প্রায় দু'সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর শনিবার থেকে ফের চালু হল হাজারদুয়ারি ট্রেন। রেল দফতরের যুদ্ধকালীন তৎপরতার মধ্যে দিয়েই চালু হল কৃষ্ণপুর থেকে কলকাতা(চিৎপুর) শাখার ডাউন হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেসের পরিষেবা। এই ট্রেনটি বহু মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম। কিন্তু নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠা মুর্শিদাবাদে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বহু ট্রেনে। যার মধ্যে ছিল এই হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেসও।
ফের কলকাতা স্টেশন থেকে হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস চালু হওয়ায় স্বস্তিতে যাত্রীরা। মুর্শিদাবাদ প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক এ আর খান বলেন, "আমাদের গর্বের ট্রেন হাজারদুয়ারি চালু হওয়ায় প্রচন্ড খুশি সকলে। কিছু লোকের উস্কানিমূলক কথায় যেভাবে বিক্ষোভকারীরা তান্ডব চালিয়ে কৃষ্ণপুর, লালগোলা বেলডাঙ্গা স্টেশনে ভাঙচুর করে, চোখের সামনে হাজারদুয়ারি ট্রেনটিকে পুড়িয়ে দিয়েছিল, সে কথা মনে পড়লে এখনও চোখে জল চলে আসে। জাতীয় সম্পত্তি তথা মানুষের পরিষেবা ব্যাহত করা মেনে নেওয়া যায় না। তবে আমরা সকলে এখন খুশি এই ভেবে যে ফের একবার আমাদের জেলার গর্ব এই হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস চালু হওয়ায় দেশবাসীর কাছে আমাদের মাথা নত হওয়া থেকে রক্ষা পেল।"
প্রসঙ্গত, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভের রেশ এসে পড়েছিল রাজ্যে। ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে কৃষ্ণপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারদুয়ারী এক্সপ্রেসেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ওই আন্দোলনের ধাক্কায় শুধু হাজারদুয়ারী ট্রেন-সহ আরও বেশ কয়েকটি ট্রেনও পুড়ে গিয়েছিল আগুনে। কিন্তু ঐতিহ্যশালী এই হাজারদুয়ারি ট্রেনের ভস্মীভূতের ঘটনায় কার্যত মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদ। লালগোলার বাসিন্দা ইজাজ আহমেদ,রাজা কর্মকার, রহিম শেখেরা বলেন , “ওই দিন চোখের সামনে দেখেছিলাম কিছু মানুষ ট্রেনটিতে আগুন দিয়ে দিল। কিছু করতে পারিনি কিন্তু মনে হয়েছিল চোখের সামনে কেউ নিজের সন্তানকে পোড়াচ্ছে । সেই বেদনা কোনও দিনই ভুলতে পারব না।"
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদ এবং হাজারদুয়ারি ট্রেন ঐতিহ্যের নিরিখে প্রায় সমার্থক রাজ্যবাসীর কাছে। হাজারদুয়ারী ট্রেনে করে কলকাতা থেকে প্রচুর পর্যটক মুর্শিদাবাদ ঘুরতে আসেন আবার ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য স্থানগুলি দর্শন করে একই দিনে সওয়ার হন কলকাতামুখী ট্রেনটিতে। মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “২০০৯ সালে ৯ ফেব্রুয়ারী ওই ট্রেনটি চলাচল শুরু করে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য এরপর থেকেই পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে ইতিহাসের চাদরে ঘেরা মুর্শিদাবাদে। আসলে হাজারদুয়ারিতে সওয়ারি হয়ে হাজারদুয়ারী ভ্রমণ এ এক অন্য অনুভূতি। তাছাড়া এক ট্রেনে এসে ফের একই ট্রেনে ফিরে যাওয়ায় সময়ও নষ্ট হয় না।” রেল সূত্রে খবর, সিগন্যালিং সিস্টেম এখনও অকেজ থাকায় এদিন ট্রেনটি লালগোলার আগের স্টেশন কৃষ্ণপুর পর্যন্তই আপাতত চলাচল করবে।