ট্রেন থেকে টোটো তারপর ম্যাটাডোর, তবুও শেষ রক্ষা হল না কচ্ছপ পাচারকারীদের। পাচারের উদ্দেশ্যে বিপুল সংখ্যক কচ্ছপ ভর্তি বড় বড় ব্যাগ নিয়ে রেল লাইনের কাছে ফাঁকা মাঠে অপেক্ষা করছিল একদল মহিলা। তাঁরা অতি ভারি ওইসব কচ্ছপ ভর্তি ব্যাগ গুলি ম্যাটাডোরে চাপিয়ে নিয়ে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আর তা বুঝতে পেরে পূর্ব বর্ধমানের দেওয়ানদীঘি থানার এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে খবর দেয় স্থানীয় দুই মহিলা। সেই খবর পেয়ে সিভিক ভলেন্টিয়াররা তালিত ও খানা জংশন স্টেশনের মাঝে রেল লাইনের কাচাকাছি ওই মাঠের কাছে পৌছায়। তাঁদের দেখেই কচ্ছপ বোঝাই ম্যাটাডোরটি ফেলে পাচারকারীরা চম্পট দেয়। এর পর দেওয়ানদিঘী থানার পুলিশ ও রেল পুলিশ যৌথ ভাবে ঘটনাস্থলে পৌছে ৮০০ কচ্ছপ উদ্ধার করে। পাশাপাশি তারা কচ্ছপ পাচারে যুক্ত পলাতক মহিলাদের সন্ধান চালাচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কচ্ছপ ভর্তি অতি ভারি বড় বড় ব্যাগ নিয়ে যেসব মহিলারা মাঠে জড়ো হয়েছিল তারা বহিরাগত। এলাকার বাসিন্দা সেখ রহমত আলি ও নূপুর দাস জানান, কয়েকজন মহিলা ভারি ভারি ব্যাগ টোটোয় চাপিয়ে তালিত স্টেশনের কাছে মাঠে এসে জড়ো হয়। তাদের সঙ্গে পুরুষও ছিল। অপরিচিত মহিলা ও পুরুষদের বড় বড় ভারি ব্যাগ নিয়ে জড়ো হওয়ার বিষয়টি তাদের সন্দেহজনক লাগে। ওইসব ব্যাগ ওই মহিলারা ম্যাটাডোরে তুলতে শুরু করতেই তাঁরা বিষয়টি স্থানীয় সিভিক ভলেন্টিয়ারকে জানান। সিভিক ভলেন্টিয়াররা কাছে যেতেই ওইসব ব্যাগ ভর্তি ম্যাটাডোর ফেলে রেখেই ওই মহিলারা চম্পট দেয়। পরে দেওয়ানদীঘি থানার পুলিশ ও রেল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ব্যাগগুলিতে তল্লাশি চালাতেই শয়ে শয়ে কচ্ছপ উদ্ধার হয়।
বর্ধমান স্টেশনের আরপিএফ ৬ টি কচ্ছপ ভর্তি ব্যাগ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। আর বাকী কচ্ছপ ভর্তি ২৩ টি ব্যাগ নিয়ে যায় দেওয়ানদীঘি থানার পুলিশ।দেওয়ানদীঘি থানার পুলিশ ২৩ টি ব্যাগ থেকে ৫৬৮ টি কচ্ছপ উদ্ধার করে। অন্যদিকে আরপিএফ ৬টি ব্যাগ থেকে ২০০ টির মত কচ্ছপ পায়। উদ্ধার হওয়া প্রায় ৮০০ কচ্ছপ এদিনই বন দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বন দফতর ও পুলিশের দাবি, সাম্প্রতিককালে একসঙ্গে এত বেশি কচ্ছপ উদ্ধার হয়নি। বছর খানেক আগে ডাউন হাওড়া-চম্বল এক্সপ্রেস থেকে দু’টি বস্তা থেকে ৩৯টি কচ্ছপ উদ্ধার হয়েছিল। দু’জন মহিলাও গ্রেফতার হয়েছিল। রবিবারের আগে সবচেয়ে বেশি কচ্ছপ উদ্ধার হয়েছিল দুর্গাপুরে। ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি দূরপাল্লার ট্রেন থেকে ২২টি বস্তায় ৬৮৯টি কচ্ছপ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তার কিছুদিন আগে বর্ধমান থেকে ১৯টি বস্তায় ৫০১টি কচ্ছপ উদ্ধার হয়েছিল। এলাকার বাসিন্দাদের অনুমান, পাচারের উদ্দেশ্যে ওই মহিলারা কচ্ছপ ভর্তি ব্যাগগুলি কোন ডাউন মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনে চাপিয়েছিল। কোন কারণে তালিত ও খানা জংশন স্টেশনের মাঝে ট্রেন থামতেই কচ্ছপ ভর্তি ব্যাগগুলি ট্রেন থেকে নামিয়ে পাচারকারী মহিলারা লাইনের কাছাকাছি মাঠের মধ্যে জড়ো হতে থাকে। তারপর তারা টোটো করে ব্যাগ গুলি মাঠ থেকে তালিত স্টেশনের কাছে নিয়ে গিয়ে ম্যাটাডোরে লোড করছিল পাচারের জন্য।
বন দফতর, সিআইডি ও পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া কচ্ছপগুলি ‘গ্যাঞ্জেস সফট শেলড টার্টেল’ বা ‘ইন্ডিয়ান ফ্লাগশিপ টার্টেল’ প্রজাতির। মূলত ভাগীরথীর অববাহিকায় উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর বা বেনারসের সাহাগঞ্জের কাছে যে কচ্ছপ বন্যপ্রাণী আইন ভেঙে কচ্ছপগুলিকে ধরা হয়। ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গা অববাহিকার ‘রাইট ব্যাঙ্কে’ বিভিন্ন নদী-সেচখালে কচ্ছপ ঘুরে বেড়ায়। শীতে নদীর নিম্ন অববাহিকায় ডিম পাড়ার জন্য ঝাঁকে-ঝাঁকে কচ্ছপ নেমে আসে। সেই সুযোগে জলের নীচে জালের ফাঁদ পেতে কচ্ছপ ধরা হয়। সম্ভবত সামান্য টাকায় সেইসব কচ্ছপ কিনে নেয় পাচারকারীরা।