Advertisment

লালঝান্ডা হাতে CPIM-এর মিছিলে বৃদ্ধা, আছড়ে মারল তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য ছেলে

সঙ্ঘাতিক অবস্থা...

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
chaos at kamarhati cooperative credit society election

সমবায় ভোট ঘিরেও অশান্তি চরমে।

গ্রামে পদযাত্রার আয়োজন নিয়ে ছিল উচ্ছাস। স্বাভাবিকভাবেই আবেগ বাঁধ মানেনি বৃদ্ধা শিখা লেটের। লালঝান্ডার প্রতি তাঁর দীর্ঘদিনের ভালবাসা। তাই হাতে তুলে নিয়েছিলেন লালঝান্ডা। গোটা পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন দিন বদলের স্বপ্ন নিয়ে। এই ছিল বৃদ্ধা মহিলার 'অপরাধ'। তারই খেসারত দিলেন নিজের ছেলের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে। মারের চোটে শিকাদেবীর কোমড়ে ও পায়ে গুরুতর চোট রয়েছে। অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন বৃদ্ধা।

Advertisment

হামলাকারি কে? শুনলে চমকে যেতে হয়। নিজের ছেলেই তার মায়ের উপরএমন পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছে। কেন? ছেলে যে গাঁয়ের মাতব্বর। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। তাই মায়ের অন্য দলের ঝান্ডা ধরায় রাগ সপ্তমে শুখা লেটের ছেলের। শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মা দ্বারস্থ হয়েছেন পুলিশের। লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ঘটনা শনিবার দুপুরের বীরভূমের মাড়গ্রাম থানার দুনিগ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামের। সেখানেই গত বৃহস্পতিবার হয়েছিল সিপিআইএমের 'চোর তাড়াও, গ্রাম জাগাও' পদযাত্রা। ওই পদযাত্রায় স্বামী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে সামিল হয়েছিলেন শিখা লেট। তাতেই চরম আপত্তি শিখা লেটের বড় ছেলে বিধান লেটের। কারন সে যে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য।

পঞ্চায়েতে লুটে খাওয়ার রেওয়াজের অন্যথা হয়নি দুনিগ্রাম পঞ্চায়েতেও। সেই চুরির প্রতিবাদে হওয়া পদযাত্রায় সামিল হয়েছেন তারই ঘরের লোকেরা। যা মানতে পারেননি বিধান লেট। শনিবার দুপুরে মাকে আচমকা মারধর শুরু করে সে। বড় ছেলে মদ্যপ অবস্থায় মারধর করেছে বলে অভিযোগ শিখাদেবীর। ছেলের হাতে মার খাওয়ার পর যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে মাড়গ্রাম থানায় হাজির হন বৃদ্ধা।ছিলেন গ্রামের অনেককেই।

থানায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে শিখা লেট বলেন, 'লালঝান্ডার মিছিল হচ্ছে দেখে আনন্দ হয়েছিল খুব। তাই মিছিলে চলে গিয়েছিলাম। এরজন্যই আমার বড় ছেলে আমার গলা টিপে ধরে , লাথি মারে। তারপর তুলে আছাড় মারে। আমার কোমড়, পায়ে খুব যন্ত্রনা করছে। আমি দাঁড়াতে পারছি না। সোজা হতে পারছি না।' বৃদ্ধার দাবি, 'ছেলে আমার সঙ্গে থাকে না। আমাকে দেখেও না। আমার তিন বিঘা সম্পত্তিও নিয়ে নিয়েছে আগেই।'

মাকে নিয়ে থানায় যাওয়া বৃদ্ধার ছোট ছেলে শ্রীধন লেটও সামিল হয়েছিলেন পদযাত্রায়। তিনি বলেন, 'দাদা তৃণমূলের দুনিগ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। খুব দাপট দেখায়। মাকে দেখে না। বের করে দিয়েছে। মা আমার কাছেই থাকে। কষ্ট করেই মা ও অসুস্থ বাবাকে নিয়েই আমাদের সংসার চালাতে হয়। এদিন দুপুরে হঠাৎ আমার ছোট ছোট দুই ছেলে এসে মাকে মারার খবর দেয়। আমি ছুটে গিয়ে দেখি এই কান্ড।'

আক্রান্ত বৃদ্ধাকে নিয়ে থানায় ছুটে আসেন সকলে। কিন্তু অভিযোগ, তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর নিতে টালবাহানা করে পুলিশ। শরীরে যন্ত্রনা নিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় বৃদ্ধাকে। থানা থেকেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বসোয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে শিখা লেটের।

সিপিএম নেতা সঞ্জীব বর্মন বলেন, 'ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত থেকে ব্লক, মহকুমা পর্যন্ত প্রতিবাদ হবে। তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।' অভিযুক্ত তৃণমূল সদস্য বিধান লেটের দাবি, 'সিপিএম-তৃণমূলের কোনও ব্যাপারই নয়। আমার বউয়ের সঙ্গে অশান্তি হচ্ছিল মায়ের। আমি দু'জনকেই বকাবকি করে চুপ করতে বলি। তারপর হয়ত মা ঘরে ঢুকতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে। মা মিছিল করেছে আমি জানিই না।' জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

tmc CPIM Birbhum
Advertisment