Advertisment

মেমারিতেও বেশিরভাগ পঞ্চায়েতই বিনা-ভোটে পকেটে পুরেছে তৃণমূল, তবু গলার কাঁটা গোঁজ!

রায়নার মতোই মেমারিতেও নির্দল কাঁটায় বিদ্ধ তৃণমূল। সুযোগ বুঝে পাশা বদলে মরিয়া সিপিএম।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
Tmc uneasiness is being raised by independents in memari panchayat polls

তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

'পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীদের নাম দল ঠিক করবে, কারও সুপারিশ মানা হবে না'। 'তৃণমূলে নবজোয়ার' কর্মসূচিতে নেমে এই বার্তাই দিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতই পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ১ ব্লকে দলের প্রার্থীদের তালিকা পাঠিয়ে দেয় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব। ওই সব প্রার্থীরা পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন জমা দেন। তবে সেই সঙ্গে নির্দল হয়েও অনেকে মনোনয়ন জমা করেন। দলের হঁশিয়ারি সত্ত্বেও ওই গোঁজ প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় এখন রায়নার মতোই নির্দল কাঁটাতেই বিদ্ধ হয়ে আছে মেমারির তৃণমূল শিবিরও। এতেই হাসি চওড়া বিরোধী শিবিরের।

Advertisment

একদা বামেদের দুর্গ হিসেবেই পরিচিত ছিল মেমারি। তৃণমূল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই মেমারিতেও চরমে পৌঁছেছিল সিপিএম-তৃণমূল সংঘাত। সেই সংঘাতের জেরে প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে থাকতো মেমারির নাম। রাজ্য রাজনীতিতে পালবদলের পর ধীরে ধীরে মেমারিতে দাপট বাড়তে শুরে করে ঘাসফুলের। একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের হাতছাড়া হয়ে তৃণমূলের দখলে চলে যায়। কিন্তু মেমারিতে ঘাসফুলের দাপট বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলও। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও যার প্রভাব অব্যাহত থাকল।

মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, মেমারি ১ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে মোট আসন ২১২ টি। আর সমিতিতে আসন সংখ্যা ৩০ টি । এই সবকটি আসনে দলের ঘোষিত প্রার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অনেকে নির্দল বা গোঁজ প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন দাখিল করে দেয়। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব নির্দলদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ জারি করলেও তা

অনেকে অগ্রাহ্য করে। আর মনোনয়ন প্রত্যাহার ও ’বি’ ফর্ম ফিলাম করে প্রতীক পাওয়ার সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পর সব ওলটপালট হয়ে যায়।

আরও পড়ুন- আমতায় পঞ্চায়েত ভোটে আনিস-মৃত্যুর প্রভাব পড়বে? নজর সেদিকেও

তিনি আরও বলেন, 'দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়। মনোনয়ন প্রত্যাহার করার দিনের মধ্যে নির্দলরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি। যে কারণে ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ২১২ আসনের মধ্যে ৮০ টি আসন এবং সমিতির ৩০ টি আসনের মধ্যে ৭ আসনে নির্দল প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবেই রয়ে গিয়েছেন। এমনটা কাম্য ছিল না।'

ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, 'প্রতীক দিতে দেরি হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে নির্দলদের নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। নির্দলরা কেউ ভোটের প্রচারেও নামেনি। তাঁরা তৃণমূল প্রার্থীর হয়েই প্রচার চালাচ্ছেন। নির্দল প্রার্থীরাই ভোটারদের জানিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের নয়, ভোট তৃণমূল প্রার্থীকে দিন।'

আরও পড়ুন- পঞ্চায়েত ভোটেও CBI তদন্ত, হাইকোর্টের নির্দেশের পাল্টা বিরাট পদক্ষেপ রাজ্যের

মেমারি ২ ব্লকে আবার আরও বিচিত্র ঘটনা ঘটেছে বলে সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তাপস চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন এমন অনেকে কংগ্রেসের প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন।'

তৃণমূলর এই কোন্দলের বিষয়টি জানার পর জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, 'যেমন দল তেমন তার প্রার্থী তালিকা। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোকেদের তৃণমূলে স্থান নেই। তোলাবাজরাই তৃণমূলের সম্পদ। ওই দলের নির্দেশ নিচুতলার কেউ যে মানে না সেটা নানা সময়ে দেখা গেছে। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে সেটা রায়না ও মেমারিতে আরও একবার দেখা গেল।' সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মির্জা আখতার আলি বলেন, 'তৃণমূল কংগ্রেস দলে সবই সম্ভব। ওই দলে বখরাই প্রথম ও শেষ কথা।'

আরও পড়ুন- তর্কাতর্কি বাড়তেই পুলিশকেই চেয়ার তুলে মার, বাসন্তীতে অভিযুক্ত তৃণমূল

এদিকে জেলা নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে বিজেপি ৮১টি, সিপিএম ১৯২টি, কংগ্রেস ৫৬ টি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে। আর পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বিজেপি ১৩ টি, সিপিএম ৩০টি এবং কংগ্রেস ১৪ টি আসনে মনোনয়ন তুলে নিয়েছে। তৃণমূল তুলেছে ৩২ টি আসনে।

ভোট হবে না এমন আসনের সংখ্যাও জেলায় কম নয়। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪০১০টি আসনের মধ্যে ৮৫৮টি আসনে কোনও ভোট হচ্ছে না। তার মধ্যে রায়না ১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে সিপিএম তিনটে আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জিতে গিয়েছে। বাকি গুলিতে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে। গ্রাম পঞ্চায়েতে মঙ্গলকোটের ২৪৩টি আসনের মধ্যে ১৬২টি, কেতুগ্রাম ১ ব্লকে ১৫৩টি আসনের মধ্যে ১৪৭টি, বর্ধমান ১ ব্লকে ১৮৮টির মধ্যে ১০১টি আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে। পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে জেলার ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতির ৬৪০টি আসনের মধ্যে ৯৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জিতেছে।

তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি অনুযায়ী, নির্বাচনের আগেই জেলার ৩৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যত তাঁদের দখলে চলে এসেছে। তার মধ্যে রয়েছে, মঙ্গলকোটে ১০ টি, কেতুগ্রাম ১এর ৮ টি, বর্ধমান ১ ব্লকে ৫ টি, মন্তেশ্বর ব্লকে ৩ টি এবং আউশগ্রাম ১, জামালপুর, ভাতার, রায়না ১, গলসি ২, কালনা ১ ও খণ্ডঘোষ ব্লকে ১ টি। বাকি কাটোয়া ২ ও কালনা ২ ব্লকের প্রতিটি আসনেই ভোট হচ্ছে।

panchayat election 2023 bengal panchayat election 2023 Purba Bardhaman tmc
Advertisment