আবাস যোজনায় বেনিয়ম নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে নাবান্ন। এমনকী বেনিয়ম বন্ধে কড়া নির্দেশের কথা জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। আর এর পর থেকেই ভোল বদলাতে শুরুহয়েছে পাকাবাড়ি থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম থাকা পূর্ব বর্ধমানের শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের। ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে তাঁরা এখন তালিকায় থাকা নাম কাটাতে ছুটোছুটি শুরু করে দিয়েছেন।
তালিকায় থাকা নাম কেটে দেবার জন্য ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক দফতরে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন
রায়না ১ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রত্না মহন্ত ও বর্ধমানের রায়ান ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ফাতেমা বিবি। তারই মধ্যে আবার মন্তেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী ,উপপ্রধানের পরিবারের দুই সদস্য ও এক সদস্যার স্বামীর নাম আবাস যোজনার তালিকায় থাকা নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। বিরোধীরা দাবি করছেন, তালিকা প্রকাশ্যে আসার পর স্বজনপোষণ ধরা পড়ে যাওয়াতেই তৃণমূলের বিত্তশালী জনপ্রতিনিধিরা এখন তালিকা থেকে নাম কাটাতে তৎপর। দায় এড়াতে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের অনেকে আবার তালিকার বর্তমান ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
আাবাস যোজনায় বেনিয়ম নিয়ে তোলপাড় অবস্থা তৈরি হয়েছে রাজ্যজুড়ে। তালিকায় থাকা নাম ধরে ধরে প্রশাসনের লোকজন অনুসন্ধান শুরু করতেই বিস্তর অনিয়ম ধরা পড়ছে। আর এইসবের পরিপ্রেক্ষিতেই সরকারি আবাস যোজনা নিয়ে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে তাঁরা কেউ আবাস যোজনার বাড়ি পাবেন না। পাকা বাড়ি রয়েছে এমন কারোর নাম আবাস যোজনার তালিকায় থাকলে সেই নাম দ্রত বাতিল করে দিতে হবে। এ নিয়ে কোন প্রভাবশালীর কথাও গ্রাহ্য হবে না। তা নিয়ে কোথাও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে সঙ্গে সঙ্গে সবিস্তার নবান্নে জানাতে হবে।
আর এতেই বিপাকে পড়ে গিয়েছেন, পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও সরকারি আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা। মুখ্যসচিবের কড়া বার্তার পরেই বুধবার আলাদা আলাদা ভবে জেলাালাসক প্রিয়াংকা সিংলা ও জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন কালনা ২ ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে যোজনার সমীক্ষা করেন।
আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে জেনে রায়না ১ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রত্না মহন্ত ইতিমধ্যেই নিজেই তাঁর নাম কেটে দেবার জন্য ব্লকের বিডিওকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি,
“যখন সার্ভে হয়েছিল তখন তাঁর কোন পাকা বাড়ি ছিল না। ছিল মাটির বাড়ি। কিন্তু দলের ব্লক সভাপতি সহ অন্য দলীয় নেতৃত্বের সহযোগীতায় এখন তাঁর একটি পাকা বাড়ি হয়েছে।' রত্না মহন্তর সাফাই, "যেহেতু তাঁর পাকা বাড়ি হয়েছে তাই অন্য কোন গরিব মানুষ যাতে পাকা বাড়ি পায় তার জন্য তিনি তাঁর নাম তালিকা থেকে কেটে দেবার কথা বিডিওকে জানিয়েছি।"
একই পথে হেঁটেছেন বর্ধমানের রায়ান ১ নম্বর পঞ্চায়েতের বিজয় রাম সংসদের সদস্যা ফাতেমা বিবি। পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস যোজনায় তাঁর ও তাঁর পরিবারের ছ'সদস্যের নাম রয়েছে । ফতেমা বিবি জানান , এই বিষয়টি জানার পরেই তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য তিনি মঙ্গলবার পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতে রায়না ২ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পার্বতী ধারা মালিকও একই পথ অনুসরন করেছেন। তিনি তাঁর ছেলের তন্ময়ের নাম আবাস যোজনার তালিকা থেকে কেটে দেবার জন্য বুধবার ব্লক প্রশাসনের দফতরে আবেদন জানান।
তবে এতেও বিতর্ক থামেনি। মন্তেশ্বরের বিজেপি নেতা ঝুলন হাজরা এদিন অভিযোগ করেন, তাঁদের পঞ্চায়েতের প্রধান সরকারি প্রকল্পে একবার টাকা পেয়েছেন। তার পরেও ফের ওনার স্বামীর নাম আবাস যোজনার তালিকায় রয়েছে। এছাড়াও উপপ্রধান ও এক পঞ্চায়েত সদস্যদের পাকাঘর থাকা সত্বেও আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে। এটা কীভাবে হয়? ঝুলন হাজরা জানান ,এইসব নাম কেটে দেবার জন্য তিনি ব্লকের বিডিওকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। এ
বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “আবাস যোজনা নিয়ে আমরা এতদিন স্বজনপোষণের যে অভিযোগ করে আসছিলাম তা এইসব ঘটনা থেকে আরও একবার সত্যি প্রমানিত হল।"
পাল্টা উত্তরে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, "এই আবাস যোজনার তালিকা ২০১৫ - ১৬ সালের। সেই সময় যাঁদের কাঁচা বাড়ি ছিল তাঁদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। এখন ২০২২ সাল। এই সময়ের মধ্যে যাঁরা পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন তাঁরা নিজেরাই তাঁদের নাম কাটিয়ে দিচ্ছেন। এটা স্বচ্ছতারই নিদর্শন। প্রকৃত গরীবরাই আাবাস যোজনার ঘর পাবেন। তা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।"