মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্প গড়ার আবেদনে সাড়া দিয়ে উত্তর প্রদেশ থেকে জলপাইগুড়িতে এসে সিন্ডিকেটের হুমকির মুখে পড়লেন শিল্পপতি, এবং সদলবলে দ্বারস্থ হলেন প্রশাসনের।
অভিযোগ, জলপাইগুড়ি আমবাড়ি এলাকায় পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের কাছ থেকে তিন একর জায়গা কেনেন উত্তর প্রদেশের গোরখপুরের বাসিন্দা শিল্পপতি অজয় আগরওয়াল। ইচ্ছে, ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিস্কুট ফ্যাক্টরি করার। কিন্তু জমি হাতে পাওয়ার পর ক্যাম্প হাউস করতে গেলেই আসে বাধা। আসতে থাকে তৃনমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি আশ্রিত নেতাদের ক্রমাগত টাকা সহ বিভিন্ন দাবী ও সাথে হুমকি।
তোলাবাজি ও হুমকির অভিযোগে উঠে এসেছে বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য দীপক মন্ডল ও তৃণমূলের আব্বাস আলী, বাচ্চা মিয়াঁ, এবং অলোক রায়ের নাম। তোলাবাজদের বিরুদ্ধে প্রধান কয়েকটি অভিযোগ হলো, প্রথমেই দাবী, ক্যাম্প হাউসের জন্য নগদ ২০,০০০ টাকা দিতে হবে। ক্যাম্প হাউস সহ অন্যান্য কাজও তারাই করবে বলে দাবী করেছে তোলাবাজ গোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, বালি, পাথর, ইট, সিমেন্টও তাদের কাছ থেকে নিতে হবে, তাদের নির্ধারিত দামেই। এবং সবশেষে, মিস্ত্রি-মজুরও নিতে হবে তোলাবাজদের কাছ থেকেই, বদলে মজুর পিছু ২০ টাকা করে পার্টি ফান্ডে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: উলট পুরাণ: জলপাইগুড়িতে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে শতাধিক
ভিনরাজ্যে এসে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অজয়বাবু দ্বারস্থ হন নর্থ বেংগল ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ পালের। তিনি শুক্রবার ওই শিল্পপতিকে সঙ্গে নিয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের দপ্তরে গিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন। অজয়বাবু জানান, "আমার প্রথমে ইচ্ছে ছিলো এই কারখানা আসামে করার। পরে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন পেলাম। প্রাইভেট জমি না কিনে সরকারিভাবে শিলিগুড়ি লাগোয়া আমবাড়ি এলাকায় জমিও কিনলাম। যাতে কোনো সমস্যা না আসে। কিন্তু এখন এসব দেখে আমার সাহস কমে যাচ্ছে। তাই জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে গেলাম।"
সুরজিৎবাবু জানান, "এই ধরনের হুমকি যে আমাদের সদস্যদের পেতে হচ্ছে, আমরা তাও জানিয়ে গেলাম। আমরা রিভিউ মিটিংগুলোতে সাধারনত স্থানীয় সমস্যার কথা জানাই না। এবার আগামী রিভিউ মিটিং-এ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই সমস্যা তুলে ধরবো।"
এ প্রসঙ্গে বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার সাধারন সম্পাদক বাপী গোস্বামী জানান, "এই ঘটনার কথা আমার জানা নেই। তবে তোলাবাজিতে আমাদের কেউ যুক্ত থাকলে কাউকে রেয়াত করা হবে না। অভিযোগ পেলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।" ওদিকে তৃনমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী জানান, "মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ আছে শিল্পপতিদের সবরকম সাহায্য করার জন্য। রাজগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় যাঁদের নাম উঠে আসছে তাঁরা আদৌ আমাদের দলের লোক কিনা তা খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
ভারপ্রাপ্ত জেলাশাসক সুনিল আগরওয়াল জানান, "রাজ্যে শিল্পের প্রসারে উদ্যোগী সরকার। স্থানীয় কিছু সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে এসেছিলেন। অভিযোগপত্র দিয়ে গেলেন। অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।"