প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার পর এবার ১০০ দিনের কাজের টাকা পেয়ে বিতর্কে জড়ালেন বিত্তশালী তৃণমূল নেতা। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের তৃণমূল নেতা জাহাঙ্গির শেখ এখন যেন সরকারি যে কোনও প্রকল্পের সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার একজন ’রোল মডেল’ বনে গিয়েছেন। বিরোধীরাও তাঁকে নিয়ে কম গলা ফাটাচ্ছে না। কিন্তু তাতে আর কি যায় আসে। বিশাল অট্টালিকার মালিক জাহাঙ্গির শেখের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালাকাতে থাকা নিয়ে হইচই কম হয়নি। আর এবার বিরোধীরা প্রকাশ্যে আনল,’২০২০ সালে ১০০ দিন প্রকল্প থেকে সরাসরি জাহাঙ্গির শেখের অ্যাকাউন্টে চারটে কাজের জন্যে মজুরি ঢুকেছে। এমনকি তাঁর পরিবারের আরও ৩ সদস্য ১০০ দিন প্রকল্প থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন। যা নিয়ে বাম ও বিজেপি উভয়েই এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে ।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বাংলাকে ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না বলে প্রতিনিয়ত অভিযোগ কর যাচ্ছেন রাজ্যের শাসক দলের নেতারা । এ নিয়ে তারা মিটিং মিছিলও করে যাচ্ছেন পুরোদমে। এমন সময়ে খণ্ডঘোষের শাঁকারি ১ অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি ও পঞ্চায়েতের সদস্য জাহাঙ্গিরের কীর্তি ফাঁস হয়ে যাওয়াও তৃণমূল যেন একটু বিড়ম্বনায় পড়ে গিয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ,“বিশাল রাজপ্রাসাদ তুল্য চারতলা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও জাহাঙ্গির শেখের নাম যখন ইন্দিরা আবাস যোজনার তালিকায় ওঠে সেই সময়ে তিনি ছিলেন শাঁকারি ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান। সেই তিনিই আবার কোভিড অতিমারির সময় ১০০ দিন প্রকল্পের কাজ থেকে টাকা ‘তুলে’ নিয়েছেন। বিরোধীদের দাবি, শাঁকারি ১ পঞ্চায়েতের ১০০ দিন প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, ৮ নম্বর সংসদের জন্যে ২০২০ সালের ২৮ জুন থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চারটে কাজের জন্যে ৩৯ দিন কাজের অনুরোধ জানিয়েছিল জাহাঙ্গির। কাজ পেয়েছিল ৩৬ দিন, আর ব্যাঙ্কে টাকা ঢুকেছে ৫৪০০! জাহাঙ্গিরের স্ত্রী সীমা শেখ ৩৭ দিন কাজ করে ৬৫৭০ টাকা পেয়েছেন। এ ছাড়াও তাঁর দুই আত্মীয়ও ১০০ দিন প্রকল্পে কাজ করে টাকা মজুরি পেয়েছেন।
আরও পড়ুন বিজেপি সাংসদ-বিধায়কদের জিভ ছিড়েঁ দেওয়ার হুমকি, তৃণমূল জেলা সভাপতির মন্তব্যে তুলকালাম
গ্রামবাসীদের অনেকে বলেন, উপপ্রধান থাকা কালে জাহাঙ্গির শেখ ১০০ দিন প্রকল্পে কাজ করছেন, এমনটা তাঁরা কোনও দিন দেখেননি। আর ওই পঞ্চায়েতের প্রধান বিলকিস সিদ্দিকি এখন বলছেন,“আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি কোনও অনৈতিক কাজ হয়ে থাকে, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গ্রামবাসীদের অনেকে বলেন, খণ্ডঘোষের কেশবপুর ছাড়াও বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জাহাঙ্গিরের বাড়ি রয়েছে। এমন বিত্তশালী জাহাঙ্গিরের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে জেনে তখন গ্রামের সবাই চমকে গিয়েছিল। শুধু জাহাঙ্গির নয় তাঁর পরিজনদের নামও সরকারি আবাস যোজনার তালিকায় রয়েছে বলেও গ্রামের সবাই জানতে পারে । আর এবার জানা যাচ্ছে,জাহাঙ্গির-সহ তাঁর পরিবারের লোকজন নাকি ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে টাকা পেয়েছে । অথচ গ্রামের কেউ তাঁদের কাউকে কোনও দিন ১০০ দিনের কাজ করতে দেখেননি।
এবিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও জাহাঙ্গির শেখ ফোন ধরেননি। খণ্ডঘোষের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমার কিছু জানা নেই। তবে সত্যিই যদি জাহাঙ্গির উপপ্রধান থাকা কালে ১০০ দিন প্রকল্পের কাজ করেন, সেটা কাম্য ছিল না।” ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের সমালোচনা করতে ছাড়েনি সিপিএম ও বিজেপি নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষের স্পষ্ট অভিযোগ, “গরিবদের বঞ্চিত করে ওই তৃণমূল নেতা কাজ না করেই কার্যত ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা লুট করেছেন। এটা লজ্জার। “ আর বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “এখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের রাজত্বে কারা ১০০ দিনের প্রকল্পের প্রকৃত শ্রমিক!" মৃত্যুঞ্জয়বাবু প্রশ্ন, এমন সব ব্যক্তির টাকা আটকে রয়েছে বলে দাবি করে কি তৃণমূল পথে ঘাটে চিৎকার করছে ?