নিজের ১৮ দিনের সদ্যোজাত পুত্র সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন অভাবী মা। আর সেই সদ্যোজাত সন্তানকে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে এলাকার এক ব্যবসায়িক দম্পতি বিরুদ্ধে কেনার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানতে পেরে মধ্যস্থতার মাধ্যমে ওই ব্যবসায়ী দম্পতির কাছ থেকে সদ্যোজাত শিশুটিকে নিয়ে পুনরায় তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন এলাকার এক তৃণমূল নেতা। কিন্তু ওই অভাবী গৃহবধূর নেওয়া দেড় লক্ষ টাকার একটা অংশ ওই তৃণমূল নেতা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পিপলা গ্রামে। যদি ওই তৃণমূল নেতার বক্তব্য তিনি কোনও টাকা নেননি ওই ব্যবসায়ী দম্পতিকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি কুড়ি হাজার টাকা পরবর্তী গৃহবধূ ফিরিয়ে দিবে বলো জানানো হয়।
উল্লেখ্য, মালদার চাঁচল মহকুমার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পিপলা গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী দাস। স্বামী ভিন রাজ্যে কর্মরত। স্ত্রী, ছেলের জন্য ঠিক ভাবে টাকা পাঠাতে পারেন না ওই গৃহবধূর স্বামী। এসবের মধ্যেই চলতি বছর ১ নভেম্বর হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে আরেকটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় লক্ষীদেবী। কিন্তু বাড়িতে এতই টাকার অভাব যে সদ্যোজাতের প্রয়োজনীয় কোনও খাবার বা সামগ্রি কেনার ক্ষমতা নেই লক্ষীদেবীর।
গৃহবধূ লক্ষ্মী দাস জানিয়েছেন, স্থানীয় বিনোদ আগরওয়ালা নামে এক ব্যবসায়ীর কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু কোনও পুত্র সন্তান নেই। ওই দম্পতিই লক্ষ্মীর সদ্যোজাত পুত্র সন্তানকে টাকার বিনিময়ে কিনে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাই অভাবী লক্ষীদেবী দেড় লক্ষ টাকার বিনিময় তার সদ্যজাতকে তুলে দেন আগরওয়ালা দম্পতির কাছে। কিন্তু সেই খবর জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়।
এরপরই বিষয়টি জানা হয়। তারপরই হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল নেতা দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায় গত বৃহস্পতিবার ওই সদ্যোজাতকে ব্যবসায়ী বিনোদবাবুর কাছ থেকে নিয়ে আবার লক্ষ্মী দাসের হাতে তুলে দেন। কিন্তু অভিযোগ ওই দেড় লক্ষ টাকা দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায় জোর করে নিয়ে নেন লক্ষ্মীদেবীর কাছ থেকে। পরবর্তীতে গ্রামে এনিয়ে সালিশি সভা হলে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা ফেরৎ দেন। কিন্তু বাকি ৩০ হাজার টাকা আর দেননি।
যদিও ওই তৃণমূল নেতা দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি করেছেন, তিনি শুধু শিশু বিক্রি আটকেছেন। কোনরকম টাকার বিষয় তিনি জানেন না। অন্যদিকে লক্ষ্মী দাস নিজের মুখে স্বীকার করে নিয়েছেন সদ্যোজাতকে পুত্র সন্তানকে ব্যবসায়ী দম্পতির কাছে বিক্রির কথা। লক্ষ্মী দাস জানিয়েছেন, সংসারে অত্যন্ত অভাব। ঠিক ভাবে খাবার জোটে না। স্বামিকে টাকা পাঠাতে বললে স্বামীও পাঠায় না। তাই সে বাধ্য হয়েছিল সদ্যজাত পুত্রসন্তানকে বিক্রি করতে। যদিও ওই ব্যবসায়ী বিনোদ আগরওয়ালা সমগ্র ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন। সমগ্র ঘটনা সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে।
এব্যাপারে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, শিশু বিক্রির কোনও অভিযোগ নির্দিষ্টভাবে দায়ের হয়নি। অভিযোগ হলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।