করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলেছে। এতদিনের এক অভ্যাস থেকে নতুন ধরনের পড়াশোনা- অনলাইন ক্লাস এবং রোজকার নিয়মে ছেদ পড়েছিল। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে শৃঙ্খলাতে যেন মরচে পড়ার জোগাড় - তবে এতদিন পর ফের স্কুলে ফিরেছে পড়ুয়ারা। তবে তাদের মধ্যে কী ভিন্নরকম পরিবর্তন চোখে পড়ছে? রোজকার জীবনযাত্রায় এক বিশাল বিরতির পরে ঠিক কতটা বিদ্যালয়ের পরিবেশকে মানিয়ে নিতে পারছে তারা? শহর থেকে শহরতলির শিক্ষকদের থেকেই জানার চেষ্টা করেছিল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
চেনা ছন্দে ফিরেছে স্কুল পড়ুয়াদের জীবন। করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে স্কুলের পঠনপাঠন কেমন চলছে? এই প্রসঙ্গেই, সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলের শিক্ষিকা সোহাগ কানুনগো জানিয়েছেন, বাচ্চারা স্কুলে আসতে পেরে খুবই উত্তেজিত, ওদের আনন্দের সীমা নেই। তবে একটু যেন গুটিয়ে রয়েছেন অভিভাবকরা। এমন অনেক পড়ুয়া যারা শারীরিকভাবে দুর্বল তাদের বাবা মায়েরা একদমই নির্বিঘ্নে ছাড়তে পারছেন না। তবে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ১০০ শতাংশ তা ঠিক নয়। ভয় ওদের মধ্যে এখনও রয়েছে, সচেতনতা স্কুলের গণ্ডির মধ্যে রয়েছে তবে বাইরে অনেকেই মাস্ক খুলে ঘুরছে। যে ক্লাসগুলো করা আবশ্যিক, এমনকি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলোতে উপস্থিত থাকতে ওরা বাধ্য। বন্ধুদের সঙ্গেও সাংঘাতিক দূরত্ব থাকছে ওদের। তিনি বলেন, "সিলেবাস নিয়ে অনেক চিন্তা থাকছে যেহেতু সামনেই বোর্ড পরীক্ষা তাই সব দিক দেখেই এগোনো হবে।"
অন্যদিকে বরানগর রাজকুমারী মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা সাহানা সেনগুপ্ত বলেন, "উঁচু ক্লাসের ছাত্রীরা আসছে বটে তবে এতদিনের একটা অভ্যাস অনলাইন ক্লাসের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এই স্কুলগণ্ডির বদ্ধভাব অনেকেই মেনে নিতে পারছে না। আচরণ ঠিক স্বাভাবিক নয় ওদের। এমন কিছু প্রশ্ন করছে যেগুলো এই ক্লাসের পড়ুয়াদের থেকে কাম্য নয়। একটা ভীতি কাজ করছে ওদের মধ্যে। আর যদি ছাত্রীদের উপস্থিতির কথা বলতে হয় তবে একথা বলাই ঠিক হবে যে এখনও ওদের মধ্যে ভয় কাটেনি, স্কুলে আসতে চাইছে না। এলেও বন্ধুদের থেকে দূরে দূরেই থাকছে, তবে শিক্ষিকারা চেষ্টা করছেন এমনকি বারবার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেও উৎসাহ দেওয়ায় ত্রুটি নেই।" সঙ্গে তিনি এমনও বলেন, "এখন যেহেতু বেশিরভাগ স্কুলেই পরীক্ষা চলছে তাই সকলেই আসতে বাধ্য তারপরেও নিজেদেরকে ভীষণ ভাবে গুটিয়ে রেখেছে পড়ুয়ারা। মানসিক স্তব্ধতা ঘিরে রেখেছে ওদের, অবধারিত কাউন্সেলিং প্রয়োজন।"
একই প্রসঙ্গে শহরতলির হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলের শিক্ষক শ্রী শুভ্র কুমার চক্রবর্তী বলেন, "প্রথমদিকে ছাত্ররা একেবারেই আসতে চাইত না । তবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের শুধুই প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য আসতে হবে। সেই কারণেই ওদের উপস্থিতি অনেক বেশি। যত দিন গড়াচ্ছে - ছেলেদের ভয় একটু কমেছে। আর সামনে যেহেতু দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা তাই ওদের মধ্যে একটু ভীতি রয়েছে যে এবছর পরীক্ষা দিতে হবে। সেদিকে ওদের পড়াশোনায় মতিগতি রয়েছে। এমনকি যেহেতু চাপ অনেক কম তাই শিক্ষকরাও এখন সময় নিয়েই ছাত্রদের পড়াতে পারছেন।"
আরও পড়ুন Omicron আতঙ্কে নাজেহাল বিশ্ব, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
অন্যদিকে হুগলি গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা কুমকুম গোস্বামীর মতে, "অনেকদিনের বিরতি ছেড়ে বেরোনো খুব মানসিক চাপের সৃষ্টি করছে ওদের কাছে। বেশিক্ষণ ক্লাস করতে চাইছে না, এমনকি বিরক্তি চোখে মুখে ফুটে উঠছে। ছোট ছোট বিষয়গুলোও ওরা ভুলে গেছে।" পরীক্ষার হলে কোন জিনিসটা কোথায় রাখতে হবে সেটা নিয়েও ওদের প্রশ্ন দেখেই অবাক হচ্ছেন অনেক শিক্ষিকারা। তবে হাল ছাড়লে চলবে না, ওদেরকে সুযোগ আর সময় দুটোই দিতে হবে। ছাত্রীরা আসছে বটে তবে মনের দিক থেকে এখনও ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে উত্তর দিতে ভীতি কারওর আবার হাতের লেখায় রয়েছে সমস্যা। অনেক ছেদ পড়েছে পড়াশোনায়।
অতিমারি আতঙ্ক কাটিয়ে উঠেই যেন পুনরায় চেনা ছন্দে ফিরেছিল প্রত্যেকেই। শিক্ষকদের বক্তব্য, রোগ নিয়ে ওদের সামনে আলোচনা না করাই ভাল। এগুলি ওদেরকে আরও মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। বরং ভীতি কাটিয়ে ওদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আগ্রহী করে তুলুন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন