Mamata Banerjee On Brother Babun Banerjee: ছোটভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (বাবুন) সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার শিলিগুড়িতে মমতা সাফ বলেন, 'আমি যে দিন থেকে দল করি, কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে কাজ করি। আমার পরিবার বলে কিছু নেই। মা মাটি মানুষই আমার পরিবার। আমাদের পরিবারে রক্তের সম্পর্কে ৩২ জন সদস্য। কেউ এ রকম নয়। এতে সবাই ক্ষুব্ধ। আমি সরাসরি বলছি, যারা বেশি বড় হয়ে যায়, তাদের লোভও বেড়ে যায়। ওকে পরিবারের সদস্য বলেই আমি মনে করি না। সব সম্পর্ক ছেদ।'
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, 'ওরা (বিজেপি) পরিবারতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু আমি পরিবারতন্ত্র করি না। যে যেখানে ইচ্ছে ভোটে লড়তে পারে। আমার কিছু যায় আসে না। যাঁর নাম করছেন তাঁর অনেক কাজই আমার পছন্দ নয়, তবে মেনে নিতে হচ্ছিল এতদিন। ও ছোটবেলা ভুলে গিয়েছে। যখন বাবা মারা গিয়েছিলেন তখন ওঁর বয়স মাত্র আড়াই বছর ছিল, দুধ বিক্রি করে মানুষ করেছি। ভোট আসলেই এসব করে। অনেক অশান্তি সহ্য করেছি, আর নয়।'
আরও পড়ুন- Babun Banerjee: ‘দিদি’ মমতার কড়া সিদ্ধান্ত, নিমেষে ভোলবদল ‘ভাই’ বাবুনের
রাজনীতিকে কেন্দ্র করে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারে ভাঙল ধরল। টিকিট না মেলায় ও হাওড়া থেকে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করায় ক্ষোভ উগরে দেন মমতার ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্য়ায়। নির্দল হয়ে হাওড়া থেকে ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেন। দাবি করেন, বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও তিনি গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'ও (বাবুন) তো স্বীকারই করে নিয়েছে যে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এর পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে। ওরা ২৫,৩০ কোটি দিয়ে এ ধরণের খেলা খেলে।'
তৃণমূল নেত্রীর আর্জি, 'আমাকে ভালোবাসলে হাওড়া থেকে তৃণমূল প্রার্থী পদ্মশ্রী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতান। দলের নেতা, কর্মীদের আজ থেকে দায়বদ্ধতা আরও বেড়ে গেল।'
আ
টিকিট না মেলায় ক্ষোভের আগুন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েদর পরিবারেই। ‘বিদ্রোহী’ তৃণমূল নেত্রীর ছোট ভাই স্বপণ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুন! কলকাতা ছেড়ে ইতিমধ্যেই দিল্লিতে তিনি। জল্পনা বিজেপিতে যোগদান করতে পারেন স্বপণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে প্রার্থী হয়ে লড়াইয়ের হুঙ্কারও ছেড়েছেন তিনি। তবে অসন্তোষের মধ্যেও দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ভগবান’ বলেই উল্লেখ করেন ছোটভাই বাবুন।
বাঁকুড়ায় প্রার্থী না করায় তৃণমূলের সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিমানের কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন। প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পরায় ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ অর্জুন সিং-ও ক্ষুব্ধ। এবার সেই তালিকায় যোগ হয় মমতার পরিবারের স্বপণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পর্কে যিনি মুখ্যমন্ত্রীর ছোট ভাই। কেন? স্বপণের নিশানায় হাওড়ায় তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও হাওড়া থেকে তৃণমূলের বাজি গত দু’বার ওই কেন্দ্র থেকে জয়ী এই প্রাক্তন ফুটবলারই। প্রসূনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ মমতার ভাইয়ের।
কীসের অভিযোগ? বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে ফোনে স্বপণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যে মানুষটা হাওড়ায় প্রার্থী হয়েছেন, সেই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় মোহনবাগান ক্লাবের এজিএমের সময় আমাকে গলাধাক্কা দিয়েছিলেন। আমাকে অপমান করেছিলেন। তাঁকে নিয়ে আমার প্রচুর অ্যালার্জি আছে। হাওড়ার মানুষ ওঁকে মেনে নিচ্ছেন কি না জানি না। কিন্তু আমি বলতে পারি, এই প্রার্থী ঠিক হয়নি। ওঁর যোগ্যতা নিয়ে আমার সংশয় আছে। আমি মনে করি, যে ক্লাস ফাইভ পাশ করতে পারে না। তাকে গ্র্যাজুয়েশন করানো হচ্ছে। এমপি ল্যাডের টাকা এলাকার মানুষের জন্য ঠিকমত খরচ করতে পারেননি, কোনও কাজ হয়নি। প্রসূনের থেকে অনেক ভাল প্রার্থী ছিল। ওর মতো বাজে লোককে না দেওয়াই উচিত ছিল।’
ভাই স্বপণ কি প্রসূণকে নিয়ে তাঁর ক্ষোভের কথা দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন? জবাবে স্বপণ বলেন, ‘কিছু জিনিস জানিয়েও লাভ হয়নি। প্রথম থেকে বলা হয়েছে ওঁকে বাদ দিয়ে অন্যকে প্রার্থী করলে হাওড়ার মানুষ অন্যভাবে গ্রহণ করবেন। অরূপ রায়, রাজীব ব্যানার্জী, রাজা চ্যাটার্জীদের দাঁড় করানো হলে ভাল ফলফল হত।’
স্বপণের সাফ কথা, ‘দিদি যতদিন বেঁচে আছে বিজেপিতে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যাইনি কখনও, যাবও না। ১৯৮১ সাল থেকে দলের সঙ্গে জড়িয়ে। দিদি যতদিন আছে আমি কোথাও যাব না।’ তবে তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর, ফুটবল প্রশাসক কল্যাণ চৌবে, পিটি উষাদের যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বপণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনীতির যোগ নয়, ক্রীড়া প্রশাসক হওয়ার কারণেই এই যোগাযোগ বলে জানিয়েছেন তিনি।
এরপরই স্বপণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি হাওড়ার ভোটার হয়েছি। নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়াব। দিদিমনির সঙ্গে সরাসরি কথা বলব। দিদি আমার কাছে ভগবান। দিদির কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। দিদির কাছে আশীর্বাদ চাইব। দিদি হয়তো আমাকে না করবে। কিন্তু আমি দিদিকে বোঝানোর চেষ্টা করব কেন দাঁড়াচ্ছি।’