'টাইগার জিন্দা হ্যায়'….! তারই প্রমাণ মিলল বাংলার বক্সা টাইগার রিজার্ভে। শেষবার বক্সায় বাঘের দেখা মিলেছিল একুশে। ফের ২ বছর পর ২৩-এর শেষে বাঘের দেখা নতুন আশা নিয়ে এসেছে।
ফের বাঘের দেখা মিলল বক্সা টাইগার রিজার্ভে। দু'বছর আগে বক্সায় বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। তারপরে ২৮ শে ডিসেম্বর, বন কর্মকর্তারা নতুন বছরে প্রাক্কালে 'উপহার' হিসাবে ক্যামেরায় একটি বাঘকে নদীর ঘাট পার হতে দেখে। ঠিক এর তিন দিন পর ৩১ ডিসেম্বর রাতে বাঘটি ধরা পড়ে আরেকটি ভিন্ন ট্র্যাপ ক্যামেরায়।
বক্সা ন্যাশনাল পার্কে বাড়ছে বাঘের সংখ্যা। ট্র্যাপ ক্যামেরায় ওঠা ছবি থেকে এই জঙ্গলে বাঘের অস্তিত্বের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে যা অনুমান, তা হল নতুন বাঘের ছবিই ধরা পড়েছে বক্সার জঙ্গলে। বাঘের সংখ্যা বাড়াতে সবচেয়ে কঠিন যে কাজ হল বক্সার কোর এলাকায় যেসব গ্রাম রয়েছে সেগুলিকে ধীরে ধীরে সেখান থেকে সরিয়ে অরণ্যের পরিধির দিকে আনা। সেই সঙ্গে শিকারের সংখ্যা বাড়ানো।
বক্সা টাইগার রিজার্ভ এবং জাতীয় উদ্যান ৭৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় অবস্থিত। এর উত্তর সীমানা ভুটানের সীমান্ত বরাবর অবস্থিত। বাঘের গতিবিধি নজরে রাখার জন্য বক্সার জঙ্গলের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো রয়েছে ট্র্যাপ ক্যামেরা।
বছরের শেষে বাঘের যে ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তা যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক। প্রথম ছবিতে বাঘকে দিনের বেলায় একটি নদীর কাছে দেখা যাচ্ছে, দ্বিতীয় ছবিটি রাতের। একেবারে ক্লোজ-আপে দেখা গিয়েছে বাঘ-মামাকে।
বক্সা টাইগার রিজার্ভের ফিল্ড ডিরেক্টর অপূর্ব সেন বলেছেন, “এটি সত্যিই একটি ইতিবাচক উন্নয়ন। আমরা এখানে বাঘের জন্য একটি আদর্শ আবাসস্থল তৈরি করার চেষ্টা করছি। ২০২১ সালে যে শেষ বার যে বাঘটিকে দেখা গিয়েছিল সেটি আর সম্প্রতি যে বাঘটিকে দেখা গিয়েছে দুটি ভিন্ন বাঘ বলে মনে হচ্ছে। তবে, আমরা নমূনা মূল্যায়ন করার পরে এই বিষয়ে নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারব"। তিনি আরও জানিয়েছেন গত তিন-চার বছরে এ ধরনের ৯০০টির বেশি হরিণ (শিকার হিসেবে) আনা হয়েছে। আমরা প্রতি বছর প্রায় ৭০ হেক্টর তৃণভূমি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি,”।
উত্তবঙ্গের অতিরিক্ত প্রধান বন সংরক্ষক উজ্জল ঘোষ বলেছেন, অনুপ্রবেশ এবং অনুপ্রবেশ রোধে উদ্যোগ এর পাশাপাশি বাঘের বিচরণের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির দিকেও কাজ করেছি আমরা। আমরা শীঘ্রই মূল এলাকা থেকে কয়েকটি গ্রাম স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছি। যাতে মানুষের উপস্থিতি আরও কমানো সম্ভব হয়"।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে রাজ্যের বন বিভাগ, ভারতের বন্যপ্রাণী সংস্থা এবং জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ বক্সায় "বাঘ বৃদ্ধি এবং পর্যবেক্ষণ প্রকল্প" চালু করা হয়েছিল। ভারতের বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী কে রমেশের মতে, অসমের মানস টাইগার রিজার্ভ এবং ভুটানের বনাঞ্চলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, বক্সায় বাঘের দেখা মেলার অন্যতম কারণ বলেই মনে হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, “বাঘ সর্বদা নতুন আবাস বা অঞ্চল খুঁজে বেড়ায়। ভুটান এবং বক্সার মধ্যে সংযোগ রয়েছে। বক্সায় শিকারী কার্যকলাপ থেকে শুরু করে বনে মানুষের অবাধ প্রবেশ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আমি আশাবাদী যে আরও বাঘ বক্সায় প্রবেশ করবে এবং অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এটিকে তাদের আবাসস্থলে পরিণত করবে। বাইরে থেকে নয়টি বাঘ আনার পরিকল্পনাও রয়েছে” ।