বিক্ষোভের নামে সরকারি সম্পত্তির ভাঙচুর ঠেকাতে এবার উত্তরপ্রদেশের যোগী মডেল অনুসরণের পথে হাঁটল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে তৃণমূলের প্রচার ছিল বহিরাগতদের বিরুদ্ধে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের প্রথমসারির অনেক নেতারই অভিযোগ ছিল, উত্তরপ্রদেশ থেকে ট্রেনে-বাসে চাপিয়ে গুন্ডা আনছে বিজেপি। আর, তাদের দিয়ে বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা চলছে। বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংসের চেষ্টা হচ্ছে। সেই অভিযোগ তোলার দু'বছর যেতে না-যেতেই ঘটল উলটপুরণ।
উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের লাইনই সরকারি সম্পত্তি রক্ষার জন্য বেছে নিল বাংলার সরকার। আইন সংশোধন করল। যে আইনে উত্তরপ্রদেশের কায়দায় সরকারি সম্পত্তি নষ্টকারীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিলামে তুলে ক্ষতিপূরণ আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এর আগে, সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভ রুখতে একই কায়দা প্রয়োগ করতে দেখা গিয়েছিল যোগী সরকারকে। ২১ ফেব্রুয়ারি এই সংশোধনী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হয়েছে। বিলটির নাম 'ওয়েস্ট বেঙ্গল মেইনটেন্যান্স অফ পাবলিক অর্ডার (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০২৩'।
এই আইনের বলে, সরকারি এবং বেসরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে, লুঠপাট করলে, সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ করলে অভিযুক্তদের থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে। সেই ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পূরণের চেষ্টা করতে পারবে সরকার। ১৯৭২ সালের এই সংক্রান্ত আইনে বলা ছিল অধিগৃহীত সম্পত্তি সরকার নিলাম করে অর্থ আদায় করতে পারবে। সেই আইনই সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, বিক্ষোভের মুখে সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হলে ৬০ দিনের মধ্যে স্থানীয় আদালতে অভিযোগ জানিয়ে করতে হবে ক্ষতিপূরণের আবেদন। সেই আবেদনের ১৮০ দিনের মধ্যে অন্তর্বতী একটি নির্দেশ দেবে আদালত। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি অথবা সংগঠনকে জবাবদিহির সুযোগ দেওয়া হবে। সব পক্ষের শুনানির পর আদালত এই বিষয়ে রায় দেবে।
আরও পড়ুন- যোগী আদিত্যনাথ তাঁর মাফিয়ারাজ খতমের শপথ নিয়েছেন, কে এই আতিক আহমেদ?
গত মাসেই ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। একমাসেরও বেশি সময় ধরে সিদ্দিকি জেলে আছেন। এর আগে গত বছর, শহর কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিজেপি কর্মীরা নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং, নবান্ন অভিযান করেছিলেন। সেই সময় ব্যাপক সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। আগামী দিনে এমন ঘটনা রোখার জন্য যে যোগী মডেলই ভরসা, আইনের সংশোধনী সেটাই যেন প্রমাণ করে দিল।