সামান্য বচসা। আর, তাতেই দ্রুতগতিতে ছুটে চলা ট্রেন থেকে সহযাত্রীকে ঠেলে ফেলে হত্যার চেষ্টা করলেন এক ব্যক্তি। প্রথমে মারধর। তারপর সেই ছুটে চলা ট্রেন থেকে খোলা দরজা দিয়ে রাতের অন্ধকারে ঠেলে ফেলেই দিলেন ওই যাত্রীকে। বিহার, উত্তরপ্রদেশের মত অপরাধের ঘটনায় প্রথমের দিকে থাকা কোনও রাজ্য না। এই ভয়াবহ ঘটনা শনিবার রাত চেয়ে চেয়ে দেখল এরাজ্যে, পশ্চিমবঙ্গে।
সঙ্গে ধরা পড়ল কতটা অসহায় অবস্থায়, প্রাণ হাতে নিয়ে এরাজ্যে ট্রেনে যাতায়াত করেন যাত্রীরা। ঘটনাটি ঘটেছে আপ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে। কিন্তু, এতবড় ঘটনার পরও কোনও হেলদোল দেখা গেল না অভিযুক্ত সহযাত্রীর। নির্বিবাদে এক সহযাত্রী যুবককে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে অভিযুক্ত যুবক ট্রেনের আসনে এসে বসলেন। যাত্রা করলেন গন্তব্যে, আর পাঁচ জন সাধারণ যাত্রীর মতই।
শুধু কি তাই! ঘটনার পর একবারের জন্যও ট্রেনের ওই কামরায় দেখা মিলল না আরপিএফ, টিকিট পরীক্ষকদের মত দায়িত্বে থাকা রেলের কোনও আধিকারিকের। সেই ছবিও ধরা পড়েছে যিনি প্রাণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে গোটা ঘটনা মোবাইলে বন্দি করেছেন, সেই রেলযাত্রীর ক্যামেরায়।
বরাতজোরে ওই যুবক অবশ্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। তবে, সেটা সেই সহৃদয় রেলযাত্রীর জন্য। যিনি প্রাণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে এই বিভীষিকাময় ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেছেন। ওই যাত্রী তাঁর মানবিকতা বোধ থেকে মুরারই থানায় ঘটনাটি জানান। সেখানকার আধিকারিকদের তাঁর ফোনে বন্দি ভিডিওটি দেখান। এরপর মুরারই থানা থেকে খবর যায় রেল পুলিশের কাছে। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আরপিএফ গিয়ে রামপুরহাট-তারাপীঠ রোড স্টেশনের মাঝে রেললাইনে পড়ে থাকা আক্রান্ত যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। ভর্তি করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
আরও পড়ুন- ‘যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী’, খামারবাড়ি সাজানোয় ‘সরকারি তৎপরতা’-কে তুলোধনা শুভেন্দুর
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম যুবকের নাম সজল শেখ। বাড়ি বীরভূমের রামপুরহাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুন্দিপুর এলাকায়। সে শনিবার রাতে আপ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের একটি কোচে সাঁইথিয়া স্টেশন থেকে উঠেছিল। সে যে বেঁচে আছে, এখনও সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না সজল।
আমাদের প্রতিনিধিকে জখম ওই যুবক জানিয়েছে, 'সাঁইথিয়া থেকে ওঠার পর মল্লারপুর স্টেশনে নেমেছিলাম। সেখানে মদ্যপান করে ফের ট্রেনে উঠি। এনিয়ে কোচে কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে আমার বচসা হয়। তার মধ্যে একজন যাত্রী আমাকে মারধর করে। আমিও পালটা ওই যাত্রীকে মারার জন্য পকেট থেকে ব্লেড বের করি। তখন ওই যাত্রী আমাকে চলন্ত ট্রেন থেকে খোলা দরজা দিয়ে ফেলে দেয়।
যখন জ্ঞান ফিরল দেখি রেললাইনে পড়ে আছি। নিজে ওঠার ক্ষমতা ছিল না। পরে রেল পুলিশ আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।'
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম যুবক সজলের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রেল-সহ বিভিন্ন থানায় একাধিক চুরি, ছিনতাই, রাহাজানির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু, তাই বলে এভাবে কাউকে ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া যায়? এটা রেলের নিরাপত্তাহীনতা নয়? আমাদের প্রতিনিধি যোগাযোগ করলেও এই ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি রেলকর্তারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রামপুরহাট রেলপুলিশের এক আধিকারিক শুধু বলেন, 'আমরা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। সব থানায় অভিযুক্ত যাত্রীর ছবি পাঠানো হয়েছে। তবে, এখনও ওই যাত্রীর পরিচয় জানা যায়নি।'