নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে জেরবার তৃণমূল। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে দলের দুই যুব নেতা গারদে। প্রমাদ গুনছে শাসক দল। পাল্টা আক্রমণে বাম আমল সুপারিশে
চাকরির তথ্য-তালাশ শুরু করেছে জোড়া-ফুল শিবির। এই অবস্থায় দলের বিধায়ায়কের ভাইরাল লেটারহেড ঘিরে অস্বস্তির মাত্রা বাড়ল তৃণমূলের। বর্ধমান উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিকের একটি লেটারহেড ভাইরাল হয়েছে। দেখা যাচ্ছে সেই লেটারহেডে তৃণমূল বিধায়ক প্রাথমিকে চাকরির জন্য সরাসরি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সুপারিশ করেছেন।
ভাইরাল ওই লেটারহেডটি ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বরের। দেখা যাচ্ছে ওই চিঠির বিষয়ের স্থানে মোটা হরফে লেখা হয়েছে প্রাথমিকে স্কুলে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের সুপারিশ। তালিকায় নাম রয়েছে মোট ১১জনের। প্রত্যেকের নাম ও রোল নম্বর সহ চাকরির জন্য সুপারিশ করে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থকে চিঠি ওই চিঠি লিখেছিলেন শাসক দলের বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক। ১১জন চাকরিপ্রার্থীরা প্রশিক্ষিত না অপ্রশিক্ষিত, সেই কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা রয়েছে। চিঠিটির বক্তব্যের নিচে রয়েছে বিধায়কের স্ট্যাম্প ও সই।
২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৪ সালের টেট পাশ প্রশিক্ষিতদের সাড়ে ১৬ হাজার আসনে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২৩ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আর তারপরই ডিসেম্বরে বিধায়কের লেটারহেডে ১১ জনের নাম শিক্ষকের চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিলেন বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক।
এই চিঠির বিষয়ে তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ মালিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন ,'নানা দাবি ও সমস্যা নিয়ে আমার কাছে অনেক মানুষজন আসেন। তাঁদের দাবিগুলি মন্ত্রীদের কাছে চিঠি আকারে পাঠিয়ে দিয়ে থাকি। আড়াই বছর আগে কোন চিঠিতে কী লেখা হয়েছিল তা আমার মনে নেই। ওই চিঠিটা যে আদৌ আমার লেখা ও আমিই পাঠিয়েছি, তারই বা কী নিশ্চয়তা রয়েছে? আর চিঠি দিয়ে কারওর নাম পাঠানো মানেই তো চাকরি হয়ে যাওয়া নয়। চাকরি সংশ্লিষ্ট দফতর তাদের নির্দিষ্ট পদ্ধতি মোতাবেক ঠিক করে।'
জেলা সিপিআইএম নেতৃত্ব এই চিঠি নিয়ে তদন্তের দাবি করেছে । দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'চাকরির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছে তৃণমূলের রথী-মহারথীরা। টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছে। আর যোগ্য প্রার্থীরা পথে অনশন করছে।' বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, 'চিটিতে তৃণমূল বিধায়ক যে দুজনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন তা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে। সেই দু’জনের চাকরি নিশ্চই হয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে ২০২০ সালের প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও চুড়ান্ত দুর্নীতি হয়েছে। এরও তদন্ত হওয়া দরকার।'
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সব শুনে বলেন, 'বিধায়ক আদৌ ওই চিঠি পাঠিয়েছিলেন, নাকি তাঁর প্যাড ব্যবহার করে কেউ তাকে অপদস্থ করার জন্যে এইসব করেছে সেই বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার দরকার আছে। তবে বিষয়টি যখন আমার কানে এসেছে আমি সবিস্তার খোঁজ নেব। ঠিঠির সত্যতা থাকলে দল নিশ্চিতভাবে পদক্ষেপ করবে।'