নেত্রীর গর্ভস্থ সন্তানকে মেরে ফুটবল খেলার শাসানি! জামালপুরে তৃণমূলের হাড়হিম করা কোন্দল

পঞ্চায়েত ভোট যত সামনে আসবে, হিংসা ততই চরমে উঠবে। এমনটাই আশঙ্কা বিরোধীদের।

পঞ্চায়েত ভোট যত সামনে আসবে, হিংসা ততই চরমে উঠবে। এমনটাই আশঙ্কা বিরোধীদের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Jamalpur_Tmc

জয়ী ভূতনাথ মালিক (গলায় মালা)। পাশে অভিযুক্ত তিন তৃণমূল নেতা তবারক আলি মণ্ডল, শেখ শাহাবুদ্দিন (দানি) ও তাপস ডকাল। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

পঞ্চায়েত নির্বাচনের গন্ধ পেয়েই উত্তাপে ফুটছে বাংলা। সেই উত্তাপের অংশ হিসেবে দলীয় নেত্রীকেই হাড়হিম করা কায়দায় শাসানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের তিন নেতার বিরুদ্ধে। অন্তঃসত্ত্বা নেত্রী ও তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে হত্যা করে দেহ নিয়ে ফুটবল খেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সন্ত্রস্ত নেত্রী ঘটনার পরেই জামালপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বিরোধীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই চরমে উঠছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যদিও তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত তিন তৃণমূল নেতা। তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক কারণে ফাঁসাতেই দায়ের করা হয়েছে মিথ্যে অভিযোগ।

Advertisment

অভিযোগকারিণী নেত্রী চৈতালী হাত পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্য। এতদিন মেহমুদ খান জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। দল মেহেমুদ খানকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি করার পর তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। শুক্রবার ছিল পঞ্চায়েত সমিতির নতুন সভাপতি নির্বাচন। সেই নির্বাচনে চৈতালি হাতদের পক্ষে মনোনীত প্রার্থী ছিলেন অরবিন্দ ভট্টাচার্য। আর মেহেমুদ খান তাঁর অনুগত ভূতনাথ মালিককে প্রার্থী করেছিলেন।

publive-image
তৃণমূল নেত্রী চৈতালি হাত (বাম দিকে)। জামালপুর থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগপত্র। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

চৈতালী হাতের দাবি, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। তার পরও সভাপতি নির্বাচনের ভোটাভুটিতে অংশ নিতে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টায় সমিতিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ভোটাভুটির সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় নির্বাচন প্রক্রিয়া বয়কট করে সঙ্গীদের নিয়ে তিনি সমিতির ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। ওই সময়ে বিডিও অফিস চত্বরেই তাঁকে দেখে গালাগাল দেওয়া শুরু করে মেহেমুদ খান গোষ্ঠীর তিন তৃণমূল নেতা তবারক আলি মণ্ডল, সেখ শাহাবুদ্দিন ওরফে দানি ও তাপস ডকাল। অভিযুক্তরা তাঁকে মারধর করতেও উদ্যত হয়। তিনি গর্ভবতী জানার পর তাঁকে ও তাঁর গর্ভের সন্তানকে খুন করে দেহ নিয়ে ফুটবল খেলারও হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিডিও অফিসে হাজির পুলিশ আধিকারিকরা তাঁদের গাড়ি করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

Advertisment

এই প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'আমাকে কেউ কোনও অভিযোগ জানায়নি। তবে আমি খোঁজ নেব।' যদিও এই সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আইএনটিটিইউসির ব্লক সভাপতি তবারক আলি মণ্ডল। তিনি দাবি করেন, 'শুক্রবার এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। গোটা বিডিও অফিস চত্বর পুলিশে ছয়লাপ ছিল। আসলে ভোটাভুটিতে ভূতনাথ মালিক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ওঁদের মুখ পুড়েছে। তাই এইসব মিথ্যা অভিযোগ তুলে ওঁরা মান বাঁচানোর চেষ্টা করছে।' সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ভূতনাথ মালিক দাবি করেন, 'চৈতালি হাতদের পক্ষে ছিলেন মাত্র ১৪ জন সদস্য। আর আমাকে ২২ জন্য সদস্য সমর্থন করেছেন। পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই চৈতালি হাত-সহ তাঁদের পক্ষের সবাই ভোটাভুটি এড়িয়ে সমিতির ঘর থেকে বেরিয়ে যান। পরাজয়ের গ্নানি ঢাকতে চৈতালি হাতকে দিয়ে এমন মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছেন ওঁর পক্ষের নেতারা। এটা মুখরক্ষা কৌশল।'

আরও পড়ুন- পার্টি লাইন বাঁচাতে থানায় ছুটল সিপিএম! পতাকা হাতে সমর্থকদের তকমা দিল ‘বিজেপির লোক’

এদিকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচন নিয়ে জামালপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল একেবারে প্রকাশ্যে চলে আসায় উৎফুল্ল বিজেপি। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এখনই তৃণমূলের অন্তঃসত্ত্বা সদস্যাকে খুন করে ফুটবল খেলবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া শুরু করে দিয়েছে তৃণমূলের লোকজন। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হয়ে যাবার পর তাহলে কী পরিস্থিতিই না তৈরি হবে! তৃণমূলের লোকজন নিজেরা লড়াই করেই দলটার অস্তিত্ব মুছে দেবে।' এমনটাই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন ওই বিজেপি নেতা।

panchayat vote tmc Violence