শীলার কোল আলো করে জন্ম নিলো পাঁচ সন্তান। শীলা শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কের বাঘিনী। ১০ মার্চ রাতে সাফারি পার্কের এনক্লোজারে সুস্থভাবেই শীলা জন্ম দেয় পাঁচ সন্তানের। বর্তমানে সন্তান সহ সুস্থই রয়েছে রয়াল বেঙ্গল টাইগার শীলা। নতুন অতিথির আগমনে আনন্দে মশগুল সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। চলছে শীলা ও তার নবজাতকদের ওপর দিনরাত নজরদারি।
যেখানে সারা দেশে বাড়ছে বাঘের মৃত্যুর সংখ্যা, সেখানে তার বিপরীত চিত্র শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে। গত এক বছরে সারা দেশে বাঘের মৃত্যু হয়েছে মোট ১২৬টি। যা বিগত এক দশকের রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। উদ্বিগ্ন পশুপ্রেমীরা। এই উদ্বেগের মধ্যেই অনেকটাই আশার আলো দেখালো শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক।
বেঙ্গল সাফারি পার্কে জন্ম নিলো পাঁচ বাঘ শাবক। পার্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯ টায় প্রথম সন্তান প্রসব করে বাঘিনী শীলা। এরপর রাত ১২ টা ৫০ পর্যন্ত একে একে শীলা জন্ম দেয় মোট পাঁচ শাবকের। এই নিয়ে বাঙিনী শীলা ১১ সন্তানের মা হল। নবজাতকরা মায়ের সঙ্গে থাকায় তাদের লিঙ্গ নির্ধারণ সম্ভব হয়নি।
শিলিগুড়িতে বেঙ্গল সাফারি পার্ক হওয়ার পর পরই ওড়িশার নন্দনকানন থেকে আনা হয়েছিল দুটি রয়াল বেঙ্গল টাইগার স্নেহাশিস ও শীলাকে। এরপর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে বেশ অনেকটাই সময় লাগে। যদিও পরবর্তীতে শীলার সঙ্গে ভাব ভালবাসা গড়ে ওঠে স্নেহাশিসের। সন্তানসম্ভবা হয় শীলা। ২০১৮ সালে স্নেহাশিসের ঔরসে শীলা জন্ম দেয় তিন শাবকের।
আরও পড়ুন- করোনা পরবর্তীতে পর্যটক টানতে সুন্দরবনকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের নাম দিয়েছিলেন ইকা, রিকা, কিকা। পরবর্তীতে স্নেহাশিসকে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আলিপুর চিড়িয়াখানায়। তার জায়গায় আনা হয় পুরুষ রয়াল বেঙ্গল টাইগার বিভানকে। স্নেহাশিস চলে যাওয়ার পর শীলার সঙ্গী হতে খুব একটা বেশি সময় লাগেনি তার। দ্বিতীয়বার সন্তানসম্ভবা হয় শীলা। ২০২০ র ১২ আগষ্ট ভোর ৫ টায় শীলা জন্ম দেয় পাঁচ শাবকের। সব মিলিয়ে শীলা ১১ সন্তানের মা হলেও বর্তমানে জীবিত রয়েছে ১০ টি সন্তান। তার মধ্যে একটি সাদা বাঘ রয়েছে।
বেঙ্গল সাফারি পার্কের অধিকর্তা ডাওয়া সাংমু শেরপা বলেন, 'বয়সজনীত কারণে শীলার সন্তানপ্রসব একটু ঝুকিপূর্ণ ছিল। তাছাড়া গরম পড়ে যাওয়ায় একটু চিন্তার মধ্যেই ছিলাম। সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে শীলা সুস্থভাবেই পাঁচটি সন্তান প্রসব করেছে। বর্তমানে মা ও নবজাতকরা সুস্থই রয়েছে। '
শীলার পাঁচ নবজাতকের জন্মে খুশির হাওয়া বইছে সাফারি পার্কে। শীলার দেখভালের দায়িত্ব পড়েছে সাফারি পার্কের মহিলা কর্মীদের ওপর। সিসিটিভির মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা চলছে মা শিশুদের ওপর নজরদারি। একমুহুর্তের জন্যেও নবজাতকদের কোল ছাড়া করছে না শীলা। সময় সময় তাদের দুধ খাওয়ানো, চেটেচেটে শরীর পরিষ্কার করে দেওয়াই এখন একমাত্র কাজ বাঙিনীর। শীলাকে খাবারের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট। আগামী তিন মাস ব্যাঘ্র শাবকরা তার মায়ের কাছেই থাকবে। পরে দর্শকদের জন্য তাদের খাঁচায় ছাড়া হবে।