/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/06/cats-2025-09-06-17-27-51.jpg)
অভিনব ভাবনার সঙ্গে অনন্য শিল্পকর্মের মেলবন্ধন
Durgapuja 2025: উল্টোডাঙা সংগ্রামী ক্লাব এবারের দুর্গাপুজোয় পা রাখছে ৬৩তম বর্ষে। এবারের থিম ‘সত্তা’, যেখানে নারী ও প্রকৃতির অনন্য মেলবন্ধন ধরা পড়বে শিল্পকলা ও মণ্ডপসজ্জায়। প্রবাদপ্রতিম শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজের কালজয়ী ভাস্কর্য ‘সুজাতা’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই পুজোর মণ্ডপ সাজাচ্ছেন শিল্পী গৌরাঙ্গ দাস। তাঁর শিল্পকল্পে শিকড় ও নাড়ির টানকে রূপক করে ফুটে উঠবে ‘সত্তা’র দার্শনিক ব্যাখ্যা।
অঙ্কুরিত একটি ছোট্ট চারাগাছ ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে এক বিরাট মহীরুহে। নির্বাক উপস্থিতি নিয়ে সে কখনও ছায়া দেয়, কখনও খাবার, কখনও আবার অসংখ্য প্রাণীর বাসস্থান হয়ে ওঠে। অথচ তার শিকড় মাটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অটুট বন্ধনে। প্রকৃতির এই টান থেকে যেন এক গভীর দার্শনিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়— যেমন শিকড়ের টান গাছ অস্বীকার করতে পারে না, তেমনই নাড়ির টানকে অস্বীকার করতে পারে না কোনও মানুষ।
দুর্গাপুজোর সময় সেই সম্পর্কেরই এক অনন্য রূপক উঠে আসে নারী ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে। মা দুর্গা যেমন একদিকে শক্তির প্রতীক, অন্যদিকে মাতৃত্বের শিকড় আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়— সত্তা মানে কেবল অস্তিত্ব নয়, বরং ভালোবাসা, সৃষ্টির ক্ষমতা এবং চিরন্তন সম্পর্কের অঙ্গীকার। আর সেটাই এবার ফুটে উঠতে চলেছে উল্টোডাঙা সংগ্রামীর ৬৩ তম বর্ষের থিম ভাবনায়।
শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ তাঁর অমর শিল্পকর্ম 'সুজাতা'-তে এই বন্ধনের দার্শনিক রূপ প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে নারী কেবল মানবসত্তা নয়, তিনি প্রকৃতিরই এক বিস্তার, যিনি শিকড়ের মতো আমাদের সঙ্গে মাটির সম্পর্ক বেঁধে রাখেন। আর সেই ধারাবাহিকতাতেই সমসাময়িক শিল্পী গৌরাঙ্গ দাস তাঁর শিল্পকর্মে নারী ও প্রকৃতির অখণ্ড মেলবন্ধনকে উদযাপন করেছেন।
দুর্গাপুজো শুধু আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের উৎসব নয়, এটি সত্তার খোঁজেরও উৎসব। মা দুর্গার আগমনে আমরা নতুন করে উপলব্ধি করি, সৃষ্টির মূলেই রয়েছে নারীর অসীম শক্তি আর প্রকৃতির চিরন্তন দান। মণ্ডপে মণ্ডপে শিল্পীরা নানা ভঙ্গিমায় সেই সত্তাকে চিত্রিত করেন— কখনও রূপকথার ভাষায়, কখনও আধুনিক শিল্পকল্পে।
২০২৫ সালের পুজোর থিম ভাবনায় বার্তা একটাই— নারী ও প্রকৃতি আলাদা নয়, তারা একই সত্তার দুই রূপ। মা দুর্গার পূজার আসর যেন আমাদের শিখিয়ে দেয়, শিকড়কে অস্বীকার করা যায় না, কারণ সেই শিকড়েই লুকিয়ে আছে বেঁচে থাকার আসল শক্তি।
শিল্পী গৌরাঙ্গ দাস জানান, যেমন একটি চারাগাছ অঙ্কুরিত হয়ে মহীরুহে পরিণত হলেও শিকড়কে ভুলতে পারে না, তেমনই একজন মানুষও জীবনের বিস্তার ঘটালেও তাঁর অস্তিত্বের মূল নিহিত থাকে নাড়ির টানে। এই টান কখনও মায়ের, কখনও জন্মভূমির, কখনও আবার নিজের সত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। মণ্ডপসজ্জায় সেই টানই প্রতিফলিত হবে লোহা, টিন, বাঁশ, দড়ি ও তারের মাধ্যমে। এই থিম পুজোর আনুমানিক বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। মণ্ডপসজ্জা থেকে আলোকসজ্জা— সবেতেই দর্শকদের জন্য অপেক্ষা করছে চমক। এবারে উল্টোডাঙা সংগ্রামীর দুর্গাপুজো শুধু উৎসব নয়, নারী ও প্রকৃতির চিরন্তন সত্তার এক অনন্য উদযাপন হয়ে উঠবে।