শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি এবং লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস ইস্যুতে ইডি কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগে যে অভিযোগ করেছিলেন, সেই একই অভিযোগের সুর বজায় রেখে বুধবার অভিষেক বলেন, 'ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় বৈঠকে যাতে থাকতে না-পারি, সেই জন্য এই তলব করা হয়েছে। সব দল ছেড়ে বেছে বেছে আমাকে তলব করা হল। মহামান্য বিচারপতি আমাকে ডাকতে বলেছিলেন। আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি ইডির দফতরের বাইরে ইডি কর্তাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছি, আমি আজকে যে স্টেটমেন্ট দিয়েছি, তা কালকে বিচারপতির সামনে পেশ করুক।'
অভিষেক অভিযোগ করেন, 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এই তলব করা হয়েছে। ধূপগুড়িতে হারের প্রতিহিংসা মেটাতে আমাকে তলব করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের নির্যাস আগে জিরো ছিল, এখন মাইনাস টু। আসলে, ইন্ডিয়া গঠনে তৃণমূলের ভূমিকায় ভয় পাচ্ছে বিজেপি। ইডির জিজ্ঞাসাবাদ পুরোপুরি সময় নষ্ট। আমাকে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে যাতে উপস্থিত হতে না-পারি, সেজন্যই এই সময় ডাকা হয়েছিল। আজ দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক ছিল। আমি তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করেছি। যেহুতু তদন্তকারীদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছি, সেই কারণে সেসব কথা এখানে জানাতে পারছি না।'
অভিষেক অভিযোগ করেন, 'আপনি বিজেপিশাসিত কোনও রাজ্যে ইডি বা সিবিআইয়ের কোনও তদন্ত দেখবেন না। ইডি এবং সিবিআই অবিজেপিশাসিত রাজ্য়েই কেবল তদন্ত করে। হিমন্ত বিশ্বশর্মার নাম সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন উল্লেখ করেছেন। কিন্তু, ইডি তাঁকে দেখবেন ডাকে না। শুভেন্দু অধিকারীকে নারদা কেলেঙ্কারিতে টিভির সামনে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। ইডি দেখবেন, তাঁকেও ডাকে না। সারদা মামলা ১০ বছর ধরে চলছে। কোনও ফলাফল দেখতে পাবেন না।' অভিষেক বলেন, 'বিচার ব্যবস্থার প্রতি নতমস্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, যাঁরা মেরুদণ্ড বিক্রি করে অন্য দলে গিয়েছে, তাঁদের ডাকা হচ্ছে না।'
ইডির তলবে সাড়া দিয়ে বুধবার সকাল প্রায় সাড়ে ১১টায় সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা প্রাথমিকে নিয়োগ কেলেঙ্কারি মামলায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। রাত ৮টা ৪৫ নাগাদ তিনি ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে আসেন। মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। সূত্রের খবর, দুপুর ১২টা ১০ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়েছিল। আধ ঘন্টা পর অভিষেকের দেওয়া বয়ান নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল বৈঠক করে। তারপর থেকে তাঁকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেন, 'দেশের আইন সকলের জন্য সমান। কিন্তু, আজ পর্যন্ত কোনও বিচারপতি ক্যামেরার সামনে যাঁদের টাকা নিতে দেখা গেছে, তাঁদের তলব করতে বলেননি। আমি কিছু বললে, সেটা ভুল হতে পারে। কিন্তু, কাউকে যদি ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে দেখা যায়, তা তো আর অস্বীকার করা যায় না! দেশের আইন অভিষেকের জন্য একরকম, তৃণমূলের জন্য একরকম, সিপিএমের জন্য একরকম, বিজেপির জন্য একরকম, এটা তো হতে পারে না।'
আরও পড়ুন- লিপস অ্যান্ডস বাউন্ডসের সিইও পদে এখনও আছি, সিজিওতে দাঁড়িয়ে সাফ বললেন অভিষেক
অভিষেক বলেন, 'তদন্ত ঠিকমতো চলছে না। আমার বিরুদ্ধে কোনও তথ্য থাকলে, ইডি আদালতে সেই তথ্য পেশ করুক। আমাকে গ্রেফতার করুক। আমার স্ত্রীকে এবং আমাকে এই নিয়ে ইডি-সিবিআই মিলে প্রায় ১০ বারের মত ডেকেছে। আবার ভোট আসলেই ডেকে পাঠাবে। আসলে বিচার তো হচ্ছে না। শুনানি ও সাক্ষ্যপর্ব না-চললে বিচারপ্রার্থীরা বিচার পাবেন কী করে?'