Toto In Sandeshkhali: সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৩৫ কিমি, চালাক ছাড়াও বসতে পারবেন ৪ সওয়ারি। ঘটনাবহুল সন্দেশখালিতে এই কয়েকদিনে তিন চাকার টোটো-ই হয়ে উঠেছে যাতায়াতের বড় ভরসা।
রাজ্য পুলিশের ডিজি থেকে মন্ত্রী, শাসক দলের নেতা, বিরোধী দলনেতা, সাংবাদিক, এমনকী বিভিন্ন মামলায় ধৃতদেরও ধরার ক্ষেত্রে টোটো বা ই-রিকশার ওপরই নির্ভর করতে হয়েছে। টোটো-ই সুন্দরবনের সন্দেশখালি দ্বীপের যাত্রী পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম।
'আমি খুবই গর্বিত কারণ ডিজিপি স্যার (পশ্চিমবঙ্গের ডিজিপি রাজীব কুমার), শুভেন্দু অধিকারী (বিজেপি বিধায়ক এবং বিরোধী দলের নেতা) এবং সুকান্ত মজুমদার (বিজেপি রাজ্য সভাপতি) আমার টোটোতে চড়েছিলেন। আমার টোটোতে তাঁদের গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে সেই সময় অনুভব করেছিলাম।' বলেন সন্দেশখালির টোটো চালক পুলক দাস (২৩)।
টোটো চালক পুলক দাস স্নাতক। তারপর চাকরি না পাওয়ায় তিনি গত দেড় বছর ধরে টোটো চালাচ্ছেন। সন্দেশখালির বাসিন্দা পুলকের বাবা একটি হার্ডওয়্যারের দোকানের মালিক। তাঁক কথায়, 'আমি স্নাতক হওয়ার পর চাকরি পাইনি, তাই আমি টোটো চালাতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমি কল্পনাও করিনি যে, আমার টোটোয় এত বিখ্যাত যাত্রীরা চড়বেন।'
আরও পড়ুন- Kunal Ghosh: বিস্ফোরক কুণাল ঘোষ! দলেরই নেতাকে তুলোধনা! বড়সড় ঝড়ের ইঙ্গিত?
সন্দেশখালিতে অস্থিরতা সত্ত্বেও, গত কয়েক সপ্তাহে পুলক দাসের আয় বেড়েছে। বলছিলেন, 'আগে, দিনে আমি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করতাম। সাম্প্রতিক বিক্ষোভের পরে এবং সব জায়গা থেকে সন্দেশখালিতে লোকজন আসায়, আমার আয় প্রতিদিন বেড়ে হয়েছে ৭০০-৮০০ টাকা। এঁরা বেশিরভাগই সারা দিনের জন্য আমার টোটো বুক করে। তবে আমি চাই দ্রুত শান্তি ফিরে আসুক। কারণ আমি এখানকারই বাসিন্দা এবং মানুষের কষ্ট বুঝি।'
পুলক দাসের মতে, সন্দেশখালিতে প্রায় ১৩০টি ই-রিকশা চলছে। প্রতিটি ই-রিকশার দাম প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজারপ টাকা। এমনকী পুলিশ স্টেশন এবং ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসগুলি তাদের আধিকারিকদের যাতায়াতের জন্য টোটোর উপর নির্ভর করে। সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিডিও অরুণ কুমার সামন্ত বলেন, 'শুধু সন্দেশখালি দ্বীপেই নয়, সুন্দরবনের যেখানেই আপনি যান যেখানে মূল ভূখণ্ড থেকে দ্বীপে বা দ্বীপের মাঝখানে গাড়ি সহ চার চাকার গাড়ি পরিষেবা নেই, টোটো-ই হল পরিবহনের প্রধান মাধ্যম৷ ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ছাড়া টোটো-ই এই দ্বীপে একমাত্র গণপরিবহনের মাধ্যম।' বিডিও বলেন, 'বর্তমানে ই-রিকশার চাহিদা অনেক বেশি। পরিদর্শনের জন্য যানবাহন পেতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের অনুরোধের পরে, রাজ্য সরকার প্রশাসনিক ব্যবহারের জন্য তিন বা চারটি ই-রিকশা কেনার জন্য অর্থ মঞ্জুর করেছে।'
দ্বীপে কোনও অ্যাম্বুলেন্স নেই, ব্যক্তিগত গাড়িও নেই। আপনার অফিস, কলেজ বা হাসপাতালে যেতে যতই তাড়াহুড়ো করা হোক না কেন, সন্দেশখালিতে টোটো-ই আপনার সেরা বাজি। এই টোটো চালকরাও 'ঝোপ বুধে কোপ মারেন'। ভাড়া দ্বিগুণ করে দেন। সন্দেশখালি ফেরিঘাটে শঙ্কর মাইতি (56) বলেন, 'সন্দেশখালি একটি বড় দ্বীপ। আমরা প্রতিটি বাড়ি চিনি। সুতরাং, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে যাঁরাই বাইরে থেকে এখানে আসছেন তাঁদের আমরা প্রায়ই গাইড করে দিচ্ছি।'
উত্তর 24 পরগণা জেলার সন্দেশখালির ২ নম্বর ব্লক ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই খবরের শিরোনামে। একানকার তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান সহ শাসক দলের বহু কর্মীর বিরুদ্ধে এলাকার বাসিন্দাদের জমি, ভেড়ি দখল, মহিলাদের যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। লাঠি-ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভ করেন মহিলারা। শেষপর্যন্ত বৃহস্পতিবার ভোটে সন্দেশখালি থেকে ৩৩ কিমি দূরে অবস্থিত মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয় শাহজাহানকে।