গাড়ি চালানোর সময় চালকের চোখ ঘুমে আচ্ছ্বন্ন হলেই গাড়িতে থাকা 'ডিভাইস' বার্তা পাঠাবে সার্ভারে। মুহূর্তে সেখান থেকে চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে সতর্ক করা যাবে। এমনকী দুর্ঘটনা রোখার জন্য পুলিশও 'জিপিএস' প্রযুক্তির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে ডিভাইস বসানো ওই গাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে।
বর্তমানে শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর কিছু গাড়িতে এই ধরনের 'ডিভাইস' ব্যবহার করা হয়। তবে পুলিশ গড়ির দুর্ঘটনায় পড়া রুখতে এবার 'নোভাস অ্যাওয়ার' নামে ওই 'ডিভাইস' বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষামূলক ভাবে জেলা পুলিশের দুটি গাড়িতে ওই 'ডিভাইস' বসানো হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। যে গাড়ি দু'টিতে ওই 'ডিভাইস' বসানো হবে সেই গাড়ি দুটিই পুলিশ দূরের কোনও এলাকায় বা ভিন রাজ্যে তদন্তের কাজে নিয়ে যাবে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে হুগলির দাদপুরে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় কলকাতা পুলিশের আধিকারিক দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়। এই দুর্ঘটনা নিয়ে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, একটানা গাড়ি চালিয়ে দেবশ্রীর গাড়ির চালকের চোখে ঘুম এসে গিয়েছিল। চালক গাড়ি নিয়ে সজোরে ধাক্কা দেয় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে। দুর্ঘটনায় দেবশ্রীর পাশাপাশি তাঁর নিরাপত্তারক্ষী এবং গাড়িচালকেরও মৃত্যু হয়। এই ঘটনা গোটা পুলিশ মহলকে ভাবিয়ে তোলে। তারপর থেকেই পুলিশ গাড়ির এমন দুর্ঘটনা রুখতে বিশেষ 'ডিভাইস' বসানোর পরিকল্পনা শুরু করে।
আরও পড়ুন- Presidential Election 2022 Live: ‘মমতা আদিবাসী বিরোধী’, পোস্টার বালুরঘাটে
সাত-আট মাস আগে 'নোভাস অ্যাওয়ার' নামে ওই ডিভাইস-এর কথা প্রথম পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপারকে জানিয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ সিংহ রায়। পরে, পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন ওই ‘ডিভাইস’ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ওই ডিভাইসটির নির্মাতা একটি বহুজাতিক সংস্থা। ।ডিভাইসটি কেনা এবং তা একটি গাড়িতে বসানো পর্যন্ত মোট ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। এখন পরীক্ষামূলকভাবে জেলা পুলিশের দুটি গাড়িতে ওই ডিভাইস বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে জেলা পুলিশের ১৭৮টি চার চাকা গাড়ি ও ১২টি প্রিজন ভ্যানেও বিশেষ এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
গাড়িতে বসানো ওই ডিভাইস কীভাবে কাজ করবে? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন গুরুগ্রামের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পঙ্কজ শর্মা। তিনি জানান, ডিভাইসটি বসাতে হবে গাড়ির এমন এক জায়গায় যেখান থেকে চালকের চোখের পাতার নড়াচড়া ওই ডিভাইসে সহজে ধরা পড়ে। রাতে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালানোর সময় অনেক চালকের চোখের পাতা লেগে আসে। চোখের পাতার নড়াচড়া অস্বাভাবিক হলেই তার ভিডিও উঠে যাবে ওই ডিভাইসে। সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিডিও পৌঁছে যাবে সার্ভারে।
সেখান থেকে চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে সতর্ক করা হবে। পঙ্কজ আরও জানান, জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই ডিভাইস বসানো গাড়ির সঙ্গে মুহূর্তেই যোগাযোগ করতে পারবেন পুলিশকর্মীরা। পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ''এরাজ্যে তো বটেই, গোটা দেশের মধ্যেও পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশই প্রথম ওই যন্ত্রের ব্যবহার করতে চলেছে।''