দলের প্রতিষ্ঠা দিবসেই বিজেপি জেলা কার্যালয়ে ধুন্ধুমার। দলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তুমুল গন্ডগোল। হাতাহাতি-মারামারি-ভাঙচুর বাদ গেল না কিছুই। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে পূর্ব বর্ধমানের ঘোরদৌড়চটি এলাকায় দলের এই গোষ্ঠী কোন্দলের দায় শাসকদল তৃণমূলের কাঁধে চাপিয়েছেন গেরুয়া নেতৃত্ব। তবে বিজেপির এই অভিযোগ উড়িয়েছে তৃণমূল শিবির।
বৃহস্পতিবার একদল বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী রাজু পাত্র নামে এক বিজেপি নেতার নেতৃত্বে পূর্ব বর্ধমানের ঘোরদৌড়চটির জেলা কার্যালয়ের সামনের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পাশাপাশি গেটের সামনে চলে বিক্ষোভ। দলের কার্যালয়ের ভিতরে আটকে পড়েন জেলা যুব মোর্চার সভাপতি পিন্টু সাম-সহ অন্যান্যরা। এরপর তালা খোলা নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। তবুও বিক্ষুব্ধরা তালা না খোলায় পার্টি অফিস থেকে হাতুড়ি দিয়ে তালা ভেঙে দেয় এক কর্মী। যা নিয়ে শুরু হয় হাতাহাতি।
পিন্টু সামের নেতৃত্বে হাতুড়ি এবং লাঠি নিয়ে বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের দিকে তেড়ে যায় একদল কর্মী। এতেই পিছু হটে বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বর্ধমান থানার পুলিশ। তারাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এরই মধ্যে বিজেপি কার্যালয়ের উল্টো দিকে বিক্ষুব্ধদের অস্থায়ী ক্যাম্প ভেঙে দেয় যুব মোর্চার কর্মীরা।
আরও পড়ুন- ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে ব্লকে-ব্লকে সোচ্চার হোন’, কর্মীদের বার্তা মমতার
ঘটনার সূত্রপাত মাসখানেক আগে থেকে। বর্ধমান সদর জেলার সহ সভাপতি শ্যামল রায়কে শোকজ করার পর কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। তিনি দল নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এরইমধ্যে বহিষ্কার করা হয় শ্যামলকে। এরপর আরও কয়েকজন নেতা কর্মী এবং পদাধিকারী পদত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ চরম আকার নেয়। বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি পিন্টু সাম বলেন, 'দলে থাকতে গেলে দলের নিয়মনীতি মেনেই চলতে হবে। দলই ঠিক করবে কে কোন পদে থাকবেন। তাই দলবিরোধী কোনও কাজ আমরা বরদাস্ত করব না।'
অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ রাজু পাত্রের অভিযোগ, 'অযোগ্য সভাপতি অভিজিৎ তা একদম নিস্ক্রিয়। ফলে দলের কাজ ব্যহত হচ্ছে। আন্দোলন গতি পাচ্ছে না।' ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও বিজেপি জেলা অফিসে ভাঙচুর হয়। তৎকালীন জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীকে সরিয়ে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে সভাপতির দায়িত্ব পান অভিজিৎ তা।
আরও পড়ুন- বিরাট জটে পঞ্চায়েত ভোট? শুভেন্দুর মামলায় কী পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের?
কিন্তু, জেলায় বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর কার্যত 'হাওয়া' হয়ে যান সভাপতি, অভিযোগ কর্মীদের একাংশের। যা নিয়ে ক্ষোভ ছিল দলের অন্দরেই। সেই ক্ষোভ দিনে দিনে বিরাট আকার নিচ্ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগে কোন্দল মিটিয়ে কীভাবে সংগঠন মজবুত করে বিজেপি, এখন সেটাই দেখার।
যদিও বিজেপি অফিসে ভাঙচুর নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসকদল। তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, 'ওরা নিজেরাই নিজেদের অফিস ভাঙে। নিজেরাই তালা দেয়। ওরা আবার আমাদের সঙ্গে লড়াই করবে। আগে নিজেদের ঘর সামলাক বিজেপি।' জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দোপাধ্যায় বলেন, 'এই ঘটনার পিছনে শাসকদলের হাত আছে। তাদেরই কৌশলে পড়েছেন কয়েকজন কর্মী।'