Advertisment

চরম বেকায়দায় তৃণমূল! রায়নায় নজরে সিপিএমের 'খেল'

তৃণমূল সমর্থিত নির্দলরাই রায়নায় পঞ্চায়েত ভোটে জোড়াফুলের মুখ- পাশা বদলাতে মরিয়া সিপিএম

IE Bangla Web Desk এবং Chinmoy Bhattacharjee
New Update
raina tmc cpim panchayat election 2023

একদা দলীয় দুর্গে সুদিন ফিরছে কাস্তে-হাতুড়ির?

তৃণমূল কংগ্রেস দলের প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছিল। তালিকায় নাম থাকা পূর্ব বর্ধমানের রায়না ২ ব্লকের প্রার্থীরা এবারের পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বির জন্য মনোনয়নও জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু, দলের প্রার্থীদের একটা বড় অংশ পেলেনই না তৃণমূলেন প্রতীক। উলটে দলের ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যাঁরা গোঁজ প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁরাই পেলেন দলের প্রতীক। এই ঘটনার জেরে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়েছে রায়নার তৃণমূল শিবিরে। আর তা নিয়ে বেজায় উৎফুল্ল বিরোধী শিবির।

Advertisment

একদা বামদুর্গ বলে পরিচিত ছিল রায়না। তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই রায়নায় চরমে পৌঁছেছিল সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাত। সেই সংঘাতের জেরে প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে থাকত রায়নার নাম। রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলের পর ধীরে ধীরে এখানে দাপট বাড়তে শুরু করে ঘাসফুলের। কিন্তু, দাপট বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দলের গোষ্ঠী কোন্দলও। যার প্রভাবে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে রায়না ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল শিবির ।

শাসক, বিরোধী শিবির ও ব্লক প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রায়না ২ ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৪৪। আর, পঞ্চায়েত সমিতির আসনসংখ্যা ২৪। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন দাখিল শুরু হবার পর রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব এই ব্লকের সবক'টি আসনে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাঁদের নামের তালিকা পাঠিয়ে দেন। সেইমত সব আসনেই তৃণমূলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেন। দলের এইসব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্দল অর্থাৎ গোঁজ প্রার্থী হয়েও অনেকে মনোনয়ন জমা করেন। এরপর প্রতীক পাওয়ার নির্দিষ্ট দিন এগিয়ে আসতেই প্রতীক পাওয়া নিয়ে তৃণমূলের কোন্দলের জেরে সবকিছু ওলটপালট হতে শুরু করে। মনোনয়ন প্রত্যাহার ও ফর্ম 'বি' পূর্ণ করে দলীয় প্রতীক পাবার শেষদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ব্যাকফুটে চলে যান দলের বহু প্রার্থী। আর, কেল্লাফতে করে ফেলেন নির্দলরা।

সিপিএম ও শাসক দলের নেতৃত্বের কাছ থেকে এদিন রাত পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রায়না ২ ব্লকে তৃণমূলের হয়ে গ্রামপঞ্চায়েত স্তরে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন ৮০টি বুথের প্রার্থীরা। তাঁরা এখন তৃণমূল সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হয়ে গিয়েছেন। চারটি বুথে আবার তৃণমূলের কোন প্রার্থীই নেই। এই চারটি বুথে লড়াই হবে সিপিএম ও বিজেপির মধ্যে। এছাড়াও কাইতি শ্রীরামপুর এলাকার একটি বুথে তৃণমূল প্রাথী সুব্রত ঘোষ মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এই বুথে সিপিএম প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন।

আর তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েও মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এমন উল্লেখযোগ্য তিন জন হলেন ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অসীম পাল, সহ-সভাপতি অরুণ চৌধুরি এবং যুব সভাপতি জুলফিকার আলি খাঁ। তাঁরা ক্ষোভে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এই তিন আসনে নির্দল হয়ে যাঁরা মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন, তাঁরা তৃণমূলের প্রতীক পেয়ে গিয়েছেন। এইসব দেখে তৃণমূলের সাধারণ কর্মী ও সমর্থকরা মনে করছেন, পঞ্চায়েত ভোটে রায়না ২ ব্লকে বড় ধাক্কা খেতে চলেছে ঘাসফুল শিবির।

এমনটা হওয়ার জন্য রায়না ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি-সহ অন্য নেতারা রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অসীম পাল বলেন, 'দলের নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রার্থীরা বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তা জেনেও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনেকে নির্দল হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন। ওইসব দুর্নীতিবাজ নির্দলকেই দলের প্রতীক দেওয়ার ব্যবস্থা করেন আমাদের বিধায়িকা শম্পা ধারা। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কী করে এটা সম্ভব হল, সেটাই আশ্চর্যের।'

আরও ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুন্সি হাসিবুর রহমান বলেন, 'তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড অভিষেক বন্দোপাধ্যায় তাঁর নবজোয়ার কর্মসূচি থেকেই ঘোষণা করেছিলেন, যোগ্য ব্যক্তিদের পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করে দল তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ করবে। সেইমত দল আমাদেরকে ব্লকের যোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠায়। সেই তালিকা অনুযায়ী, দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করেন। তারই মধ্যে দলের ওইসব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিগ্রস্ত বেশকিছু তোলাবাজ মনোনয়ন দাখিল করে। এখন বিধায়ক শম্পা ধারার কথায়, দলের নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রার্থীদের পরিবর্তে দুর্নীতিবাজদের দলের প্রতীক দিয়ে দেওয়া হল। আর দলের প্রার্থীতালিকা অনুযায়ী যাঁরা মনোনয়ন দখিল করেছিলেন, তাঁদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হল। এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।'

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাবার জন্য রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারার ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'দলের ঘোষিত প্রার্থী তালিকার মধ্যেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনেক সিটে দলের ঘোষিত প্রার্থীতালিকার বাইরে আরও ভালো প্রার্থী পাওয়া গিয়েছে। দলীয় ভাবে তাঁদেরই দলীয় প্রার্থী হিসাবে প্রতীক দেওয়া হয়েছে।' তা নিয়ে অসন্তোষের কিছু নেই বলেই জেলা সভাপতি দাবি করেছেন।

আরও পড়ুন- জগন্নাথের রথের দড়ি টানতে গিয়ে ভয়ংকর ঘটনা! তুমুল উত্তেজনা জালালপুরে

তৃণমূলের এই কোন্দলের বিষয়টি জানার পর জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, 'যেমন দল তেমন তার প্রার্থীতালিকা। যে দলে শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই, সেই দলের প্রার্থীও অদল বদল হয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোকেদের তৃণমূলে কোনও স্থান নেই। তোলাবাজরাই তৃণমূলের সম্পদ। তাই তোলাবাজরাই তো তৃণমূলের প্রার্থী হবে।' আর সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মির্জা আখতার আলি বলেন, 'আসলে সবটাই বখরার ব্যাপার। তৃণমূলের ভাণ্ডারে যে যত বখরা দেবে, তার গুরুত্ব তত বেশি। ভালো বখরা দেবার লোক পেয়েছে, তাই তাঁকেই তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে।'

tmc CPIM burdwan Purba Bardhaman panchayat election 2023
Advertisment