Advertisment

বিধায়ক 'অপদার্থ', ব্লক সভাপতি 'কামানেওয়ালা', দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে বিস্ফোরক বর্ধমানের তৃণমূল নেতা

পঞ্চায়েত ভোটের আগে জামালপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন নগ্ন চেহারা নেওয়ায় বেজায় উৎফুল্ল বিরোধী শিবির।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
awas scam bengal tmc mla kalipada mondal shyampur, আবাস দুর্নীতি বাংলা তৃণমূল বিধায়ক শ্যামপুর কালীপদ মণ্ডল

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিরাম টানলেন না তৃণমূলের নেতারা। রবিবার দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক ও ব্লক সভাপতির উদ্দেশ্যে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানালেন বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতারা। তাঁরা নিজেদের দলের বিধায়ককেই 'অপদার্থ বিধায়ক' ও ব্লক সভাপতিকে 'অত্যাচারী হার্মাদ' ও 'কামানেওয়ালা নেতা' বলে কটাক্ষ করলেন। যা নিয়ে জামালপুরের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জামালপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন নগ্ন চেহারা নেওয়ায় বেজায় উৎফুল্ল বিরোধী শিবির।

Advertisment

এদিন জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহেমুদ খান তাঁর পার্টি অফিসের সামনে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেই অনুষ্ঠানে জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাঝি-সহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিন জামালপুরের জৌগ্রামের আমড়া মোড় এলাকায় পালটা দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের আয়োজন করে বিরোধী গোষ্ঠী। সেই অনুষ্ঠানে জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি ও দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি শ্রীমন্ত রায়, চকদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গৌরসুন্দর মণ্ডল-সহ অন্য নেতা ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

publive-image
বিধায়ক অলোক মাঝি ও (ডানদিকে) ব্লক সভাপতি মেহমুদ খান ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

এই প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই অলোক মাঝিকে 'অপদার্থ বিধায়ক' এবং ব্লক তূণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খানকে 'অত্যাচারী হার্মাদ' বলে কটাক্ষ করেন শ্রীমন্ত রায়। আর গৌরসুন্দর মণ্ডল তো কোনও রাখঢাক না-রেখেই দলের ব্লক সভাপতি মেহেমুদ খানকে 'কামানেওয়ালা নেতা' বলে কটাক্ষ করে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে সরাসরি লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।

শ্রীমন্ত রায় বলেন, 'বিধায়ক অলোক মাঝির একটা বিধায়ক কার্যালয় পর্যন্ত জামালপুরে নেই। এটা লজ্জার ব্যাপার। এত বড় অপদার্থ বিধায়ক সারা পশ্চিমবাংলায় আর কেউ নেই।' পাশাপাশি বিধায়ক অলোক মাঝি ও ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেহেমুদ খানকে উদ্দেশ্য করে শ্রীমন্ত রায় বলেন, 'বিধায়ক ও ব্লক সভাপতি হার্মাদদের নিয়ে নোংরা খেলা শুরু করেছেন।'

তাঁদের এই খেলা থেকে সরে আসার কথা বলে শ্রীমন্ত রায় স্মরণ করিয়ে দেন, আগামী দিন এই খেলা আরও ভয়ংকর হবে। দলের ব্লক কমিটি নিয়েও তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ইতিপূর্বে ব্লকের স্কুলগুলোর কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে তাঁদেরকেই সভাপতি করা হয়েছে, যাঁরা ঠিকাদারি করার পাশাপাশি ওই স্কুলগুলোতে কাজ করেন। জামালপুরের রাস্তাঘাটের কোনও উন্নয়ন হয়নি।'

publive-image
শ্রীমন্ত রায় ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

উন্নয়নের নামে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে শ্রীমন্ত রায় অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, 'দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে যাঁরা স্কুলগুলোর উন্নতির জন্য কাজ করছিল, পঞ্চায়েতগুলোকে রক্ষা করার কাজ করছিলেন, তাঁদেরকেই আজ বাদ দেওয়ার প্রবণতা চলছে। তাঁদের জীবন ও সম্পত্তির ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। আর ঠিকাদারদেরই এখন স্কুলের সভাপতি, অঞ্চলের সভাপতি করা হচ্ছে।'

মেহেমুদ খানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে শ্রীমন্ত রায় এ-ও বলেন, 'আপনার হার্মাদগিরি এবং আপনার কিছু পোষ্য কুকুর যাঁরা সব সময় ঘেউ ঘেউ করছে, তাঁদের পিছনে পেট্রোল দিয়ে কী ভাবে তাড়া করতে হয়, সেটা আমরা জানি। আপনারা সাবধানে থাকুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ ও নীতি থেকে সরে গিয়ে আপনারা অত্যাচার বাড়াচ্ছেন।' লুটের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও শ্রীমন্ত রায় অভিযোগ করেছেন।

আরও পড়ুন- ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘সম্মান’? বিজেপি কর্মীদের ধন্যবাদ দিলেন অভিষেক

শ্রীমন্ত রায়ের মন্তব্য প্রসঙ্গে বিধায়ক অলোক মাঝি বলেন, 'দলের উচ্চ নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি। ওনারা এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেবেন।' একইসঙ্গে অলোক মাঝি বলেন, '২০২১-এর বিধানসভা ভোটে যিনি নিজের বুথে দলকে জেতাতে পারেন না, তিনি এখন বড়বড় কথা বলছেন। দল এবং জামালপুরের মানুষ আমাকে যোগ্য মনে করেছে বলেই বিধায়ক নির্বাচিত করেছে। জেলা তৃণমূলের যুব সভাপতিও করেছিল।'

যিনি জামালপুরবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে বসে আছেন তাঁর কথার কোনও গুরুত্ব নেই বলেই অলোক মাঝি মন্তব্য করেছেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'এমন সব মন্তব্য ঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ নেব।' যদিও ব্লক তৃণমূলের সভাপতি এদিন সন্ধ্যাতেও বলেন, 'কে কী বলেছে জানি না। ভিডিও ফুটেজ পেলে দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানাব। দল প্রয়োজনীয় যা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নেবে।' বিজেপির যুবমোর্চার জামালপুরের কনভেনার অজয় ডকাল বলেন, 'সবে তো শুরু হল। পঞ্চয়েত ভোটে গোটা রাজ্যবাসীকে হয়তো তৃণমূলীদের রক্তক্ষয়ী লড়াই দেখতে হতে পারে। মনে হয় জামালপুরেও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না।'

Foundation TMC MLA tmc
Advertisment