Advertisment

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই বাজিমাতে মরিয়া তণমূল, কোন চালে TMC-কে প্যাঁচে ফেলতে মুখিয়ে সিপিএম?

পঞ্চায়েতে মহিলা ভোটারদের বেশি করে নিজেদের পক্ষে টানতে 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পকে হাতিয়ার করে প্রচার তৃণমূলের।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
tmc campaign using lakshmi bhandar project cpm is running counter campaign

লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে ঢাল করে প্রচারে তৃণমূল। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

পঞ্চায়েত ভোটে মহিলা ভোটারদের আরও বেশি করে নিজেদের পক্ষে টানতে 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পকে হাতিয়ার করে জোর প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের অন্য সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা প্রদান নিয়েও তারা সমান তালে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এরই পাল্টা সিপিএম আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা চুরি ও দুর্নীতির নানা 'তথ্য' তুলে ধরে ফ্লেক্স গলায় ঝুলিয়ে গ্রামে-গ্রামে প্রচারে নেমে পড়েছে। ভোটের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শাসক ও বিরোধীদের এমন প্রচার ও পাল্টা প্রচার ঘিরে এখন তপ্ত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর।

Advertisment

তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশেই রাজ্যে চালু হওয়া সামাজিক নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে হাতিয়ার করে প্রচারে নেমেছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। যেহেতু 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প গ্রামের মহিলা মহলে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাই জামালপুরের তৃণমূলের প্রার্থীরা সেই প্রকল্পকে সামনে রেখে প্রচারে বেশি জোর দিয়েছেন। উদ্দেশ্য একটাই, মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক নিজেদের পক্ষে এক-কাট্টা করা। এই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্যই তৃণমূলের প্রার্থীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবী লক্ষ্মীর ছবি-ভাঁড় হাতে বাড়ি-বাড়ি ঘুরছেন।

তবে 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প যে সত্যি সত্যি বিরোধীদের মাথা-ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে তা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য থেকেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছেন, 'বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে মহিলাদের প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।'

publive-image
তৃণমূলের নেতাদের ছবি-সহ ফ্লেক্স বানিয়ে অভিনব প্রচার সিপিএমের। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সোমবার পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির জনসভা থেকে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি দেশের ১২ টা রাজ্যে ক্ষমতায় আছে। তার মধ্যে যে কোনও একটা রাজ্যের সরকার সেখানকার সব মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করে মাসে ২ হাজার নয়, ১ হাজার টাকা করেই দিয়ে দেখাক।' যদি কোনও বিজেপি শাসিত রাজ্যের সরকার এটা করে দেখায় তাহলে রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় নেবেন বলে অভিষেক ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন- ভরা আষাঢ়েও বৈশাখের মেজাজ! দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি নিয়ে হাপহিত্যেশ আর কতদিন?

এদিকে তৃণমূল আর বিজেপি যখন 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প নিয়ে তরজায় ব্যস্ত সেই সময় জামালপুরে সিপিএম প্রচারের হাতিয়ার করেছে তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা চুরি ও দুর্নীতির অভিযোগকে। তা নিয়ে তারা বেশ কিছু ছোট-ছোট ফ্লেক্স তৈরি করেছে। যার কোনওটিতে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের ছবির সঙ্গে লেখা রয়েছে কয়লা চোর, পাথর চোর, বালি চোর। অপর ফ্লেক্সে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষের ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে চাকরি চোর। আর তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে তৈরি ফ্লেক্সে আবার লেখা রয়েছে ১০০ দিনের কাজ চোর।

এছাড়াও রয়েছে, সরকারি কর্মীদের ডি-এ চোর, মিড ডে মিলের চাল চোর এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর টাকা চোর টি-এম-সি লেখা ফ্লেক্স। এরই পাশাপাশি শিক্ষা দুর্নীতিতে বর্তমানে জেলে থাকা বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য সহ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, কালীঘাটের কাকু এবং বহিস্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুর্নীতিগ্রস্তদের তালিকায় ফেলে ফ্লেক্স তৈরি করেছে সিপিএম।

আরও পড়ুন- ভোটের মুখে চরম পরিণতি সিপিএম প্রার্থীর, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল পরিবারের!

গলায় সেইসব ফ্লেক্স ঝুলিয়ে নিয়ে থাকা দলের কর্মী ও নেতাদের সঙ্গে সিপিএম প্রার্থীরা জামালপুরে বাড়ি-বাড়ি প্রচারে যাচ্ছেন। যদিও সিপিএমের এহেন প্রচারকে কোনও গুরুত্ব দিতে চাইছেন না শাসক দলের নেতারা।

তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝি এই প্রসঙ্গে বলেন, “৩৪ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় থেকেও সিপিএম কোনও জনমুখী প্রকল্প চালু করাতো দূরের কথা, কোনও উন্নয়নের কাজও সেভাবে করেনি। বাম আমলে শুধু ছিল গণ হত্যা, ভেঙে দাও- গুঁড়িয়ে দাও আর বনধ ও ধর্মঘটের রাজনীতি। বর্ধমানের সাঁইবাড়ি ও আনন্দমার্গী হত্যাকাণ্ড সহ সিঙ্গুর, নেতাই, নন্দীগ্রাম মরিচঝাঁপির গণ হত্যকাণ্ডের ঘটনার কথা আজও রাজ্যের মানুষ ভোলেননি।'

আরও পড়ুন- ‘খেলায় যেই জিতুক ট্রফি ঘরেই থাকবে’,পঞ্চায়েতে ‘ঐতিহাসিক লড়াই’ দেখার অপেক্ষায় বাংলা!

এদিকে তৃণমূল বিধায়কের এই মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে সিপিএম নেতৃত্বও। সিপিএমের মহিলা সংগঠন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সহ-সভানেত্রী ভারতী ঘোষাল বলেন, 'আমরা চমকের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। বাস্তবেই তৃণমূলের রাজত্বে যে চুরি ও দুর্নীতির রমরমা ঘটেছে সেটা গোটা বাংলার মানুষই জানেন। তাই বাস্তবের এই ঘটনা এবং চুরি দুর্নীতিতে জড়িতদের মুখোশ খুলে দেওয়া ফ্লেক্স বুকে পিঠে ঝুলিয়ে সিপিএম প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন।'

সিপিএমের জামালপুর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র বলেন, 'তৃণমূল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী এই সব প্রকল্পকে সামনে রেখে অভিনব প্রচারে নেমেছে। ঠিক সেই ভাবে আমরাও চুরি ও দুর্নীতিতে জড়িত তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীদের ছবি সহ চুরি দুর্নীতির তথ্য দিয়ে ফ্লেক্স বুকে ও পিঠে ঝুলিয়ে প্রচার চালাচ্ছি।'

panchayat election 2023 bengal panchayat election 2023 CPIM tmc Purba Bardhaman East Burdwan
Advertisment