উৎসবের আমেজেও মধ্যগগনে মহুয়া বিতর্ক। অভিযোগ, পালটা অভিযোগের পালা চলছিল। এতদিন এনিয়ে টুঁ শব্দটি করেনি তৃণমূল। সপ্তমীর দিন অবশ্য মহুয়া মৈত্র ইস্যুতে অবস্থান স্পষ্ট করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের শাসক দলের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
কী অবস্থান তৃণমূলের?
আপাতত শীর্ষ কোনও নেতা নয়। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন বিতর্কে কুণাল ঘোষ বলেছেন, 'একটা বিতর্ক হয়েছে। সেই বিতর্কের উত্তর মহুয়া মৈত্রই সবথেকে ভালো দিতে পারবেন। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের এই বিষয়ে কিছু বলার নেই, দলের কোনও মন্তব্য নেই।'
বিরোধী দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
অর্থাৎ, মহুয়া বিতর্কে এখনই পক্ষ নিতে রাজি নয় তৃণমূল কংগ্রেস। আপাতত কৃষ্ণনগরের সাংসদের পাশে দাঁড়াল না দল। এই বিতর্কে আগামীতে ঘাসফুলের অবস্থান কী হয়, তা নিয়েই জোর চর্চা রাজনৈতিক মহলে। রাহুল সিনহা বলেন, 'আবারও স্পষ্ট হল, এই দলে প্রচুর গোষ্ঠী। কেউ কিছু চোখের সামনে অন্যায় দেখলে একেক নেতা একেক রকম মন্তব্য করেন। মহুয়া যে দোষ করেছেন, তা দলের মুখপাত্রের কথাতেই স্পষ্ট।' অধীর চৌধুরী বলেন, 'খোকাবাবু ছাড়া দলের যে নেতাই বিতর্কিত মন্তব্য করবে, তার পাশ থেকেই সরে যাচ্ছে তৃণমূল। দিনের আলোর মত এটা স্পষ্ট।'
নিশিকান্ত দুবের অভিযোগ
টাকা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে আদানিদের বিরুদ্ধে লোকসভায় প্রশ্ন, দর্শন হিরানন্দানিকে মহুয়ার তরফে সাংসদের ওয়েবসাইটের লগ-ইন এবং পাসওয়ার্ড দেওয়া নিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। এসবের মধ্যেই বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে তৃণমূলের দিকে কড়া প্রশ্ন ছুড়েছেন। দুবে বলেছেন, 'একজন এমপি কিছু টাকার জন্য দেশের নিরাপত্তা বন্ধক রেখেছেন। দুবাই থেকে তাঁর পার্লামেন্টের আইডি খোলা হয়। আর, ওই সময় অভিযুক্ত সাংসদ ভারতে ছিলেন। সমগ্র ভারত সরকার, দেশের প্রধানমন্ত্রী, অর্থ বিভাগ, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো এই এনআইসিতে রয়েছে। আর, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধীরা এসব নিয়ে এখনও রাজনীতি করতে চায়। এটা জনগণের সিদ্ধান্ত যে তদন্তকারী সংস্থাকে এই তথ্য দিক এনআইসি।'
মহুয়া মৈত্রের জবাব
জবাব দিতে দেরি দেরি করেননি মহুয়াও। তিনি এক্স হ্যান্ডেলেই লিখেছেন, 'আসন্ন সিবিআই অভিযানের বার্তাও পেয়েছি। আমি দুর্গাপূজা নিয়ে ব্যস্ত। আমি সিবিআইকে আমন্ত্রণ জানাই বাড়িতে এসে আমার জুতো গুনে যাওয়ার জন্য। তবে প্রথমে অনুগ্রহ করে ১৩,০০০ কোটি টাকার যে কয়লা আদানি ভারতীয়দের কাছ থেকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে এফআইআর করুন। দুঃখিত মিস্টার আদানি। আমি আপনার সঙ্গে আগামী ছয় মাসের জন্য কোনও শান্তি বজায় রাখার চুক্তি করছি না। আর, সেই দ্বিতীয় কোনও চুক্তিও করছি না যেখানে আমি আপনাকে আক্রমণ করতে পারব। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীকে পারব না! আদানি প্রশ্ন না-করার জন্য এতদিন অর্থ ব্যয় করতেন। এখন তিনি প্রশ্ন করার বিরুদ্ধে একটি নকল নগদ লেনদেনের অভিযোগ তৈরি করাতে বাধ্য হয়েছেন।'
আরও পড়ুন- মহুয়াকে আদৌ ডাকবে এথিক্স কমিটি? বড়সড় প্রশ্ন
মহুয়া মৈত্র আরও যা বলেছেন
এর পাশাপাশি কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ লিখেছেন, 'অজানা এফপিআইএস আদানিদের শেয়ারের মালিক। যার মূলকে সেবি খুঁজে পায় না। আর, আদানিরা মুম্বই বিমানবন্দর কেনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ছাড়পত্র পেয়ে যায়। এটাই জাতীয় নিরাপত্তার আসল প্রশ্ন। যেটা প্রতিটি সাংসদের পিএ এবং সাংসদের পরীক্ষা না-করা ইন্টার্ন টিম ইচ্ছামত অ্যাক্সেস করে, সেই ইমেল আইডি জাতীয় নিরাপত্তার আসল প্রশ্ন নয়। এনআইসিকে অনুরোধ করব, দয়া করে সাংসদদের সমস্ত বিবরণ প্রকাশ করুন, যাতে দেখানো যায় যে তাঁদের পিএ এবং ইন্টার্নদের দল যেখানে উপস্থিত ছিল, সেখান থেকেই সমস্ত আইডিগুলো ব্যবহার করেছে। তবে, এই তথ্য ফাঁসের জন্য কোনও জাল ডিগ্রিওয়ালাকে অন্তত ব্যবহার করবেন না!'