অনেকটা বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের কায়দায় হুমকি দিতে শোনা গেল তৃণমূল কংগ্রেসের আরেক জেলা সভাপতিকে। এবার বিজেপির সাংসদ-বিধায়কদের জিভ টেনে ছিঁড়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন মালদা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মালতিপুরের বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সি। শুধু জিভ টেনে ছেঁডা়ই নয়, দিলেন সমাজচ্যুত করার হুমকিও। মালদার বামনগোলার পথসভা থেকে তৃণমূল জেলা সভাপতির এই হুমকির জেরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি। দলের বিধায়ক জুয়েল মুর্মু অভিযোগ করেছেন, এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
মঙ্গলবার মালদার বামনগোলা ব্লকের গঙ্গাপ্রসাদ কলোনি এলাকার পথসভা থেকে বক্তব্য রাখার সময় জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, 'খগেনবাবুরা, যে টাকা পান বলে দাবি করছেন, উনি বলেছেন ২৫ কোটি, আমি বলছি ৩৫ কোটি। পাঁচ বছর ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু, তার আগে ১০-১৫ বছর উনি বিধায়ক ছিলেন। উনি বলবেন রহিম বক্সি গালাগালি করছেন। কত টাকা কন্টাক্টারদের থেকে কমিশন খেয়েছেন? আগের সেই ৩৫ কোটি টাকা কোথায় গেল, তার হিসেব দিতে হবে।'
এরপরই রহিম বক্সি বলেন, 'রাস্তা তৈরি হওয়ার হিসেব নিচ্ছেন! ৩৫ কোটি থেকে কত টাকা কমিশন খেয়েছেন? সেই খগেনবাবু এখন বহু কথা বলছেন। বড় বড় আওয়াজ দিচ্ছেন। কিন্তু, মানুষ এবার আর ছেড়ে কথা বলবে না। যে মুখ দিয়ে মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন, যে মুখ দিয়ে মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন, সেই মুখ থেকে জিভটা টেনে বের করে মানুষ প্রমাণ করবে যে মানুষ আপনাদের সঙ্গে নেই।'
মালদা জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, 'আমরা বুক চিতিয়ে বলে যাচ্ছি, আজকে এই কলোনির হাটে যে রাস্তাগুলো হয়নি এখানে কেন্দ্রীয় সরকার যতই বঞ্চনা করুক, খগেন মুর্মু যতই বঞ্চনা করুক, জুয়েল মুর্মু যতই বিরোধিতা করুক, যতই বিজেপি বিরোধিতা করুক, সমস্ত রাস্তা তৃণমূল কংগ্রেস করবে করবে আর করবে। যাঁরা বার্ধক্য ভাতা পাননি, তাঁদের বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা তৃণমূল কংগ্রেস করবে। যাঁরা বাড়ি পাননি, তাঁদের বাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা তৃণমূল কংগ্রেস করবে।'
এরপরই বামেদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন রহিম বক্সি। তিনি বলেন, '৩৪ বছরের একটা সরকার মানুষকে মেরে ফেলার কাজ করছিল। সেই ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিকড় থেকে উপরে ফেলেছেন। কেন্দ্রের এই সরকার তো মাত্র কয়েক বছরের। যে সরকার আমাদের ভাই-ভাইয়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে, লড়াই তৈরি করে, উসকে দিয়ে আমাদের মধ্যে ফাটল তৈরি করে ক্ষমতায় থাকতে চায়, বামনগোলার মানুষ প্রমাণ করেছেন বামনগোলার মাটিতে তাঁদের স্থান নেই।'
বিজেপির জাতপাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে তোপ দেগে খগেন মুর্মু বলেন, 'বিগত দিনেও আমরা জাতপাতের রাজনীতি করিনি। আমরা তার ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের জন্য কাজ করেছি। এটা বামনগোলার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দুটো জেলা পরিষদ জিতিয়ে, ৫টা গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি জিতিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন। তাই খগেনবাবু, আপনি যতই চেষ্টা করুন বামনগোলার মাটিতে আপনাদের স্থান নেই।'
বিজেপির সাধারণ কর্মীদের উদ্দেশ্য করে খগেন মুর্মু বলেন, 'বামনগোলার বিজেপি বন্ধুদের সঙ্গে অবশ্য আমাদের কোনও লড়াই নেই। ফাঁকা মাথা, খালি হাত, তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনও লড়াই নেই। তাঁদের জন্য মমতা ব্যানার্জি লড়াই করছেন। তিনি সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই করছেন। তাই আসুন, মমতা ব্যানার্জির হাত শক্তিশালী করি। এই লোকসভা নির্বাচনে যাঁরা সাংসদ কোটার প্রকল্প থেকে কমিশন খেয়েছে, তাঁদেরকে সমাজ থেকে ছুড়ে ফেলি। যাঁরা বিধায়ক প্রকল্প থেকে কমিশন খেয়েছে, তাঁদেরকে সমাজ থেকে ছুড়ে ফেলি। আসুন আমরা নতুন সংসদ তৈরি করি। উত্তর মালদায় ২০২৬ সালে নতুন বিধায়ক তৈরি করি, তৃণমূল কংগ্রেসকে শক্তিশালী করি।'
আরও পড়ুন- বাংলার নয়া ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর সৌরভ, মহারাজের সামনেই বিরাট ঘোষণা মমতার
রহিম বক্সির এই সব মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হবিবপুরের বিজেপি বিধায়ক জুয়েল মুর্মু। তিনি তৃণমূল নেতার বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, 'নিন্দনীয় ঘটনা। জিভ ছিঁড়ে নেবে বলেছে, এটা ঠিক নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব উন্নয়নের খাতে টাকা বাড়াতে। বিষয়টি আমরা বিধানসভায় তুলব। পার্লামেন্টে, প্রধানমন্ত্রীকে জানাব। গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের। তারা কেন কাজ করছে না? গ্রামের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে কোনও লাভ নেই!'