান তিনি। এরপর পরিবারের সদস্যরা নামখানার ঠাকুর নদীর চরের উদ্দেশে রওনা দেয় বলে জানা গিয়েছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার খবর দেওয়া হয় বনদফতরকেও। ইতিমধ্যে বনদফতরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন বলে জানা গিয়েছে। এরই পাশাপাশি কাকদ্বীপ থানা ও স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকদেরও গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে। বাঘের হামলার এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিপদ জেনেও শুধুমাত্র কর্মসংস্থান না থাকায় আজও ফি দিন প্রাণ হাতে করে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে জীবন বাজি রেখে ছুটে যান উপকূল এলাকার মানুষজন।