কলকাতার দুর্গাপুজোকে বিরাট স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। কলকাতার দুর্গাপুজোকে Intangible Cultural Heritage স্বীকৃতি দিয়েছে UNESCO। এই বিরাট সম্মানের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, কলকাতায় আগামী ১ সেপ্টেব্র পালিত হবে হেরিটেজ স্বীকৃতির উদযাপন উৎসব। শহরের রাজপথে বের হবে মহামিছিল। সেই মিছিলে যোগদানের আহ্বানে সাড়া দিল UNESCO। রাজ্য়ে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে এই বিশ্বসংস্থা।
ভারতের UNESCO ডিরেক্টর এরিক ফল্ট চিঠিতে জানিয়েছেন, ১ সেপ্টেম্বর ২ প্রতিনিধি যোগ দেবেন অনুষ্ঠানে। সেই টুইট করে জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। রাজ্যের তরফে আয়োজিত সেই মহামিছিল ও উৎসবে শামিল হওয়ার জন্য UNESCO-কে চিঠি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই অনুরোধেই রাজ্যে আসছেন দুই প্রতিনিধি।
গত বছর বাংলা তথা বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের মুকুটে গর্বের পালক জুড়েছে। UNESCO-র হেরিটেজ উৎসবের সম্মান পেয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো। ইউনেস্কোর নয়া দিল্লির ডিরেক্টর এরিক ফল্ট বলেছেন, স্থানীয় মানুষকে এই পুজো উদযাপনে এই তকমা আরও উৎসাহিত করবে। উৎসাহিত হবেন এর সঙ্গে যুক্ত নানা ধরনের শিল্পী, সংগঠক এবং অবশ্যই দর্শক-পর্যটকরা। এখানে বলে নিতে হবে, ২০১৬ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুজো কার্নিভ্যাল করছেন। রেড রোডে কলকাতা এবং আশপাশের জেলার নামি পুজোর চলমান প্রদর্শনী দেখে অনেকে তারিফ করেছেন। এইটি আন্তর্জাতিক নজরও টেনেছে। মুখ্যমন্ত্রী ইউনেস্কোর তকমায় খুশি হয়ে বলেছেন, ‘এই অর্জনের জন্য আমি গর্বিত।’
তা ছাড়া রাজনৈতিক ভাবেও কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইনট্যানজিবল হেরিজেটের ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি মুখ্যমন্ত্রীর অস্ত্র নিশ্চয়ই। কারণ, দুর্গাপুজোয় বাধা তৈরি করছে রাজ্য সরকার, বিধানসভা ভোটে এই অভিযোগ তুলে লাগাতার প্রচার করে গিয়েছিল বিজেপি। কলকাতার দুর্গাপুজো যে তালিকায় ঢুকেছে ইউনেস্কোর, তার পুরো নাম– ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি। এটি ঠিক কী, তা নিয়ে একটু চর্চা করা যেতে পারে।
ইনট্যানজিবল (Intangible) মানে যা স্পর্শের অতীত। অর্থাৎ যার কোনও স্পর্শযোগ্য চেহারা নেই। যেমন ধরা যাক মন, মেধা, প্রতিভা ইত্যাদি। যার শুধু প্রকাশ দেখা যায়। কোনও উৎসব, কোনও রীতি কিংবা লোককথা, সঙ্গীত কিংবা খাদ্য সংস্কৃতি– এ সবও ঠিক স্পর্শ করে দেখা যায় না, অনুভব উৎযাপন বা প্রকাশ করে তুলতে হয়।
পৃথিবী জোড়া ছড়িয়ে থাকা এমন হাজারো মণিমুক্ত থেকেই ইউনেস্কো তাদের ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজের তালিকা বানায়, বাড়ায়ও। অনন্য সাধারণ ঐহিত্যের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই এই কাজটি তারা করে থাকে। কারণ, তাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী, এ সব হল হিউম্যান ট্রেজার– মানব-ঐশ্বর্য। এ ছাড়াও রয়েছে ট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ-এর তালিকা। মানে কোনও পুরোন মূর্তি কিংবা প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, যা গোদা ভাবে স্পর্শযোগ্য, তাকে ফেলা হয় এর মধ্যে। ইউনেস্কোর তকমা-ধারী এমন ট্যানজিবল হেরিটেজ সারা পৃথিবীতে রয়েছে বিপুল।