Advertisment

বাজিমাত লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই? বিরোধীদের বলে বলে ১০ গোল দিতে অভিনব প্রচারে তৃণমূল

মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পকে ঢাল করে অভিনব ভোট প্রচারে তৃণমূল।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
Tmc uses lakshmi bhandar project as a tool for election campaign

অভিনব কায়দায় তৃণমূলের ভোট প্রচার। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

পঞ্চায়েত ভোটে মহিলা ভোটারদের নিজেদের পক্ষে আরও বেশি করে টানতে এবার 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পকে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। পূর্ব বর্ধমানে তৃণমূলের প্রার্থীরা মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে জোরদার প্রচার চালাচ্ছেন। সেই প্রচারের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন থাকছেন তেমনই থাকছেন দেবী লক্ষ্মী ও লক্ষ্মীর ভাঁড়। প্রচারে সামিল তৃণমূলের প্রার্থীরা দাবি করছেন, একা 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পই পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বলে বলে ১০ গোল দেবে।

Advertisment

তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যে তৃণমূলের সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প চালু করেন। সেই থেকে তফসিলি জাতি এবং উপজাতি পরিবারের মহিলারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাসে ১ হাজার টাকা এবং সাধারণ মহিলারা মাসে ৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “গোটা রাজ্যে ২ কোটি ১২ লক্ষ মহিলা এখন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন। সংখ্যাটা দিন দিন আরও বাড়ছে। শুধু এই প্রকল্পের জন্যই বছরে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজ্য সরকারের খরচ হচ্ছে।'

আরও পড়ুন- স্কুলের মিটার বক্সে কিলবিল করছে কী? দেখেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়!

রাজ্যের অপর মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, পূর্ব বর্ধমানে ১১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪২৫ জন মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের উপভোক্তা রয়েছেন। এবার 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পে সব শ্রেণীর মহিলাদের জন্য আরও ২৫০ টাকা করে বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা সরকার নিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। শাসক দলের নেতৃত্বের দাবি, মহিলা মহলে 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পের জনপ্রিয়তা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে।

publive-image
তৃণমূলের ভোট প্রচার।

'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প যে গ্রামের মহিলাদের একটি বড় অংশের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে তা বুঝতে সমস্যা হয়নি তৃণমূল নেতৃত্বের। তাই পঞ্চায়েত ভোটে মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক নিজেদের পক্ষে আরও বেশি করে টানতে রাজ্যের এই জনপ্রিয় প্রকল্পকেই ডাল করছেন তাঁরা। পূর্ব বর্ধমানের রায়না ও জামালপুরে 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের প্রার্থীদের অভিনব প্রচার দেখা গিয়েছে।

আরও পড়ুন- ফের বাড়ল গ্যাসের দাম, কলকাতায় কত?

রায়না ১ ব্লকের সেহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৫ নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থী রিঙ্কু সাহা ও একই ব্লকের ১২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি আসনে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উমা কেশ বেন্দুয়া গ্রামে প্রচারে বেরিয়েছিলেন। প্রার্থীদের মধ্যে উমা কেশের হাতে ছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি । আর রিঙ্কুর সাহার এক হাতে ছিল দেবী লক্ষ্মীর ফটো ও অন্য হাতে ছিল মাটির তৈরি লক্ষ্মীর ভাঁড়। এই দুই প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে বের হওয়া মহিলাদের অনেকেও হাতে নিয়েছিলেন লক্ষীর ভাঁড়। একইভাবে লক্ষ্মীর ভাঁড় ও দেবী লক্ষ্মীর ফটো নিয়ে প্রচারে বেরিয়েছিলেন জামালপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩৯/৫ এবং ১৩৯/৬ বুথে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দুই প্রার্থী মিঠু রক্ষিত ও রীণা দে।

ভোট যুদ্ধের ময়দানে দেবী লক্ষ্মীকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের প্রার্থীদের এমন প্রচার চাক্ষুস করতে এলাকার ভোটাররা যে যার ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। সেই ফাঁকেই তৃণমূলের প্রার্থীরা রাজ্য সরকারের চালু করা 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প সহ বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের কথা তুলে ধরেছিলেন।

এ বিষয়ে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝি বলেন, 'বাম সরকার ৩৪ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও গরির মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন ওরা করেনি। রাজ্যের উন্নয়নও সেভাবে ওরা করেনি। শুধু ভেঙে দাও- গুঁড়িয়ে দাও শ্লোগান। বনধ-ধর্মঘট ছিল বামেদের ভিত্তি । সেই তুলনায় তৃণমূল সরকার মাত্র ১২ বছরে অসংখ্য জনহিতকর প্রকল্প যেমন চালু করেছে, তেমনই গ্রাম-গঞ্জ সহ গোটা রাজ্যে প্রচুর উন্নয়নের কাজ করেছে। তবে এটা ঠিক যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প গ্রামের মহিলা মহলে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।' অলক মাঝি আরও বলেন, 'জামালপুর বিধানসভায় এখনই ৬১ হাজার ৫৭২ জন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সহায়তা পাচ্ছেন। এই সব মহিলারাই পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের কুপোকাত করে দেবেন।'

আরও পড়ুন- গতকাল টানা ১১ ঘণ্টা প্রশ্ন, ফেরার পথেই ফের ED-র তলব সায়নীকে

তৃণমূলের এই দাবিকে যদিও নস্যাৎ করে দিয়েছে সিপিএম ও বিজেপি নেতৃত্ব। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র এবিষয়ে বলেন, 'এটা আমরা আগে থেকেই বুঝেছিলাম। তবে সরকারি প্রকল্পকে দলীয় প্রচারের হাতিয়ার করে তৃণমূলের নেতারা আখেরে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন তৃণমূলকে ভোট না দিলে আর মিলবে না লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সহায়তা। তবুও বলবো সরকারি প্রকল্পকে সামনে রেখে তৃণমূল যতই ফায়দা তোলার চেষ্টা করুক না এবার লক্ষ্মী আর ওদের দিকে হবেন না। গোটা রাজ্যের মহিলারা জেনে গিয়েছেন, তৃণমূল আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত ও চোরেদের পার্টি। পঞ্চায়েত ভোটে চোরেদের পার্টির বিপক্ষেই রায় দেবেন গ্রাম বাংলার মানুষ।'

সিপিএমের মহিলা সংগঠন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সহ- সভানেত্রী ভারতী ঘোষাল কটাক্ষ করে বলেন, 'তৃণমূলের সরকার ৫০০ টাকা দিয়ে মহিলাদের ব্ল্যাকমেল করছে। মহিলারাও জানেন, তৃণমূলের রাজত্বে এই বাংলায় মহিলাদের উন্নতি হয়নি। উল্টে নারী ধর্ষণ, নারী হত্যা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। এমনকী শিশুরাও তৃণমূলের রাজত্বে নিরাপদ নয়। বল ভেবে খেলতে গিয়ে বোমায় কোথাও শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, আবার কোথাও শিশুরা জখম হচ্ছে। এই সব নিয়ে মহিলারা তৃণমূলের প্রতি চরম বীতশ্রদ্ধ হয়ে আছেন। তৃণমূল এখন চমকের রাজনীতি করছে।'

tmc East Burdwan Purba Bardhaman bengal panchayat election 2023 panchayat election 2023
Advertisment