অধ্যাপিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারা ভাঙড়ের কুখ্যাত নেতা আরাবুল ইসলামকে হামেশাই দেখা যেত টেবিল চাপড়ে অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের হুমকি দিতে। এবার সেই একই ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাক্ষী হল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর। ডিএর দাবিতে দু'ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতি পালন করছিলেন জামালপুর কলেজের অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা। আর, সেই খবর পেয়েই বলা নেই, কওয়া নেই সোজা টিচার্স রুমে ঢুকে এলেন ব্লক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিট্টু মল্লিক।
টেনেটুনে উচ্চমাধ্যমিক পাশ এই নেতা এরপর একেবারে আরাবুলের কায়দায় টেবিল চাপড়ে ও আঙুল উচিয়ে কলেজ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের হুমকি দেওয়া শুরু করেন। টিচারদের হুমকি দিয়ে বলেন, 'ওসব কর্মবিরতি চলবে না। এখনই ক্লাসে পড়াতে যেতে হবে।' বিট্টু মল্লিক জামালপুর কলেজের বর্তমান পড়ুয়াও নন, প্রাক্তনীও নন। তার পরও কীভাবে এই ছাত্রনেতা ঢুকে এলেন টিচার্স রুমে? কার জোরে এভাবে টেবিল চাপড়ে, আঙুল উঁচিয়ে তিনি অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের হুমকি দিলেন? ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর সেই প্রশ্নই তুলছেন নেটিজেনরা। বিভিন্ন মহলে উঠেছে নিন্দার ঝড়।
জামালপুর কলেজের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, অন্যান্য অনেক কলেজের মতই ৩১ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা-সহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে মঙ্গলবার ২ ঘন্টার কর্মবিরতিতে তাঁরা শামিল হয়েছিলেন। কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছিলেন কলেজের অশিক্ষক কর্মীরা। অনুগত টিএমসিপি কর্মীদের মুখে সেসব জানার পরই বেজায় চটে যান স্থানীয় টিএমসিপি নেতা বিট্টু মল্লিক। এর আগেও বারবার বহিরাগতদের উৎপাতে পঠনপাঠন বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে জামালপুর কলেজে। এবার বিট্টু মল্লিকের মত স্থানীয় টিএমসিপি নেতা দেখিয়ে দিলেন, কেন বিঘ্নিত হয় পঠনপাঠন। এমনটাই অভিযোগ শিক্ষকদের। তাঁদের অভিযোগ, 'শিক্ষকদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়, এঁরা তাই জানে না।'
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শুধু টেবিল চাপড়ে শাসানি, আঙুল উঁচিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়াই না। ওই ছাত্রনেতা তাঁদের ও অশিক্ষক কর্মীদের দীর্ঘক্ষণ কলেজে আটকেও রেখেছিলেন। রাজ্যের শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, এই ঘটনা শুধু প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বর্তমানে এমন আচরণ রাজ্যের বিভিন্ন কলেজেই চলছে। যারা সেই নিন্দনীয় আচরণ করছেন, তাদের পরিচয় টিএমসিপির ছাত্র নেতা। অথচ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সেই সব নেতারা কোনওদিন লেখাপড়ায় কলেজের চৌকাঠে প্রবেশ করার সামর্থ্যও দেখাতে পারেননি।
আরও পড়ুন- আরও পড়ুন- ‘ডার্টি পলিটিকস’, ‘বীতশ্রদ্ধ’ মমতার রাজনীতি থেকে বিদায়ের ভাবনায় বড় ইঙ্গিত
অথচ, শুধুমাত্র শাসক দলের নেতা হওয়ার সুবাদে সেই যুবকরাই অনায়াসে ঢুকে আসছেন টিচার্স রুমে। বলা-কওয়া তো দূর। পান থেকে চুন খসলেই অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের হুমকি দিচ্ছেন যখন তখন। বিট্টু মল্লিকের আচরণ তার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এমন বিট্টু মল্লিক আরও অনেক রয়েছে বলেই অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের অভিযোগ।
জামালপুর কলেজের ঘটনা সামনে আসায় বিট্টু মল্লিক-সহ সমস্ত দোষী টিএমসিপি নেতাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে এসএফআই-সহ বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো। একই দাবি জানিয়েছেন অধ্যাপকরাও। তাঁদের অভিযোগ, এমন ধরনের ঘটনা কড়া হাতে মোকাবিলা না-করলে রাজ্যের শিক্ষার পরিবেশ আরও নীচে নেমে যাবে।