মাউন্ট রেনক-এ দাঁড়িয়ে ৭৮০ বর্গফুটের জাতীয় পতাকা উত্তোলন। পর্বতারোহণের ইতিহাসে নজির গড়লেন প্রতিবন্ধী এক যুবক। আর এর মাধ্যমেই নতুন বিশ্ব রেকর্ডও তৈরি করেছেন বেলঘরিয়ার উদয় কুমার।
এক পায়ে বিশ্বজয়ে মরিয়া! ৭০ ম্যারাথনের পর লক্ষ্য এভারেস্ট জয়। অর্থ সংস্থানে উদয়ের ভরসা ফুড ডেলিভারি। আর তা করেই মাউন্ট রেনক-এ দাঁড়িয়ে ৭৮০ বর্গফুটের জাতীয় পতাকা তুলে সকলকে চমকে দিলেন তিনি।
ক্রাচ হাতে তরতাজা এক যুবককে খাবার ডেলিভারি করতে দেখে গ্রাহকদের অনেকেই অবাক হয়েছেন। মনের জোরে যে লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব তা বারে বারে প্রমাণ করেছেন উদয় কুমার। ট্রেনদুর্ঘটনায় পা হারিয়ে থেমে থাকেননি। ১১টি রাজ্যে ৭০-এর বেশি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন তিনি। তার এই মনের জোরকে স্যালুট জানিয়েছে গোটা দেশ।
ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় হলে যে প্রতিবন্ধতাকে কাটিয়ে ওঠা যায় তা প্রমাণ করেছেন উদয় কুমার। হাজারো প্রতিকূলতা সত্বেও এভারেস্ট জয়ের মরিয়া চেষ্টা, চ্যালেঞ্জকে সঙ্গী করেই জীবনে বেঁচে থাকার 'আনন্দ' উপভোগ করে চলেছেন উদয় কুমার। উদয়ের ‘জীবন জার্নি’ সকলের মত অবাক করবে আপনাকেও।
শারিরীক অক্ষমতাকে উপেক্ষা করেই ৭০-এর বেশি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন তিনি। বরাবরই লক্ষ্য এভারেস্ট অভিযান। অবশেষে একধাপ সফল। মাউন্ট রেনক-এ দাঁড়িয়ে ৭৮০ বর্গফুটের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সকলকে চমকে দিয়েছেন উদয়। সংসার চালাতে একটি বেসরকারি সংস্থার কাজের পাশাপাশি সুইগি ডেলিভারি বয় হিসাবেও কাজ করছেন উদয়। ক্রাচ হাতে তরতাজা এক যুবককে খাবার ডেলিভারি করতে দেখে গ্রাহকদের অনেকেই অবাক হয়েছেন।
ট্রেন দুর্ঘটনার স্বীকার উদয়ের মনের জোরকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলেই। শরীর সঙ্গ না দিলেও মানসিকভাবে প্রচন্ড দৃঢ় তিনি। নিজেকে তৈরি করতে অনেকগুলি দিন সময় লেগেছে। আজ সামান্য বেতনের চাকরি করে সংসার চালিয়ে স্বপ্ন দেখেন এভারেস্ট জয়ের। রেড রোডের ম্যারাথন হোক অথবা গোয়ার ম্যারাথনের ইভেন্ট সকলের নজর কেড়েছে কৃত্রিম পা লাগানো এই তরতাজা যুবকটি। লক্ষ্য খ্যাতি অর্জন নয়, সবার মত নিজেকে প্রমাণ করা।
উদয় কুমার বর্তমানে চাকরিসূত্রে বেলঘরিয়ায় থাকেন। মাত্র সাড়ে আট হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেই দিন চালান স্ত্রী ও ছেলে মেয়ের সঙ্গে। কিন্তু আজকের এই দুর্মূল্যের বাজারে সামান্য আট হাজার টাকাতে কী’ই বা হয়! তাই অতিরিক্ত উপর্জনের আশায় সুইগি ডেলিভারি বয়ের কাজও করেন অবসর সময়ে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওয়ান লেগ উদয় নামের হ্যাশট্যাগও তৈরি হয়ে গিয়েছে। তার মনের জোর আর ইচ্ছাশক্তিকে স্যালুট জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
বরাবরই খেলাধুলার প্রতি অগাধ ভালবাসা। হঠাৎ করে ২০১৫ সালের এক ট্রেন দুর্ঘটনা মুহুর্তেই সবটা বদলে দিয়েছিল তখন বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান। দীর্ঘ এক বছরের চিকিৎসায় প্রাণটা বাঁচলেও বাদ পড়ে একটি পা। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে উদয়ের। তখন থেকেই শুরু লড়াই। বেঁচে থাকার লড়াই, সবার মত নিজেকে প্রমাণ করার লড়াই।
বরাবরই অফিসের সহকর্মীরা উদয়কে মনের জোর দিয়েছেন। স্ত্রী’র থেকেও মিলেছে সাপোর্ট। ভাড়া বাড়িতে থাকলেও উদয়ের লক্ষ্য অলিম্পিক। কৃত্রিম পা লাগিয়ে চাকরির পাশাপাশি জোর অনুশীলনও চালাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যেই তিনি মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে সামিল হতে চেয়ে শুরু করে দিয়েছে ট্রেনিং। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি মাঝে মধ্যেই আপলোড করেন কৃত্রিম পায়েই ট্রেকিং এর রোমহর্ষক কিছু ভিডিও। যা দেখলে অবাক হতে হয়।
উদয় কুমার বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত তিনি ১১ টি রাজ্যে ৭০-এর বেশি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছি। পরের লক্ষ্য অলিম্পিক ও এভারেস্ট অভিযান। তবে সামান্য বেতনের কারণে মাঝে মধ্যে পিছিয়ে পড়তে হয় তাকে। সেই কারণেই সুইগির ডেইভারি বয়ের কাজকে বেছে নিতে হয়েছে। মানুষজন-বন্ধুবান্ধব সকলেই আমার এই কাজের প্রশংসা করেছেন। ফলে মনের জোর অনেকটাই বেড়েছে। তবে যে সামান্য টাকা উপার্জন তাতে সংসার চালানো দায়।
একই সঙ্গে প্রবল আত্মবিশ্বাসী উদয়ের কথায়, ‘অর্থের সংস্থান হলে মাত্র এক বছরেই অসাধ্য সাধন করবেন তিনি’। উদয়ের এই জীবনযুদ্ধ প্রতি মুহুর্তে মনে করিয়ে দেয় এভাবেও ইচ্ছেপূরন করা সম্ভব। তিনি বলেন, “ম্যারাথন দৌড়ের প্রতি ভালোবাসা আমাকে উঠে দাঁড়াতে শিখিয়েছে, আর এভারেস্ট জয় আমাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগাবে’। উদয় কুমার সাহস, শক্তির উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন সকলের কাছে। ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় হলে যে প্রতিবন্ধতাকে কাটিয়ে ওঠা যায় তা প্রমাণ করেছেন উদয় কুমার।