Advertisment

সর্বভারতীয়স্তরে দোস্তি, রাজ্যেও কি বাম, কংগ্রেস, মমতা কুস্তি ছেড়ে আসনরফার দিকে ঝুঁকবে?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্বাস করতে পারছেন না বাম নেতারা। কংগ্রেসের একাংশেরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে ইতস্তত ভাব আছে।

IE Bangla Web Desk এবং Chinmoy Bhattacharjee
New Update
India alliance 1600

মঙ্গলবার ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর, নয়াদিল্লিতে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্সের (INDIA) বৈঠক। (পিটিআই ছবি)

পশ্চিমবঙ্গ সেই চার রাজ্যের অন্যতম যেখানে বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোট আসনরফা নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে। মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে তিনি কংগ্রেস-সিপিএমের সঙ্গে জোটের পক্ষে। তবে, বাস্তব আর তাঁর কথার কোনও মিল নেই। এই পরিস্থিতিতে সিপিএমের দৃঢ় অবস্থান আর কংগ্রেসের দ্বিধা বাংলায় বিরোধী জোটের আসন রফার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Advertisment

মমতার সর্বশেষ মন্তব্য 'সর্বভারতীয় দর্শকদের জন্য'। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এমনটাই জানিয়েছেন, সিপি(এম) রাজ্য সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, 'এটা একটা জায়গা নেওয়ার চেষ্টা। কিন্তু, এটা তাঁর রাজনীতি নয়। বাংলার রাজনীতির জটিলতা দেশের বাকিদের জানা উচিত। প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। বাংলারও আছে। এখানে আমরা মনে করি না যে তৃণমূলের পাশে থাকা কেউ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে পারবে। কারণ বিজেপি আর আরএসএস ইতিমধ্যেই তৃণমূলের সঙ্গে আছে। আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের সভায় যোগ দিতে দেখেছেন। আবার, পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করতে দেখেছেন।'

সেলিম বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক এমন একটা সময়ে হল, যখন লোকসভা এবং রাজ্যসভার বিরোধী সদস্যদের সংসদ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনাই তো তাঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) অবস্থান সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়। আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই। কিন্তু, যাঁরা বিজেপির কাছে দ্বিতীয় বাঁশি বাজাচ্ছে, তাঁদের কাছে মাথানত করাটা উচিত নয়।' বাংলায় 'ইন্ডিয়া'র জোটের সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে সেলিম বলেন, 'ইন্ডিয়া কোনও সর্বভারতীয় নির্বাচনী জোট নয়। রাজ্যভিত্তিক আমাদের নির্বাচনী জোট আছে। এটা বিরোধী ঐক্যের ব্যাপার। বিজেপির আক্রমণের বিরুদ্ধে বিরোধীরা একত্রিত হচ্ছে। মমতা বলেন, রাজনৈতিক প্রচারে নয়, আসন ভাগাভাগিতে আগ্রহী। আমরা রাজনৈতিক প্রচারে আগ্রহী।'

বাংলায় কংগ্রেসের একটি অংশ সিপি(এম)-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ইচ্ছুক নয়। টিএমসিকেও তারা শরিক হিসেবে চায় না। সেপ্টেম্বরে, কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচি টিএমসির সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করে সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল-সহ দলের জাতীয় নেতৃত্বকে চিঠি লিখেছিলেন। লোকসভা সাংসদ এবং রাজ্য ইউনিটের প্রধান অধীররঞ্জন চৌধুরী, টিএমসি-বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তিনি অবশ্য দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে ইতিমধ্যেই টিএমসি সম্পর্কে নরম অবস্থান নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, চলতি মাসে লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার সময় টিএমসি সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে সমর্থনও করেছেন। এতে প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশের সমালোচনার মুখেও পড়েছেন অধীর। এই ব্যাপারে কৌস্তুভ বাগচি বলেন, 'আজ আমরা বলছি মহুয়া মৈত্র একজন সাধু। আগামিকাল আমরা বলব, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বচ্ছ। পরশু বলব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বচ্ছ। আমাদের বলা শুরু করতে হবে টিএমসি ভালো।'

রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের পরাজয়ের পরেও যেমন কৌস্তুভ বাগচি বলেছিলেন যে কংগ্রেস যদি, 'দুর্নীতিগ্রস্ত দলগুলোর সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখে, তবে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যদি কংগ্রেস দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে থাকে, অন্য জায়গার বিধানসভা নির্বাচনের মতই ফলাফল হবে এখানকার। খুব শীঘ্রই ভারত একটি কংগ্রেস-মুক্ত দেশ হয়ে যাবে।' এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতার আশঙ্কা, 'টিএমসির সঙ্গে মিত্রতা, বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যে দলের সম্ভাবনাকে আঘাত করবে। চলতি বছরের গোড়ায় সাগরদিঘি উপনির্বাচনের সময়, তৃণমূল কংগ্রেসের যেমন অবস্থা হয়েছিল, তেমনই অবস্থা হবে কংগ্রেসের।'

ওই কংগ্রেস নেতা বলেন, 'ফেব্রুয়ারি-মার্চের সাগরদিঘি উপনির্বাচনে আমাদের জয় একটি স্পষ্ট সংকেত দিয়েছে যে বাংলাভাষী মুসলমানরা মালদা-মুর্শিদাবাদ-উত্তর দিনাজপুর জেলাগুলোতে আমাদের দিকে ঝুঁকছে, যেখানে আমরা ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী ছিলাম। আমাদের পাঁচ থেকে ছয়টি আসন জেতার স্পষ্ট সুযোগ আছে। কিন্তু, আমরা যদি টিএমসির সঙ্গে আসন রফা করতে যাই, ওরা আমাদের চারটির বেশি আসন দেবে না। তাতে আমরা আরও দুর্বল হয়ে যাব। বাংলাভাষী মুসলিম ভোটব্যাংকও আমাদের থেকে দূরে সরে যাবে। অন্যদিকে, আমরা যদি বামফ্রন্টের সঙ্গে টিএমসির বিরুদ্ধে লড়াই করি, তবে আমরা আইএসএফের থেকেও সাহায্য পাব। আইএসএফের এই জেলাগুলোয় শক্তিশালী সংগঠন আছে।'

— মনোজ সিজি থেকে ইনপুট সহ

tmc bjp CONGRESS Cpm Mohammed Salim koustav bagchi
Advertisment